ভারি বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বেশিভাগ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি, বন্যা আতংক
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৪, ২:৩১:২৪ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: এতো বৃষ্টি—ভারি বৃষ্টি—আরেক নির্ঘুম রাত কাটলো সিলেট নগরবাসীর। রোববার মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরের বেশিভাগ এলাকা। আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত থাকা এ বৃষ্টির নগরের শতাধিক এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে কয়েকটি প্রধান সড়ক। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ ঠেকাতে রাত জেগে পাহারা দেন নগরবাসী। তবু শেষ রক্ষা হয়নি।
গত বুধবার এক রাতের ঢলে তলিয়ে গিয়েছিল সিলেটের পাঁচ উপজেলা। এবার এই ভয়াবহতার সাক্ষী হলো সিলেট নগরবাসী। অথচ গত দুদিন বৃষ্টি না হওয়ায় সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির অনেকটা উন্নতি হয়েছিলো। ফলে পানি দ্রুত নেমে যাওয়ার আসায় বুক বেঁধেছিল সিলেটবাসী। রোববার রাতের বৃষ্টিতে সে আশার গুড়েবালি।
রোববার বিকেলেই একপশলা বৃষ্টি হয় সিলেটে। তবে রাত ১২ টা থেকে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। যা অব্যাহত থাকে সোমবার সকাল পর্যন্ত।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো সজিব জানান, রোববার সকাল ৬ টা থেকে সোমবার সকাল ৬ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২২৬.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর সকাল ৬ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।
আগে থেকেই নগরের কয়েকটি এলাকায় বন্যার পানি ছিল। পানিতে টইটুম্বুর ছিলো সুরমা নদীও। বৃষ্টিতে রোববার মধ্যরাত থেকেই নদী উপচে নগরের নতুন নতুন এলাকা ডুবতে শুরু করে। বাসাবাড়িতে ঢুকে যায় পানি।
নগরের উপশহর এলাকার সড়কে আগে থেকেই পানি ছিল। রোববার রাতে এই এলাকার প্রায় সব বাসার নিচ তলায় পানি ঢুকে যায়।
উপশহরের ডি ব্লকের বাসিন্দা শাহাজান আহমদ সোমবার সকালে বলেন, ঘরের ভেতরে হাঁটুপানি, সড়কে কোমর সমান পানি। না ঘরে থাকতে পারছি, না বাইরে বের হতে পারছি। বছর বছর এই দুর্ভোগ আর ভালো লাগছে না।
এই এলাকার একটি বাসার চারতলায় থাকেন সাংবাদিক সংগ্রাম সিংহ। তিনি বলেন, ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি একটা দ্বীপে! চারদিকে শুধু পানি আর পানি। তার মধ্যে মনে হচ্ছে ভাসছি।
সোমবার সকালে নগরের উপশহর, তেরররন, যতরপুর, মেন্দিবাগ, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া মজুমদার পাড়া লালদীঘির পাড়, সোবহানী ঘাট, মির্জাজাঙ্গাল, কদমতলী, কালিঘাট, শেখঘাটসহ অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, আতংক উৎকণ্ঠায় আরেকটি নির্ঘুম রাত কাটলো রোববার। রাত একটায় একবার ঘরে পানি ঢুকে। ঘরের সবাই মিলে চারপাশে বাঁধ পানি সেচে বের করি। ভোর ৪ টার দিকে আবার ঘরে পানি ঢুকে পড়ে। ঘরের সব আসবাবপত্র নষ্ট হচ্ছে। সকালেও পানি বাড়ছে।
নগরের জামতলা এলাকার বাসিন্দা, সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি রজতকান্তি গুপ্ত বলেন, রোববার রাতে ঘরে আবারো পানি ঢুকেছে। এর আগে ২০২২ সালের বন্যার সময়ও পানি ঢুকেছিল। অথচ তখন বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে বারবার এই দুর্ভোগ পোহাতে হত না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, আগে থেকে নগরের নয়টি ওয়ার্ডের কিছু এলাকা প্লাবিত ছিলো। রোববার রাতের বৃষ্টিতে নগরের প্রায় সবগুলো ওয়ার্ডই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ঢলে আগে থেকেই সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপরে রয়েছে। তাই বৃষ্টির পানি নদী দিয়ে নামতে পারেনি। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সোমবার সকালে সিলেট সিটি করপোরেশনে জরুরী বৈঠক চলছে বলে জানান তিনি।
বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়েছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিচতলায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন কলেজের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের রোগীরা। তবে সেবা অব্যাহত আছে জানিয়ে এই হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা সৌমিত্র চক্রবর্তী বলেন, হাসপাতালের জেনারেটর রুমে পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সেবা ব্যাহত হতে পারে।
পানি বাড়ায় সিলেট নগরের বেশিরভাগ স্কুল কলেজের সোমবারের ক্লাস ও পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া নগরের বেশিরভাগ এলাকায় রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।