সিলেট: কদমতলী বাস টার্মিনাল পঞ্চম দফা দরপত্র আহ্বান যে কারণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুন ২০২৪, ৯:১৩:৪৯ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: ইজারায় সর্বোচ্চ দরদাতা পাওয়ার পরও সিলেটের কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পঞ্চম দফায় দরপত্র আহ্বান করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)।
অভিযোগ উঠেছে, ‘নিজেদের পছন্দের লোক সর্বোচ্চ দরদাতা নির্বাচিত হননি বলে সিসিক পঞ্চম দফায় দরপত্র আহ্বান করেছে।’ যদিও সিসিক বলছে, কাঙ্ক্ষিত দর মেলেনি, তাই পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
সিসিক ও ইজারায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, সিসিকের মালিকানাধীন বাস, ট্রাক ও সুরমা নদীপথে টোল আদায়ের জন্য গত ৬ জুন (প্রথম দফায়) পৃথক দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু বাস টার্মিনাল ইজারায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় কোনো দরদাতা অংশ নেননি। এরপর গত ২৪ জুন চতুর্থ দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। এই ধাপে তিনজন দরপত্র ক্রয় করেন। তার মধ্যে দুজন দরপত্র দাখিল করেন। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন মো. আবুল কালাম।
কিন্তু এই দরপত্র বহাল রেখে ২৬ জুন আবারও (পঞ্চম দফা) দরপত্র আহ্বান করা হয়।
সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ার পরও পুনঃদরপত্র আহ্বানে ক্ষুব্ধ মো. আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘বাস টার্মিনাল ইজারার দরপত্র গত ২৪ জুন ক্রয় করি। ২৫ জুন দরপত্র দাখিল করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হই। ২৬ জুন ১০ শতাংশ জামানত এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং আয়কর জমা দেওয়ার জন্য সিসিক আমাকে চিঠি দেওয়ার কথা। সেটা না করে তারা ২৬ জুন পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে। সিসিক কর্তৃপক্ষ কার স্বার্থে পুনঃদরপত্র আহ্বান করেছে জানি না। কিন্তু ইজারার জন্য আমি যে টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছিলাম, সেটা তো প্রকাশ হয়ে গেল। এখন অন্য যে কেউ আমার চেয়ে বেশি টাকার লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দরপত্র জমা দিয়ে ইজারা নিয়ে যাবে। সিসিকের এ ধরনের স্বেচ্ছাচারীমূলক কাজ বন্ধ করা উচিত।’
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘সিসিক যে যুক্তিতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করেছে এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। গত বছর ১৬ মাসের জন্য ৯৬ লাখ টাকা দিয়ে তারা বাস টার্মিনাল ইজারা দিয়েছেন। মানে প্রতি মাসে ৬ লাখ টাকা। এবার সর্বোচ্চ দরদাতা ১২ মাসের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকার দরপত্র জমা দিয়েছেন। প্রতি মাসে ৭ লাখ টাকা। এতে করে বছরে ১২ লাখ টাকার ওপরে পড়েছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে সিসিক কর্তৃপক্ষ পুনঃদরপত্র আহ্বান করেছে।’
পরিবহন মালিক সমিতির নেতা আরও বলেন, ‘চার নম্বরে সর্বোচ্চ দরদাতা পেয়েও তারা কার জন্য পুনঃদরপত্র আহ্বান করেছেন সেটা বোধগম্য হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের এমন স্বেচ্ছাচারিতা করা ঠিক না। আমরা এমপি-মন্ত্রীর দারস্থ হই না। কারণ আমরা মনে করি, যারা সর্বোচ্চ দর দেবে, তারাই ইজারা পাবে। কিন্তু দিন শেষে দেখা যায়, যারা লবিং করে তাদের পক্ষেই যায় সিসিক কর্তৃপক্ষ।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর ভবনের একটি সূত্র বলছে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির বিরুদ্ধে এমন স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ নতুন নয়। বিগত দিনগুলোতে সিসিকের দরপত্র তিনি পুনঃদরপত্র আহ্বান করে নিজের পছন্দের লোককে সুবিধা দিয়েছেন।
এদিকে যার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে, তিনি প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। মোবাইল ফোনে ও নগর ভবনের দপ্তরে গিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাস টার্মিনাল ইজারার দরপত্র আহ্বানকারী সিসিকের সচিব মো. আশিক নূর বলেন, ‘এটি আসলে কমিটির সিদ্ধান্ত। আমি মূল্যায়ন কমিটিতে নেই। যেহেতু কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়।’
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার আহমদ চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটি টেন্ডারে চার-পাঁচটি ধাপ আছে। আমরা যে দর পেয়েছি, সেটি আমাদের কাছে মনে হয়েছে আরও বাড়বে। তাই যে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন, তারটি বহাল রেখে আমরা আবার পুনঃদরপত্র আহ্বান করেছি। যদি এর থেকে বেশি দর পাই, সেটাতে আমরা যাব। আর যদি না পাই, তাহলে আগের দরদাতাই বহাল থাকবেন।’