প্রবাসীদের পাওয়ার অব এটর্নি নিয়ে ভোগান্তি, প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ব্যারিস্টার নাজির
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০২৪, ৯:১১:৫৪ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: পাওয়ার অব এটর্নি সম্পাদনে অভিনব নিয়ম প্রবাসীদের চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশু প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, দূর করতে পারেন প্রবাসীদের চরম ভোগান্তি। অনেক কিছুতে যুগান্তকারী ও সাহসী সিদ্ধান্ত তিনি নিচ্ছেন। দু’বছর আগে চালু হওয়া বৈষম্যমূলক নিয়মের আগে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করলে প্রধানমন্ত্রী কোটি প্রবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা পাবেন।
গতকাল ৭ মে দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসী আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার নাজির আহমদ।
তিনি বলেন, ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্ট থাকার বাধ্যবাধকতা ও সশরীরে উপস্থিত হওয়ার যে নিয়ম করা হয়েছে তাতে বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষত বয়োজ্যেষ্ঠ ও শারীরিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার। এ নিয়ে প্রবাসী বাঙালিদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।’ তিনি জানান, ‘সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর, বণ্টন, মামলা দায়ের ও মামলা পরিচালনাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রয়োজন পড়ে। এটা শত শত বছর ধরে চলে আসা স্বীকৃত আইনি পন্থা। আগে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ইস্যুর ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিধান ছিল না। গত কয়েক বছর ধরে এটি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক সিনিয়র বিচারপতির সাথে কথা হলো পাওয়ার অব এটর্নী সম্পাদনে ভেলিড বাংলাদেশী পাসপোর্ট থাকার বাধ্যতামূলক অভিনব নিয়ম নিয়ে। তিনিও বললেন পাওয়ার অব এটর্নীর সাথে পাসপোর্ট বা নাগরিকত্বের কোনো সম্পর্ক নেই। বড়জোর যথাযথ আইডি দেখা যেতে পারে। বাংলাদেশে সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস করছেন এমন একজন আইনজীবীর সাথে কথা বললাম। তিনি জানালেন চট্রগ্রাম পোর্টে অহরহ বিদেশী পাসপোর্ট দিয়ে পাওয়ার অব এটর্নী সম্পাদন করা হচ্ছে। তাহলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্যমূলক ও বিমাতাশুলভ নিয়ম করার কারণ কি?
একজন বয়স্ক ব্যক্তির বুক ফাটা কান্নার ঘটনা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার নাজির আহমদ বলেন, একজন প্রবীণ বয়স্ক ব্যক্তি ফোন করছিলেন তাঁর একটি পাওয়ার এব এটর্নীর ব্যাপারে। বললেন মাস খানেক আগে তাঁর স্ত্রী ইন্তেকাল করেছেন। তিনিও সপ্তাহে ৩ বার কিডনির জন্য ডায়োলোসিস নেন। তিনি নিজে শারীরিক প্রতিবন্ধি এবং বাংলাদেশ সফরে অক্ষম। তাঁর সম্পত্তির ব্যাপারে পাওয়ার অব এটর্নি দিতে পারছেন না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে পাওয়ার অব এটর্নিসহ প্রবাসীদের বিভিন্ন অধিকারের ব্যাপারে কথা বলি বলে আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন “ব্যারিস্টার সাব, আমি আর বেশি দিন বাঁচব না। দেশে যেতেও পারছি না, এখান থেকে পাওয়ার অব এটর্নিও দিতে পারব না। এমন দেশ কি চেয়েছিলাম? এভাবে জানলে দেশে কোন টাকাই পাঠাতাম না। দেশে কোন সম্পদই করতাম না।” তাঁর কথায় ঠায় বসে রইলাম। কোন জবাব দিতে পারিনি প্রবীণ বয়স্ক এই মুরুব্বিকে।
ব্যারিস্টার নাজির আক্ষেপ করে বলেন, প্রবাসীরা পাওয়ার অব এটর্নীসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত। এগুলো দেখার বা সুরাহা করার যেন কেউ নেই। প্রবাসে যারা রাজনীতি করেন তারা অনেকটা মুখে লাগাম দিয়ে বসে আছেন। এটা সব সরকারের সময়ই ঘটে। উপযুক্ত চ্যানেলে প্রবাসীদের যৌক্তিক দাবী-দাওয়া তুলে ধরার পরিবর্তে বাংলাদেশ থেকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কেউ এলে তাদেরকে ফুলের তোড়া দিয়ে ফটো তোলাকেই তারা শ্রেয় মনে করছেন। দল ক্ষমতায় থাকায় সংশ্লিষ্টদের হয়তো অন্যদের চেয়ে সুযোগ সুবিধা ও অগ্রাধিকার পাচ্ছেন। এটা সাময়িক। সরকার পরিবর্তন হলে তারাও পড়বেন বিপদে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বিলেত প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। তারা করেছেন দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যখন ট্রেজারিতে কোনো অর্থই ছিল না তখন বিলেত প্রবাসীরা অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ডের উপর যোগান দিয়েছেন। গত অর্ধ শতাব্দী ধরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে অর্থনীতির চাকা সচল রেখে ইনভেস্ট করেছেন, জায়াগা-জমি কিনেছেন, সম্পত্তি তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। পাওয়ার অব এটর্নি সম্পাদনে অভিনব নিয়ম তাদেরকে আজ চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ আশু প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন, দূর করতে পারেন প্রবাসীদের চরম ভোগান্তি। অনেক কিছুতে যুগান্তকারী ও সাহসী সিদ্ধান্ত আপনি নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট আমলাদেরকে আপনার একটি ধমকই যথেষ্ট দু’বছর আগে চালু হওয়া বৈষম্যমূলক নিয়মের আগে ফিরে যাওয়া। আর এতে পাবেন আপনি কোটি প্রবাসীর অকৃত্রিম ভালবাসা।
সিলেট প্রেস ক্লাবের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকসহ সিলেটের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সিলেটের প্রতিনিধিরা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যের পর ব্যারিস্টার নাজির আহমদ সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।