দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৪০:২৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: পেনশন নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আন্দোলনের কারণে দেশের ৩৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে।
সোমবার (১ জুলাই) থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতি শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, সরকারের কারও পক্ষ থেকে আলোচনার কোনো প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। তাঁরা আলোচনায় প্রস্তুত এবং দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শুরু করতে চান। কিন্তু দাবির সুরাহা না হলে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় থাকবে না।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছেন সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে। সরকার বলছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ৪০০টির মতো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে প্রত্যয় কর্মসূচির আওতায় পেনশন দেওয়া হবে।
কর্মসূচিটি ১ জুলাই থেকে চালু হয়েছে।
নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন বলছে, নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকদের সুবিধা কমবে। ব্যবস্থাটি বৈষম্যমূলক ও তাঁদের অবমাননাকর। তাঁরা নতুনদের জন্য এই আন্দোলন করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের দাবি তিনটি-প্রত্যয় কর্মসূচির প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে (প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ সচিবেরা যে ধাপে বেতন-ভাতা পান) বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক মো. আখতারুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কার্যক্রমে থাকা ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে। উল্লেখ্য, দেশে এখন কার্যক্রমে থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৫৫টি। সেখানে শিক্ষক রয়েছেন ১৬ হাজারের কিছু বেশি। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৩৪ হাজারের মতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সকাল থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালিত হয়। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আগের দিন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গতকাল সকালে দেখা যায়, ক্লাস, পরীক্ষার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারও বন্ধ রাখা হয়েছে। সর্বাত্মক কর্মবিরতির মধ্যে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘আমরা তিন মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। প্রথমে মানববন্ধন করেছি; এক ঘণ্টার কর্মবিরতি, দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি দিয়েছি। পরে অর্ধদিবস, পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছি। তখন পরীক্ষা চলমান ছিল। কিন্তু আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের ভালোর জন্য আমরা আন্দোলন করছি। কারণ, আমাদের যেটুকু সুবিধা ছিল, সেটুকু বাতিল হলে এই পেশায় আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা আসবে না। মেধাবীরা শিক্ষকতায় না এলে জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
রাবি-রুয়েট: সরকারি চাকরিতে সর্বজনীন পেনশন নীতিমালা ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন চলছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ক্লাস-পরীক্ষা ও দাফতরিক কার্যক্রম বর্জনে গতকাল ক্যাম্পাসে শাটডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করে। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দাবি আদায়ে শিক্ষকরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না দাবি আদায় হচ্ছে, আন্দোলন চলবে। রুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক কামরুজ্জামান বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা রাস্তায় নেমেছেন। যা মোটেও কাম্য ছিল না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে স্নাতক প্রথমবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। তবে বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা চলছে। অনেক বিভাগে চলতি মাসে পরীক্ষার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বাত্মক কর্মসূচির কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বশেমুরকৃবি : প্রত্যয় স্কিম সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা, সভা, সেমিনার বন্ধ থাকবে বলে বশেমুরকৃবি শিক্ষকরা জানান। বশেমুরকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. অহিদুজ্জামান, অনতিবিলম্বে সরকার এ প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে শিক্ষকদের তাদের ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণা কাজে ফিরিয়ে আনার আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পবিপ্রবি : বৈষম্যমূলক পেনশন প্রজ্ঞাপন বাতিল, সুপার গ্রেড ও স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে সারা দেশের মতো পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা লাগাতার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছেন। গতকাল সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে পবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জেহাদ পারভেজ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়ার নেতৃত্বে এ অবস্থান ধর্মঘট শুরু হয়।
হাবিপ্রবি : দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও সর্বাত্মক কর্মসূচি পালন করেছেন। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজার রহমান বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু তবুও কোনো উপায় না পেয়ে আমাদের আন্দোলনে নামতে হচ্ছে। আমাদের দাবি মেনে নিলেই আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাব।
বেরোবি : শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে স্থবিরতা নেমে এসেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নিয়মিত শিক্ষা-কার্যক্রমে। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোয় বিরাজ করছে নীরবতা। শিক্ষকদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির কারণে শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে আসেনি, অনুষ্ঠিত হয়নি কোনো পরীক্ষাও। অধিকাংশ শ্রেণিকক্ষ ও পরীক্ষা কক্ষগুলো তালাবদ্ধ ছিল। বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি বিজন মোহন চাকী বলেন, শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস, পরীক্ষা, সমন্বয় সভা, ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
শাবি-সিকৃবি : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষকরা গতকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে গতকাল শাবিতে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রত্যয় পেনশন স্কিম চরম বৈষম্যমূলক। আগের পেনশন স্কিমের সবগুলো সুবিধা থেকে শিক্ষকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
চবি : প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আটকে গেছে চবির সাত বিভাগের পরীক্ষা। এ ছাড়া ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের উদ্বোধনী ক্লাসও বাতিল করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের এ ক্ষতি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি এম আবু নোমান বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন স্কিম বাতিল না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।