তীব্র দ্বন্দে মোদি-মমতা তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৪৬:১০ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশের সাথে তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাথে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব তীব্রতর হয়ে উঠেছে। তারা একে অপরকে দোষারোপ করছেন এই ইস্যুতে।
পানি বণ্টন নিয়ে যে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে তাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দায়ী করেছে ভারত সরকার। অপরদিকে রাজ্য সরকারকে অন্ধকারে রেখে কেন্দ্র পানি বিক্রি করতে চাইছে মমতার এমন অভিযোগকে ‘মিথ্যা দাবি’ বলে আখ্যায়িত করেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে ফিরে যাওয়ার পরেই সোমবার (২৪ জুন) মোদি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও পাঠান তিনি। মমতার অভিযোগ, রাজ্যের সাথে কোনো আলোচনা না করেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের কাছে পানি বিক্রি করতে চাইছে। কেন্দ্র যদি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে ভারতজুড়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) মমতার এমন দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত সরকার। সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানায়, পুনরায় গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে আগেই জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৪ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছিল ভারত সরকার। চিঠিতে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির নবায়ন করার বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের মনোনীত প্রতিনিধি চাওয়া হয়েছিল।
মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের সচিবালয় নবান্নতে সংবাদ সম্মেলন করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একাধিকবার নরেন্দ্র মোদীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। সোমবার (২৪ জুন) দেয়া চিঠির আগেও ২০১৭ ও ২০২২ সালে একাধিকবার মমতা মোদিকে চিঠি দিয়েছিলেন।
আলাপন আরও বলেন, সেইসব চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছিলেন, ভারত-বাংলাদেশ পানি বণ্টন বহু বছরের একটি বিষয়। যার ওপরে কোটি কোটি মানুষের জল পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে। এছাড়াও কৃষি, সেচ, পানীয় জল ইত্যাদি বিষয়ও নির্ভর করে। কিন্তু কেন্দ্র সরকার যে বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গকে অবগত করেছে বলে দাবি করেছে তা হলো, গত বছরের ২৪ জুলাই জলশক্তি মন্ত্রণালয় ১২ সদস্যের একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করে। তাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে রাখা হয়েছিলো। পরে গত ১৪ জুন সেই কমিটি কেন্দ্রীয় জল কমিশনকে তাদের রিপোর্ট দেয়। যা জলশক্তি মন্ত্রণালয়ে জমা পড়ে। কেন্দ্রের দাবি, রাজ্য সরকারের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এতে মত দিয়েছেন। কিন্তু, এই ব্যাপারে দু-একটি ছোট ইনপুট ছাড়া আর কিছুই চাওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন আলাপন।
আলাপন দাবি করেন, মুখ্যমন্ত্রীর লেখা চিঠিতে উত্তর ও মধ্যবঙ্গ থেকে যে নদীগুলো বাংলাদেশে যায় সেগুলোর পানি বণ্টন সংক্রান্ত গুচ্ছ সমস্যা তুলে ধরা হয়েছে। তা এই রিপোর্টে নেই বলেও জানান তিনি। এছাড়া, জলশক্তি মন্ত্রণালয় এই রিপোর্ট পাওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে কোনও চিঠি বা যোগাযোগ করেনি। কেন্দ্র ও রাজ্যের নীতি নির্ধারক কোনও কমিটিতেই ভারত-বাংলাদেশ পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘোষণা দেন, ২০২৬ সালে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। তা নবায়নের জন্য উভয় দেশের কারিগরি বিশেষজ্ঞরা আলোচনা শুরু করবেন। তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্প সমীক্ষার ব্যাপারে ভারতের একটি কারিগরি দল খুব শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে।
এদিকে, বাংলাদেশের সাথে গঙ্গা এবং তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন মমতা ব্যানার্জি। মমতার দাবি, ফারাক্কা চুক্তির ফলে ১৯৯৬ সাল থেকে কষ্ট ভোগ করছে পশ্চিমবঙ্গ। এই পানি বিক্রির অর্থ হলো, আগামী দিনে গঙ্গায় ভাঙন বাড়বে, মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাবে। তাছাড়া, ফারাক্কায় ড্রেজিং না করার ফলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা কমে গেছে। এতে লাখ লাখ মানুষের জীবিকায় টান পড়েছে।
তিস্তা নদীর পানি নিয়ে মমতার দাবি, তিস্তায় পানি নেই। এখান থেকে পানি দিলে উত্তরবঙ্গের একাংশের মানুষ আগামীতে খাবার পানি পাবে না। বিশাল অংশের মানুষের কৃষি কাজে সমস্যা হবে। সুতরাং রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কোনো ভাবেই পানি দেয়া সম্ভব নয়।
মোদিকে লেখা চিঠিতে মমতা লেখেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক ভারত সফরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঙ্গা ও তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ ও মতামত ছাড়া এ ধরনের একতরফা আলোচনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের চুক্তির প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
চিঠিতে তিনি আরও লেখেন, কেন্দ্রীয় সরকার ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি (১৯৯৬) নবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। কারণ এই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে।
তিস্তা-গঙ্গা পানি বণ্টন চুক্তি ইস্যুতে ভারতের চলমান সংসদ অধিবেশনে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে তিস্তা-গঙ্গা চুক্তি স্বাক্ষরের পদক্ষেপ গ্রহণ করলে গণ আন্দোলনের পাশাপাশি সংসদেও তীব্র প্রতিবাদের প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি।