গ্যাস সংকট সারা দেশে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৪, ৮:৪৮:৩০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সারা দেশে গ্যাসের তীব্র সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহক ও শিল্প-কারখানার মালিকরা। গ্যাসের অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিএনজি স্টেশনগুলোতে দাঁড়িয়ে থেকেও গ্যাস পাচ্ছেন না গাড়িচালকরা।
এরই মধ্যে গ্যাস স্বল্পতায় অনেক সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। আবার ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। বাসাবাড়িতে গ্যাস না পেয়ে গৃহিণীরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই খাবার রেস্টুরেন্টে খাচ্ছেন। এমন অবস্থায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে এলপিজির ব্যবহার শুরু করেছেন।
প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন কমে যাওয়ায় আগে থেকেই গ্যাস স্বল্পতা ছিল। গত ২৯ মে কক্সবাজারের এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গ্যাস সংকট আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
আর এর প্রভাব পড়েছে বাড়িঘর, কারখানা ও যানবাহন খাতে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় মানুষজন রান্না করতে হিমশিম খাচ্ছেন। গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। রাজধানীর প্রায় সব সিএনজি ফিলিং স্টেশনে দেখা যাচ্ছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দেশের অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস সরবরাহ না করায় গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে।
গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় কক্সবাজারের মহেশখালীতে এলএনজি রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর গত ৫ জুন এক বিবৃতিতে সামিট কর্তৃপক্ষ জানায়, সামিট গ্রুপ পরিচালিত ইউনিটটি মেরামতের জন্য বিদেশের একটি ড্রাই ডকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সামিট আশা করছে তিন সপ্তাহের মধ্যে এলএনজি টার্মিনালটি চালু করা সম্ভব হবে। দৈনিক ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাস প্রক্রিয়াজাতকরণের সক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট থেকে দেশে এলএনজি আসে। এর একটি এখন বন্ধ থাকায় সরবরাহ কমে দাঁড়িয়েছে ৬০০ এমএমসিএফডিতে। এর আগেও সিঙ্গাপুরে আড়াই মাস রক্ষণাবেক্ষণের পর এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে সামিটের এফএসআরইউ পুনরায় কার্যক্রম শুরু করে। সে সময়ও দেশে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি একই রকম ছিল এবং জনগণকে গ্যাস সংকটে ভুগতে হয়েছিল।
পেট্রোবাংলা বর্তমানে ৩ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে প্রায় ২ হাজার ৬০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ করতে পারছে। অন্যদিকে দেশের স্থানীয় গ্যাস উৎপাদনও দিন দিন কমে আসছে।
মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ার এক গৃহিণী জুলেখা আক্তার বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে তীব্র গ্যাস সংকটে ঘরের রান্নার কাজ একেবারেই করতে পারছি না। সন্তানদের টিফিন এবং স্বামীর অফিসের লাঞ্চ রেস্টুরেন্ট থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।’ তিনি জানান, উপায় না দেখে এরই মধ্যে তিনি এলপি সিলিন্ডার কিনেছেন। জুলেখার দেখাদেখি তার প্রতিবেশীদের অনেকেই এখন এলপিজি কিনতে উৎসাহী।
গত এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি স্টেশনেই প্রাইভেট গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার দীর্ঘ লাইন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালকরা গ্যাস নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। গতকাল প্রগতি সরণির পিনাকাল সিএনজি স্টেশনের সামনে একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির গাড়িচালক সোবহান মিয়া জানান, দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস নিতে এসে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। তিন ঘণ্টা আগে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। সিএনজি স্টেশনগুলো থেকে বলা হচ্ছে গ্যাসের চাপ একেবারেই কম।
বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে (পিএসআই) ১৫ পাউন্ড থাকার কথা থাকলেও এখন দিনের বেশিরভাগ সময় তা দুই থেকে তিন পিএসআই থাকে।
এদিকে এরই মধ্যে গ্যাসের দাবিতে দেশের ঢাকার আশপাশে মানুষজন বিক্ষোভ করেছেন। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মাওনা, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। গ্যাস না থাকায় শত শত কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেক কারখানা আবার গ্যাসের অভাবে বন্ধ আছে। কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।