মিরপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আ. লীগের সংঘর্ষ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ আগস্ট ২০২৪, ১:০৬:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা মিরপুর ১৪ নম্বরের দিকে চলে যান।
দেখা যায়, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল কলেজের সামনে ধাওয়া-পালটাধাওয়া শুরু হয়। চলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ।
এর আগে সকাল ১০টার পর থেকে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। এরপর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নেতৃত্বে রয়েছেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-১৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ-যুবলীগ মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থান নেন। মোটরসাইকেলে করে এবং মিছিল নিয়ে দলে দলে আসছেন তারা। ট্রাকভর্তি করেও লোকজন আসছেন। কেউ ছবি তুলতে গেলেই আক্রমণাত্মক হয়ে এগিয়ে আসছেন তারা। বন্ধ করতে বলেন মোবাইল ফোন।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
২০১৮ সালে সরকার চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারের জারি করা পরিপত্র চলতি বছরের জুনের শেষে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর পরিপ্রেক্ষিতে জুলাইয়ের শুরুতে মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা প্রথমে পরিপত্র ফিরিয়ে আনতে, অর্থাৎ কোটা না রাখার দাবিতে রাজপথে নেমে কোটা সংস্কারের দাবি জানান।
গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে এই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে সংঘাত হয়। এতে চট্টগ্রামে এক ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও একজন হকার এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবু সাঈদ নামে এক ছাত্র নিহত হন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সেদিন ঢাকার উত্তরা ও বাড্ডায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েকজনের প্রাণহানির পর পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে। সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে হামলা চালানো হয়। এরপর ১৮ জুলাই ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও উত্তরা এলাকায় পরিস্থিতি ভয়বহ রূপ নেয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ১৯ জুলাই দিবাগত রাতে সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং কারফিউ জারি করে সরকার। প্রথম দিকে দিনে দু-তিন ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল করা হলেও পরে ধীরে ধীরে তা বাড়ানো হয়।
১৭ থেকে ২১ জুলাই এই পাঁচদিনের সহিংসতায় দেড়শ মানুষের মৃত্যুর তথ্য দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। আহত হন আরও কয়েকশ মানুষ। সংঘর্ষ থামার পর পুলিশ ব্লক রেইড দিয়ে গ্রেফতার অভিযানে নামে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে গ্রেফতার অভিযান বন্ধ, হত্যার বিচারসহ নানা দাবি জানানো হতে থাকে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মৃত্যু, গ্রেফতারে বদলে গেছে আন্দোলনের ধরন ও কর্মসূচি।
সবশেষ শনিবার (৩ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করে রোববার থেকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
এদিকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ রোববার থেকে রাজপথে অবস্থান নেয়া এবং পুরো আগস্ট জুড়ে রাজপথে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।