যেকারণে খ্রিষ্টান হয়েও পুরো রমজান মাসে রোজা রেখেছেন মিকা স্টিভেনস
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ২:২৬:১৯ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসলাম ধর্মাবলম্বী না হয়েও পুরো রমজান মাসে রোজা রেখেছেন মিকা স্টিভেনস নামে একজন ডাচ শিক্ষার্থী। ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর খ্রিষ্টান হয়েও মুসলিম ধর্মের শিক্ষাকেও পবিত্র মনে করেন। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বিবিসি আরবি বিভাগকে তিনি বলেন, “দুই বছর আগে আমার বড় ভাই, যার বয়স এখন ১৮ বছর , তিনি গোপনে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং রোজা রাখা শুরু করেন। আমাদের পরিবারের কী অবস্থা হবে এ বিষয়ে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না। কারণ এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের খ্রিষ্টান পরিবারে গ্রহণযোগ্য ছিল না।”
তিনি আরো বলেন, “কিন্তু বাবা-মা বিষয়টি জানার পরে আমার সাথে আলোচনা করেছিলেন। তারা আমার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বিভিন্ন সংস্কৃতির স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আমার মা একজন খ্রিষ্টান এবং বাবার কোনও ধর্ম নেই। আমি মাকে পছন্দ করি এবং আমি নিজেও খ্রিষ্টান।”
১৬ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত মিকার ভাই খ্রিষ্টান ছিলেন। কিন্তু তার কিছু মুসলিম বন্ধুর সাথে আলোচনা এবং কিছু ইসলামিক বই পড়ার পর তিনি গোপনে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন।
মিকা বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে এর কারণ হিসেবে মনে হয়েছে সে যা চাইত তা সে ইসলামের মধ্যে পেয়েছে”।
স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে তার ও তার মুসলিম বন্ধুদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ধর্মের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব নিয়ে কথোপকথন হয়েছিল।
তিনি বলেন, তার তিনজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুই মুসলিম এবং তারা সকলেই রমজানে রোজা রাখে।
স্রষ্টার নৈকট্য লাভের আশা
যখন মিকাকে প্রশ্ন করা হয় একজন খ্রিষ্টান হওয়া সত্ত্বেও কেন আপনি ইসলামিক রীতিতে রোজা রাখেন? মিকা বলেন, “কারণ আমি স্রষ্টার কাছাকাছি রয়েছি এটা অনুভব করি।”
এটা লক্ষণীয় যে, গত এক দশকে নেদারল্যান্ড-সহ ইউরোপে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া-সহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে এ সংখ্যা বাড়ছে। আরেকটি কারণ হলো ইউরোপে হাজার হাজার শরণার্থীর অনুপ্রবেশ।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেদারল্যান্ডে কোনও ধর্মে বিশ্বাস করেন এমন লোকের হার কমেছে।
২০২১ সালে নেদারল্যান্ডসের সামাজিক সংহতি ও সুস্থতার উপর একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর বয়সী বা তার বেশি বয়সী ডাচ জনসংখ্যার ৫৮ শতাংশ কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায় বা মতাদর্শের অন্তর্ভুক্ত নয়। বিশেষ করে খ্রিষ্টান ক্যাথলিকদের হারও কমেছে।
যাই হোক, ধর্মীয় সম্প্রদায় হ্রাসের এই সময়ের মধ্যেই ডাচদের একটা অংশ অন্যান্য ধর্মকে অনুসরণ করছে এবং ইসলামের মতো বিভিন্ন ধর্মকে গ্রহণ করছে। বিশেষ করে রমজানের সময় এদের মধ্যে অনেকেই তাদের নতুন মুসলিম শরণার্থী প্রতিবেশীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে।
মিকা বলেন, “প্রথমে আমার ভাই আমাকে ইসলামের মূল নীতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় এবং তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে আমার কাছে ব্যাখ্যা করে।”
“আমার ভাই লেভি একমাত্র ব্যক্তি যার সাথে আমি ধর্ম নিয়ে বেশি আলোচনা করি এবং তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমার স্কুলের বন্ধুদের সাথেও এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। এমন কী আমাদের এই আলোচনায় ধর্ম পালন করেন না এমন অনেক সহকর্মীও যোগ দেয়।”- সূত্র বিবিসি বাংলা