যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থদের ফেরত চুক্তি প্রসঙ্গে হাইকমিশনার যা বললেন(ভিডিও)
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৪, ১০:৪০:২৫ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে ব্যর্থদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো বিষয়ে দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের খবরে যুক্তরাজ্যে ও বাংলাদেশে মানুষের মাঝে বেশ আলোচনা ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অবৈধ অভিবাসীদের প্রত্যাবাসনের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিওর (আদর্শ কর্ম প্রক্রিয়া) বা এসওপি ছিল।
এর আওতায়ই ইউরোপের কোনো দেশে অনুমোদনহীন কোনো বাংলাদেশি থাকলে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হতো।
২০২০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে ব্রিটেন আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যায়। ফলে, দেশটির বেলায় আর এসওপি প্রযোজ্য ছিল না।
যে কারণে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন করে আলাপ আলোচনা শুরু করতে হয় বলে জানান লন্ডনে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।
“দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে অনেক বিষয় আমরা কমিউনিকেট করতে পারছিলাম না, আলাপ আলোচনাও হচ্ছিল না। সেজন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়।”
জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো লন্ডনে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারকটি সই হয়।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর জানায়, এর ফলে অবৈধ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে একটি বাধা দূর হবে।
এতোদিন কাউকে ফেরত পাঠাতে হলে বাধ্যতামূলকভাবে তার একটি সাক্ষাৎকার নিতে হতো নিজ দেশের দূতাবাসকে।
এখন থেকে যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ থাকলে এই “ম্যান্ডাটরি ইন্টারভিউ” এর প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশের হাই কমিশনার বলেন, “এখন যেহেতু এমআরপি আছে বা ই-পাসপোর্ট আছে এখন ইন্টারভিউয়ের প্রয়োজন পড়ে না।”
এর আগে আলবেনিয়া সরকারের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি করে ব্রিটেন।
সেই চুক্তির পর দেশটি থেকে ছোট ছোট নৌকায় চড়ে যুক্তরাজ্যে অনুপ্রবেশ ৯০ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র দপ্তর।
যুক্তরাজ্যে অবৈধ বাংলাদেশির সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম বলে জানান হাইকমিশনার তাসনিম।
তিনি বলেন, “২০১২-১৩ সালের দিকে প্রতি মাসে এক থেকে দেড়শো জনকে ফেরত পাঠানো হতো। কিন্তু, এখন প্রতি মাসে মাত্র ছয়-সাত জনের ইন্টারভিউ নিই।”
“সেখান থেকে হয়তো তিনজনকে পাঠানো হয়,” যোগ করেন তিনি।
সুনির্দিষ্ট অবস্থান না বলতে পারলেও বাংলাদেশের হাই কমিশনারের ধারণা, যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান ২০ -এরও পরে হবে।
মোট অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যার ভিত্তিতে জানা না গেলেও রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীর দিকে বাংলাদেশ অষ্টম অবস্থানে আছে, জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের তথ্যে দেখা যায় ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে ১৫ হাজার ৯৫০ বাংলাদেশি রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন।
তবে, দ্য টেলিগ্রাফ বলেছে এসব আবেদনের ৯৫ শতাংশই খারিজ হয়ে গেছে প্রাথমিক বাছাইয়ে।
উল্লেখ্য, লন্ডনের হাইকমিশন থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে বৃহস্পতিবার লন্ডনে ব্রিটিশ হোম অফিসে স্বরাষ্ট্র বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এ বৈঠকে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধ বিষয়ক ব্রিটিশ মন্ত্রী জেমস টমলিনসন-মাইনরস কেসি এবং লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সূচনা করেন। তারা দুই দেশের মধ্যে এসওপি স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করেন।
২০১৭ সালে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ-ইইউ এসওপি এর অনুরূপ বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য এসওপি অন রিটার্নস স্বাক্ষরিত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে অধিককাল অবস্থানের পর যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশীদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার আগে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো।
বাংলাদেশের হাইকমশিনার তাসনিম তার বিবৃতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং যুক্তরাজ্যের রক্ষণশীল প্রধানমন্ত্রী স্যার এডওয়ার্ড হিথের মধ্যে ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের উপর ভিত্তিতে দুটি কমনওয়েলথ দেশের মধ্যে গড়ে ওঠা মূল্যবান কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হওয়ার কথা স্মরণ করেন।
অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে হাইকমিশনার বলেন, লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের সহযোগিতায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অনেক অনথিভুক্ত বাংলাদেশীদের প্রত্যাবাসনে কাজ করছে।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে নথিবিহীন বাংলাদেশীর সংখ্যা এখন খুবই কম এবং বাংলাদেশ হোম অফিস হাইকমিশনের সহায়তায় ব্রিটিশ হোম অফিসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
হাইকমিশনার বলেন, “সুসংবাদ হলো যুক্তরাজ্যে অনথিভুক্ত নাগরিকদের সংখ্যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যেও নেই। তবুও ব্রেক্সিট-পরবর্তী যুক্তরাজ্যের সাথে আমাদের এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা প্রয়োজন ছিল।”
এসওপি স্বাক্ষর করা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ এ বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে দক্ষ ও অধিক প্রতিভাবানদের অভিবাসন সহ সুশৃঙ্খল অভিবাসনের সুযোগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে পারস্পরিক আইনি সহায়তা প্রদান, প্রত্যর্পণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা প্রতিরোধ, এবং সেইসাথে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি
সক্ষমতা বৃদ্ধি করার বিষয়ে আলোচনার পথ উন্মুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খায়রুল কবির মেনন এবং যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্টের মহাপরিচালক বাস জাভিদ নিজ নিজ পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র প্রতিনিধিরা ছাড়াও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন।