মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম: বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে শর্ত শিথিল করলো সরকার
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মার্চ ২০২৪, ১০:৩৭:০৪ অপরাহ্ন
:: আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া ::
মালয়েশিয়ার মাই সেকেন্ড হোমে বিদেশি আবেদনকারীদের আকৃষ্ট করতে শর্ত সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৪ মার্চ দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ডাঃ আহমদ জাহিদ হামিদি এক বিবৃতিতে, মাই সেকেন্ড হোমের শর্ত সহজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। তবে শর্তের সংশোধন জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপস করবে না বলেও জানান তিনি।
বিবৃতির দুই দিন আগে, উপ-প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে পর্যটন ও সংস্কৃতি মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি সিদ্ধান্ত হয়।
মাই সেকেন্ড হোমে বিদেশি নাগরিকদের আবেদনের প্রধান শর্তগুলির মধ্যে যা সংশোধন করা হবে তা হল ফিক্সড ডিপোজিটের পরিমাণ যা আবেদনকারীদের অবশ্যই থাকতে হবে, যা রূপা, সোনা এবং প্ল্যাটিনামের তিনটি স্তর অনুসারে পরিবর্তিত হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য অভিবাসন বিভাগের সাথেও কাজ করবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ, যেখানে সমস্ত ফর্ম পূরণ করার পরে, তারা নিরাপত্তা অনুসারে যোগ্য কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য আবেদনটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে যাচাই করা হবে।
সংশোধিত শর্তের অধীনে, আবেদনকারীরা ১০ বছরের আগে তাদের সম্পত্তি পুনরায় বিক্রি করতে পারবেন না এবং তাদের ভিসা প্রতি পাঁচ বছর পর পর নবায়ন করতে হবে।
সরকার আবেদনকারীদের, সন্তানদের জন্য তাদের পছন্দের স্কুল বেছে নেওয়ার সুবিধা দেবে। সরকার যা করছে তা হল জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপস না করে বিদ্যমান ব্যবস্থার উন্নতি করা।
এ ছাড়া যারা ফরেস্ট সিটির জন্য (সম্পত্তি) আবেদন করছেন তাদের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে শর্তগুলো সহজ করা হবে। উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমদ জাহিদ আশা প্রকাশ করেন, পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবিলম্বে আরও মাই সেকেন্ড হোমে আবেদনকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আহমদ জাহিদ যোগ করেন।
১২ মার্চ, পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি মন্ত্রী দাতুক সেরি টিয়ং কিং সিং সংসদে বলেছিলেন, আরও বিদেশী নাগরিক মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে কারণ সরকার কিছু প্রয়োজনীয়তা শিথিল করার দিকে নজর দিয়েছে।
গত বছরের বাজেট ২০২৪ ঘোষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যেখানে পুত্রজায়া (সরকার) প্রোগ্রামটিকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক করতে চায়। জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য, আবেদনকারীদের নিজেদের এবং তাদের নির্ভরশীলদের, তাদের জন্মস্থান বা বর্তমান বসবাসের দেশের কর্তৃপক্ষ দ্বারা জারি করা এবং যাচাই করা ভাল আচরণের একটি শংসাপত্র জমা দিতে হবে বলেও যোগ করেন টিওং ।
টিওং বলেছেন, এই বছরের ৩১ জানুয়ারী পর্যন্ত, ৫৬,০৬৬ সক্রিয় মাই সেকেন্ড হোম পাস হোল্ডার রয়েছে। যার মধ্যে পার্টিসিপেন্ট পাস হোল্ডার ২৭,৭৫৯ এবং নির্ভরশীল ২৮,৩০৭ রয়েছে।
