যুক্তরাজ্যে নির্বাচন: লেবার পার্টি প্রধানের আসনে ভোটযুদ্ধে ওয়াইছ ইসলাম
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২০ জুন ২০২৪, ৮:০৭:৩৩ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: আসন্ন যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান স্যার কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওয়াইছ ইসলাম। সেন্ট্রাল লন্ডনের হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাস আসন থেকে তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এই নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, লেবার পার্টি জয়ের সম্ভাবনা ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির চেয়ে বেশি। লেবার পার্টি বিজয়ী হলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসবেন কিয়ার স্টারমার। এ ছাড়া ২০১৫ সাল থেকে হলবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাস সংসদীয় আসনের এমপি তিনি।
সম্প্রতি লন্ডনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ওয়াইছ ইসলাম তার নির্বাচনে দাঁড়ানো প্রসঙ্গে যা বলেছেন তা নিম্নরূপ—
‘‘আপানারা জানেন আগামী ৪ জুলাই বৃটেনের জাতীয় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে আমি ওয়াইছ ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লন্ডনের ক্যামডেনের হলবর্ণ ও সেন্ট প্যাংকারস আসন থেকে নির্বাচন করার ঘোষনা দিচ্ছি। নির্বাচনে আমি কমিউনিটির সকলের বিশেষ করে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায়। লন্ডন গিলহল ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতির উপর ব্যাচেলর ডিগ্রী করার পাশাপাশি লন্ডনের বিখ্যাত কুইনমেরী ইউনিভার্সিটি থেকে আমি পাবলিক পলিসির উপর মার্স্টাস সম্পন্ন করেছি। লেখাপড়া শেষে নেটওয়েস্ট ব্যাংক হেড অফিসে ই-কমার্স এন্ড মোবাইল ফোন ব্যাংকার হিসেবে আমি ক্যারিয়ার শুরু করি। পরবর্তীতে আমি হোম অফিসের হাইয়ার এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে ল-এনফোর্সমেন্ট এডভাইজার হয়ে কাজ করি।
২০০৬ সালে আমি টাওয়ার হ্যামলেটস বারার হোয়াইটচাপেলে ওয়ার্ড থেকে রেসপক্ট পার্টির হয়ে
কাউন্সিলার নির্বাচিত হই। ২০০৭ সালে আমি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পেনশন এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মনোনিত হয়ে ৭শ মিলিয়ন পাউন্ডের বিরাট বাজেটের ফান্ড তদারকি করি। ২০০৮ সালে আমি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে প্রথম বাঙালি অলিম্পিক এম্বেসেডর মনোনীত হই। ২০১০ সাল পর্যন্ত আমি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার কাউন্সিলার হিসেবে প্রতিটি নাগরিক সমস্যায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করি। তাছাড়া কমিউনিটির বিভিন্ন দাবী দাওয়া আদায়ে আমি সর্বদা জনগনের পক্ষে কাজ করে আসছি।’’
তিনি আরও বলেন— ‘‘সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, একজন হিউম্যান রাইটস একটিভিস্ট হিসাবে আমি দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে আসছি। ইরাক যুদ্ধের সময় আমার ভূমিকা ছিল অগ্রণী। ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে আমার অবস্থান কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচিত হয় পরবর্তী সময়ে ফিলিস্তিন বিষয় আমার সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা ছিল, নির্যাতিত ফিলিস্তিনের পক্ষে সর্বদা আমার কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে মানবতার পক্ষে।
শুধু ফিলিস্তিন নয় আফগানিস্তান যুদ্ধের সময় তখনোও আমি প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভে
অংশ গ্রহণ করেছি এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছি। মায়ানমারের আরাকানে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদ এবং চায়নায় মুসলমান হত্যার প্রতিবাদে আমি সোচ্চার ছিলাম। যেখানে মুসলমানরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন সেই সময়ে আমার ভূমিকা ছিল সর্বদা ন্যায় বিচারের পক্ষে। আমি মনে করি আমাদের প্রত্যেকেরই মানবতার পক্ষে যুদ্ধ বন্ধের দাবীতে কাজ করা উচিত।
তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা, গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা যখন শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে তখনই আমি যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সমবেত হয়ে ভূমিকা পালন করি। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সিজ ফায়ারের পক্ষে মত না দিয়ে ইসরাইলিদের হামলাকে লেবার লিডার স্যার কিয়ার স্টমারের সর্মথনকে সবার মতো আমিও মর্মাহত হয়েছি। লেবার লিডার স্যার কিয়ার স্টমা হলবর্ণ ও সেন্ট প্যাংকারস আসন থেকে নির্বাচিত এই এলাকার বেশিরভাগই ভোটার মুসলিম । এখানকার বাংলাদেশী এবং সোমালিয়ানরা দাবী করে আসছিলেন সিজফায়ারের পক্ষে তাদের এমপি সংসদে ভূমিকা পালন করুক। কিন্তু তিনি ভোটারদের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটাতে অক্ষম হয়েছেন বিধায় ভোটারদের সমর্থন হারিয়েছেন। বিগত অক্টোবর থেকে গাঁজা হামলার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার নিরিহ মানুষ প্রান হারিয়েছেন। এর বেশির ভাগই নিরঅপরাধ মহিলা ও শিশু। ৮০ হাজার মানুষ ইনজুরীর শিকার হয়েছেন এবং প্রায় দুই লাখ মানুষ বাস্তুহারা হয়েছেন। এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে পার্লামেন্টে মোশন আসা সত্ত্বেও লেবার লিডার এর পক্ষে ভোট না দিয়ে তার এমপিদের ভোট দানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধে একজন হিউম্যান রাইট এক্টিভিস্ট হিসেবে আমি ক্যামডেনে গাজা সিজফায়ার এসোসিয়েশন CGCA গঠন করি। সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি না করে বিরোধী দলীয় প্রধান হিসেবে স্যার কিয়ার স্টমারের ভূমিকা ছিল ইজরাইলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে যা মানবতা এবং হিউম্যান রাইটসের বিরোধী ।তাছাড়া তিনি এলবিসি রেডিওতে গিয়ে বলেছিলেন ইজরাইলের রাইট রয়েছে পানি বিদুত খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া । যা মানবতার বিপক্ষে বলে আমি মনে করি।
লেবার লিডারের এমন কর্মকান্ডে আমরা ক্যামডেনে গাজা সিজফায়ার এসোসিয়েশন পক্ষ থেকে অনেক প্রতিবাদ সমাবেশ করে এর তীব্র প্রতিবাদ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি বরং তিনি এবং তার দল ইজরাইলকে নির্লজ্জভাবে সাপোর্ট করে আসছেন। আপনারা জানেন এই এলাকা থেকে বাঙালি এবং সোমালিয়ান মুসলিমদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বারবার আমরা তাকে নির্বাচিত করেছি। তবে তিনি সেখানকার ভোটারদের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দেননি। বরং তাদের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। তাই এই আসনে আমি নিবাচন করার জন্য ঘোষণা দিচ্ছি।’’
ওয়াইছ ইসলাম বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচনে আমাদের কমিউনিটি সকলে যদি এক হয়ে আমার পক্ষে কাজ করেন এবং ভোট প্রদান করেন তাহলে আমার পাশ করার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এই আসনে প্রায় ৭৬ হাজার ভোট রয়েছে এই ৭৬ হাজারের মধ্যে প্রায় ২0 হাজার ভোট রয়েছে মুসলিমদের। তাই আমরা যদি আমাদের ভোট মানবতার পক্ষে গাজার পক্ষে যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে প্রদান করতে পারি তাহলে বিজয় সম্ভব।
তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিক ভাইয়েরা, আমার এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয় কিংবা লেবারের বিরুদ্ধে নয় আমার এই সংগ্রাম মানবতার পক্ষে যুদ্ধবন্ধের দাবিতে এবং লেবার লিডার যে অবস্থান নিয়েছিলেন তার এই প্রতিবাদস্বরূপ। আপনারা জানেন লোকাল এমপি লেবার দলের লিডার হওয়ায় এলাকায় সময় দিতে পারছেন না। এলাকায় নানা সমস্যায় এখানকার বাসিন্দারা। বিশেষ করে হাউজিং সমস্যা
মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। নতুন হাউজ বিল্ড না হওয়ায় ক্রমশ বাসিন্দারা ওভারক্রাউডের দিকে ধাবিত হচ্ছেন। আমার নির্বাচনী অঙ্গীকার থাকবে কাউন্সিল হাউজ নির্মাণ, হেলথ সার্ভিসে কাজ করা, ক্রাইমকে কন্ট্রোলের মধ্যে আনা, বেটার পুলিসিং সার্ভিস আরো জোরদার, কষ্ট অব লিভিং, আনএমপ্লয়িড এর মধ্যে কর্মসংস্থান, ট্রেনিং এবং গ্রীন এলাকাসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আমার অগ্রাধিকারে থাকবে।
তিনি বলেন, প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আসন্ন নির্বাচনে আমাকে ভোট, পরামর্শ এবং সহযোগিতা করে নির্বাচিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করি আমি নির্বাচিত হলে এলাকার জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা বিশেষ করে নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষে কথা বলতে পারব।