কোনো নাম্বার থেকে আসা কল রিসিভ করলেই ফোনের সব তথ্য নিয়ে যেতে পারবে না
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ মে ২০২৪, ৮:০৩:০৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। যেখানে এক ভুক্তভোগীর বরাতে বলা হয়, শুরুতে +৯২ অথবা +৯৯ যুক্ত কোনো নম্বর থেকে আসা কল রিসিভ বা ওই নম্বরে কল ব্যাক করে কথা বললেই মোবাইলের সব তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। শুধু তাই নয়, কোনো ধরনের পিন শেয়ার না করলেও বিকাশ, নগদ, উপায়ের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থও হাতিয়ে নিয়ে যাবে হ্যাকাররা।
গত ৮ এপ্রিল ফেসবুকে পোস্ট করা ভিডিওটি এরই মধ্যে ভাইরাল। ভিডিওর প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই তাদের আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন।
তবে ভিডিওর তথ্য সঠিক নয় বলে জানান সময় টেলিভিশনের প্রযুক্তি এবং সম্প্রচার প্রধান এবং প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম। এটাকে তিনি বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেন।
সেলিম বলেন, কোনো নম্বর থেকে কল এলে তা রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন হ্যাক হয়ে যাওয়া কিংবা ফোনের সব তথ্য বেহাত হয়ে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এরকম প্রযুক্তি এখনো নেই।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘কোনো নম্বর থেকে এসএমএস এলে তার রিপ্লাই দিলে কিংবা কোনো লিংক পাঠালে তাতে ক্লিক করলে কিছু তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।’
এমন ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
ভাইরা ভিডিওটির বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের কম্পিউটার ইন্সিডেন্ট রেসপন্স টিমের (সার্ট) প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল আলম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এ ধরনের ভিডিও বিভ্রান্তি ছড়ায়। কোনো কিছু যাচাই না করে এভাবে ভিডিও করা ঠিক হয়নি।
সাইবার৭১-এর পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাবের সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘শুধু ফোন কলের মাধ্যমে মোবাইলের যাবতীয় তথ্য হ্যাক করার কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়েছে বলে জানা নেই। এমনটা হলে হ্যাকার শুধু দুটি কোড নম্বর থেকে কেন ফোন করবে? সে তো হাজারটা কোড বানাতে পারত।’
ভিডিওর বিষয়টি পুলিশের আইসিটি বিভাগ যাচাই বাছাই করে দেখছে বলে পুলিশ সদর দফতরের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করা হয়। এভাবে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার এভিজি (AVG) ওয়েবসাইটে ফোন হ্যাকিং নিয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছে, সাধারণত শুধু ফোনকলের মাধ্যমে ফোন হ্যাক করা সম্ভব নয়। কল রিসিভার যদি কোনো তথ্য প্রদান না করেন তাহলে ফোন হ্যাক করে নেওয়া সম্ভব নয়।
অপরদিকে সাইবার সিকিউরিটি সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যাভাস্টের ওয়েবসাইটে ফোন হ্যাকিং সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এভাবে দেওয়া হয়েছে যে, ফোনকল সরাসরি ফোন হ্যাকের উৎস হয় না। কিন্তু ফোনকল বিভিন্ন প্রতারণার জন্য ব্যবহৃত হয়।
অ্যাভাস্টের আর একটি প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে জানানো হয়েছে, ফোনকলের মাধ্যমে সরাসরি হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া অসম্ভব। তবে ফোনকলের মাধ্যমে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাটাক করা যায়। সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং টার্মকে সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানি ক্যাসপারেস্কি ব্যাখ্যা করেছে এভাবে যে, সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং হলো এক ধরনের প্রতারণা কৌশল যা মানুষের ভুলকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য, অনুমতি লাভ, অথবা মূল্যবান সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশে ব্যবহৃত হয়।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একজন পুলিশ অফিসার ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করেছিলেন যে, +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলে ফোন হ্যাক হয়ে যাবে। অবশ্য তিনি পরে ১৩ এপ্রিলে আর একটি ভিডিও পোস্ট করে জানান, আগে ফোনকল রিসিভ করা সংক্রান্ত যেই তথ্য তিনি দিয়েছিলেন তা সঠিক ছিল না। তথ্যের মাঝে কিছু অসংগতি ছিল। তাই তিনি পূর্বের ভিডিওটি ডিলিট করে দিয়েছেন এবং নতুন ভিডিও পোস্ট করেছেন।
বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে গুগলে সার্চ করে জানা যায়, ফোন নম্বরের শুরুতে যোগ চিহ্ন (+) এর পরে থাকা সংখ্যাগুলো আন্তর্জাতিক ডায়ালিং কোড বা কান্ট্রি কোড নামে পরিচিত। প্রতিটি দেশের নিজস্ব একটি কান্ট্রি কোড থাকে। বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড হলো ৮৮০। পাকিস্তানের কান্ট্রি কোড হলো ৯২। অপরদিকে, ৯৯ হলো কিছু দেশের কান্ট্রি কোডের প্রথমাংশ। যেমন তাজিকিস্তানের কান্ট্রি কোড ৯৯২, তুর্কমেনিস্তানের কান্ট্রি কোড ৯৯৩, এবং আজারবাইজানের কান্ট্রি কোড হলো ৯৯৪।
সুতরাং সার্বিক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, কেবল ফোনকল রিসিভের মাধ্যমে ফোন হ্যাক হওয়া সম্ভব না। যদিও কলের মাধ্যমে প্রতারক ব্যক্তিগত তথ্য পেয়ে থাকলে তা নিয়ে প্রতারণা করতে পারে।
তাই +৯২ এবং +৯৯ দিয়ে শুরু নম্বর থেকে আসা ফোনকল রিসিভ করলে ফোন হ্যাক হয়ে যাবার দাবিটিকে ফ্যাক্টওয়াচ ‘মিথ্যা’ চিহ্নিত করেছে।