কৃষি ও নিত্যপণ্যে শুল্ক না বাড়াতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২৪, ৯:৩৬:২৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্নআয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি এবং নিত্যপণ্যে শুল্ক না বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ওদিকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের স্বার্থে শর্তসাপেক্ষে করপোরেট কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এতে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে ঢালাওভাবে সব খাতে নয়, আগের মতো উৎপাদনশীল খাতের সঙ্গে জড়িত পুঁজিবাজারে তালিকাবহির্ভূত শিল্পের কর কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি সুবিধা বাতিলের পক্ষে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে আগামী অর্থবছরে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবনে বাজেটবিষয়ক সভায় বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস অনুবিভাগের বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। এতে অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআরের তিন অনুবিভাগের নীতি শাখার সদস্য, প্রথম সচিব, দ্বিতীয় সচিব ও বাজেট সমন্বয়কারী দল উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধিসহ করদাতাদের হয়রানি কমাতে আগামী বাজেটে ব্যক্তি ও কোম্পানি সব শ্রেণির করদাতাকে স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে রিটার্ন অ্যাসেসমেন্ট করা হয় না। বর্তমানে ব্যক্তি করদাতাদের স্বনির্ধারণী পদ্ধতিতে রিটার্ন জমা দিতে হয়। অন্যদিকে কোম্পানি করদাতারা স্বনির্ধারণী ও সাধারণ-দুই নিয়মেই রিটার্ন জমা দিতে পারেন। সাধারণ নিয়মে জমা দেওয়া রিটার্ন অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্ত কর আদায় করা হয়। আর স্বনির্ধারণী পদ্ধতির রিটার্ন অডিট করা হয়। এ জন্য বাজেটে আয়কর আইনে বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে এনবিআর।
জানা গেছে, অভিন্ন হারের মতো ভ্যাট অব্যাহতিও ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের পরিকল্পনা এনবিআরের। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার ভ্যাটের আদর্শ হার ১৫ শতাংশ কার্যকর করার দিকে এগোচ্ছে। তবে আগামী অর্থবছরেই সবক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন হবে না। এর বাস্তবায়ন ধাপে ধাপে হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে বিভিন্ন পণ্য ও সেবাভেদে ৩, ৫, সাড়ে ৭, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সব ধরনের পণ্য ও সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিয়েছিল এনবিআর। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব পণ্য ও সেবার বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ না করে কিছু পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের নির্দেশনা দিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ফোনের কলরেটের ওপর সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাবে ইতিবাচক সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর ফলে মোবাইলে কথা বলতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে ভোক্তাদের। বর্তমানে একজন ভোক্তা মোবাইলে ১০০ টাকা রিচার্জ করলে ৮৩ টাকার কথা বলতে পারেন। বাকি ১৭ টাকা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক হিসাবে কেটে নেয় মোবাইল অপারেটরগুলো। মোবাইল সেবার ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে ভোক্তারা ৭৮ টাকার কথা বলতে পারবেন।
সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করতে পারেন সংসদ সদস্যরা। তবে এবারের বাজেটে এই সুবিধা বাতিলের পক্ষে সায় দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের বাজেটে গাড়ি আমদানি করতে হলে সংসদ সদস্যদের ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্কের পাশাপাশি ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। এ ছাড়া হাইটেক পার্কের জন্য আমদানি করা গাড়িও এতদিন শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে এসেছে। তবে এবার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শুল্ক আরোপের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া বেজা-বেপজার শুল্কমুক্ত সুবিধা কিছুটা হলেও তুলে নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ তার।
মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ছে না। সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ রয়েছে। বছরে সাড়ে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় থাকলে ২৫ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। এটিকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি কমানো, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগে মূলধনী আয়ের ওপর করছাড় বাতিল করা এবং এখনই শতভাগ ক্যাশলেস লেনদেনের প্রস্তাবে ধীরগতি অবলম্বনের নির্দেশেনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।