এর মধ্যে চীন মোট ২৪,৭৬৫ ধারক নিয়ে তালিকার শীর্ষে রয়েছে, তারপরে দক্ষিণ কোরিয়া ৪,৯৪০, জাপান ৪,৭৩৩, বাংলাদেশ ৩,৬০৪, যুক্তরাজ্য ২,২৩৪, তাইওয়ান ১,৬১১, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১,৩৪০ রয়েছে। সিঙ্গাপুর ১,২৮২, ভারত ১,২২৩ এবং অস্ট্রেলিয়া ১,০৬৯।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাই সেকেন্ড হোম প্রোগ্রামটি ২০০২ সালে চালু করেছিল মালয়েশিয়া সরকার। যার মাধ্যমে বিদেশীদের সম্পত্তি কিনতে এবং মালয়েশিয়ায় একটি বর্ধিত সময়ের জন্য বসবাস করার অনুমতি দেয়।
মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএমটুএইচ) প্রোগ্রামে ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৬১০টি এবং ২০১৯ সালে ৩ হাজার ৯২৯টি আবেদন অনুমোদিত হয়। যদিও এই প্রোগ্রামটি ২০২০ সালের আগস্টে সাময়িক বন্ধ করা হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় ১ হাজার ৪৬৮টি আবেদন অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
এ দিকে সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির নানা আলোচনা ও সমালোচনার পর ২০২২ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে পিভিআইপি নামক প্রিমিয়াম ভিসা চালু করে। যেটি প্রায় সেকেন্ড হোম ক্যাটাগরির। কিন্তু এ প্রোগ্রামে লক্ষ্যপূরণ করতে না পারলেও প্রোগ্রামটি বাতিল না করে পিভিআইপি’র লক্ষ্য পূরণে আরও অধিকতর পর্যালোচনা করা হবে বলে জানিয়েছিলেন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল।
জানা গেছে, চালুরপর প্রিমিয়াম ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় ৯ মাসে মাত্র ২টি আবেদন অনুমোদন দিয়েছিল মালয়েশিয়ান সরকার। ২০২২ সালের ১ অক্টোবর আবেদনকারীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ প্রিমিয়াম ভিসা প্রোগ্রামে মাত্র ২৮টি আবেদন পেয়েছিল। ২৮টি আবেদনের মধ্যে ১৪ জন পার্টিসিপেন্ট এবং ১৪ জন ডিপেন্ডেন্ট। এর মধ্যে একজন পার্টিসিপেন্ট এবং একজন ডিপেন্ডেন্ট আবেদনকারীকে প্রিমিয়াম ভিসার অনুমোদন দেওয়া হয়।
এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাতুক সেরি সাইফুদ্দিন নাসুশন ইসমাইল। সেসময় তিনি জানিয়েছেন, প্রোগ্রামটি বাতিল না করে প্রিমিয়াম ভিসা’র লক্ষ্য পূরণে পর্যালোচনা করা হবে।
মালয়েশিয়ার সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই এমন দেশগুলো ছাড়া সব বিদেশি ধনী বিনিয়োগকারীদের বসতি স্থাপনের আশায় ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে (পিভিআইপি) প্রোগ্রামের ঘোষণা করা হয়।
এ ছাড়া প্রিমিয়াম ভিসা প্রোগ্রামের (পিভিআইপি) অধীনে ভিসাপ্রত্যাশী বিদেশিদের আবেদন প্রক্রিয়া পরিচালনায় দেশটির ১৬টি এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছিল মালয়েশিয়ান ইমিগ্রিশন বিভাগ। এজেন্টদের তালিকা ইমিগ্রেশন বিভাগের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। আবেদনের শর্ত, আবেদন প্রক্রিয়া, এজেন্সি অনুমোদনসহ প্রিমিয়াম ভিসা কর্মসূচির বিস্তারিত সে সময় তুলে ধরেন মালয়েশিয়ান ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (সাবেক) খায়রুল জায়মি দাউদ।
ভিসা আবেদনকারীদের অবশ্যই মালয়েশিয়ায় ১০ লাখ রিঙ্গিতের (বাংলাদেশি মুদ্রা প্রায় ২ কোটি ১৭ লাখ টাকা) একটি স্থায়ী আমানত অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং প্রধান আবেদনকারীর জন্য এককালীন ২ লাখ রিঙ্গিত এবং ডিপেডেন্টের জন্য এককালীন ১ লাখ রিঙ্গিত ফি দিতে হবে।
এছাড়া আবেদনকারীদের সংখ্যা মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার ১ শতাংশে সীমিত রাখা হবে বলেও সেসময় জানানো হয়। তবে প্রিমিয়াম (পিভিআইপি) প্রোগ্রামে বিদেশি আবেদনকারিদের সাড়া না পাওয়াতে সরকার নজর দিয়েছে মাই সেকেন্ড হোম (এমএমএইচটুএইচ) প্রোগ্রামে এবং সহজ শর্তে আবেনকারীদের আকৃষ্ট করতে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।