সিলেটে প্রবাসীর ভূসম্পত্তি দখলের পাঁয়তারা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০২৪, ৯:৩৮:৪১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: সিলেট শহরে এক প্রবাসী পরিবারের ভূসম্পত্তি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। শহরে প্রবাসীর ক্রয় করা জমিতে জবর দখল করার চেষ্টা করছে একদল চাঁদাবাজ দুর্বৃত্ত। ভুক্তভোগী প্রবাসী মোঃ আলমগীর মান্নান জানিয়েছেন, চাঁদাবাজ লোকজনকে তারা ভয় পাচ্ছেন এবং জমিজমা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা করছে একদল লোক।
নিউইয়র্ক প্রবাসী মোঃ আলমগীর মন্নান এক আবেদনে বলেছেন, “আমি গত ২০১৭ সালে দেশে আমার শ্বশুরের মাধ্যমে সিলেট মহানগরীর পশ্চিম পীর মহল্লায় ৪৫২৬/২০১৭ নং দলিল মূলে ১ খণ্ড জমি ক্রয় করি। বর্ণিত জমিতে ঘর নির্মাণ করে একজন কেয়ার টেকারকে জমিজমা দেখভালের দায়িত্ব দিয়েছিলাম। আলমগীর মান্নান জানান, ” নভেম্বর ২০২০ সালে একদল সন্ত্রাসী রাতের বেলায় এসে কেয়ার টেকারকে ভয়ভীতি দেখায় এবং জমিতে ঘরসহ অন্যান্য নির্মাণ স্থাপনার কারণে চাঁদা দাবি করে ও হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি আমার আমার শ্বশুর জানতে পেরে পরদিন এলাকার মুরব্বিগণ ও ৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলকে অবগত করেন। কাউন্সিলর এ ব্যাপারে আর কোন অসুবিধা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন।”
সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে মোঃ আলমগীর মান্নান জানান, কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হলে তার শ্বশুর ২০২১ সালে আমেরিকায় চলে আসেন। এখানে আসার পর তিনি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ও নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ নেয়ার কারণে প্রবাসে অবস্থান করেন। সে সময়টিতে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে জিয়া মিয়া নামক একজন কেয়ার টেকারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে। জমিজমা রক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে তার শ্বশুর অসুস্থ অবস্থায় ২০২২ সালের অক্টোবরে দেশে চলে যান। দেশে গিয়ে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে আবারো এ ব্যাপারে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগ এর এক পর্যায়ে কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে কোন ঝামেলা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। এমন আশ্বাস পেয়ে প্রবাসী শ্বশুরও দেশত্যাগ করেন।
মোঃ আলমগীর মন্নান জানিয়েছেন, ২০২২ সালের ২২ আগস্ট রাতে এসব সন্ত্রাসীরা জিয়ার নেতৃত্বে এসে তার ঘরদুয়ার ভেঙ্গে ফেলে। এসব শুনে কাউন্সিলরকে ফোনে অবগত করলে তিনি ক্ষতিপূরণ সহ বিচার করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
আলমগীর মানান জানিয়েছেন, আত্মীয় স্বজনরা ২০২১ সাল থেকে কাউন্সিলর অফিসে ধরনা দিয়েও কোন সুফল পেতে ব্যর্থ হয়েছেন। সন্ত্রাসীরা এই সময়ের মধ্যে আলমগীর মান্নানের ক্রয় করা এবং ঘর নির্মাণের জন্য রাখা পাঁচ হাজার ইট ও চারশ ফুট বালি পাশের প্লটে স্থানান্তর করে। এগুলো নেয়ার সুবিধার্থে সীমানার কাটা তারের বেড়া ও পিলার তুলে নেয়। প্রবাসী আলমগীর মান্নান তার আবেদনের বিবরণে বলেছেন, সন্ত্রাসীদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারে না, তাই এরা এসব অন্যায় বেআইনি জুলুম অব্যাহত রেখেছে। প্রতিকারের আশায় এসব ঘটনা কাউন্সিলরকে জানানো হয়েছে ও আইনের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর বিষয়টির বিস্তারিত জানিয়ে প্রবাসী আলমগীর মান্নানের শ্বশুর সিলেটের বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়রি( নং ১১৯১-২০) করেন। এ নিয়ে কোন আইনগত প্রতিকার পান নাই প্রবাসী ভুক্তভোগী পরিবারটি।
নিরুপায় এ প্রবাসী নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কন্সুলেটের মাধ্যমে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবরে প্রতিকারের আশায় আবেদন জানান। এ আবেদনটি বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্তাধীন আছে বলে প্রবাসী মান্নান জানান। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের মদদে এমন কাজ হচ্ছে বলে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের সাথে সম্পর্কের জের ধরে প্রবাসীদের জমি দখলের একের পর এক চেষ্টা করে আসছে এসব দুর্বৃত্তরা। প্রবাসীরা স্বল্প সময়ের জন্য দেশে গিয়েও প্রতিকারের জন্য কিছু করতে পারছেন না।
গত পৌর কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় সশস্ত্র মহড়ার জন্য জেল খাটা সাবেক কাউন্সিলর তাঁর সন্ত্রাসী কাজকর্ম অব্যাহত রেখেছে এবং প্রবাসীদের জমিজমা আত্মসাৎ করার জন্য তার লোকজনদের নিয়ে জবরদখল করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ভুয়া দলিলপত্র করা সহ ভয়ভীতি এবং ক্ষমতাসীন লোকজনের নাম ব্যবহার করে এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রবাসী আলমগীর মান্নান নিরুপায় হয়ে সরকারের কাছে এ নিয়ে আবেদন জানিয়েছেন। এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আরও কিছু প্রবাসী তাদের জমি দখলের অভিযোগ এনেছেন। প্রবাসীদের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রতিকার প্রার্থনার জন্য সংবাদ সম্মেলন করা সহ সরকারের বিভিন্ন মহলে আবেদন করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে প্রবাসীরা জানিয়েছেন।