শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারের শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:৫৯:০৫ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ হওয়া এইচ এম ইব্রাহিম সেলিম ও কাজী দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুবার্ষিকী আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির বাণী
রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারের শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ২৮ ফেব্রুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৮৪ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছাত্রলীগ নেতা সেলিম ও দেলোয়ার স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে অংশ নিয়ে পুলিশের ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে নির্মমভাবে নিহত হন। আমি শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারসহ গণতন্ত্রের জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহিদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি কাঙ্ক্ষিত বিজয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ করা হয়। উত্থান ঘটে স্বৈরশাসনের। কিন্তু এদেশের ছাত্র সমাজ সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে গেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ আয়োজিত মিছিলে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতাকর্মী যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলের এক পর্যায়ে পুলিশের ট্রাকের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত হন ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ার; আহত হন আরো অনেকে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর শহিদ সেলিম ও দেলোয়ারের মৃত্যুতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী গণতন্ত্রকামী মানুষের মিছিলে প্রকম্পিত হয় রাজপথ, বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারাদেশ। ধারাবাহিক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত হয় এবং ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।
শহিদ সেলিম ও দেলোয়ার- এর আত্মত্যাগ এদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য অনন্য প্রেরণা। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সকলে সচেষ্ট থাকবেন-এটাই আমার প্রত্যাশা।
আমি শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ার এর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।
জয় বাংলা।
খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি শহিদ ছাত্রনেতা সেলিম ও দেলোয়ারের শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নিম্নোক্ত বাণী প্রদান করেছেন :
“সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজের জীবনকে বিপন্ন করে বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর তিনি শূন্য হাতে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন, যখন ব্যাংকে কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না এবং কোনো কারেন্সি নোট ছিল না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক-বাহিনী ২৭৮টি রেল ব্রিজ এবং ২৭০টি সড়ক সেতু ধ্বংস করে, দু’টি সমুদ্র বন্দরে মাইন পুঁতে এবং রাস্তা-ঘাটসহ সমস্ত স্থাপনা ধ্বংস করে রাখে। তাঁর সাড়ে তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশের অর্থনীতিতে রেকর্ড ৯ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয় এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের স্বীকৃতি প্রদান করে।
জাতি হিসেবে এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গ্লানিকর ’৭৫-এর ১৫ই আগস্ট পাকিস্তানিদের এদেশীয় দোসরদের হাতে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তাঁর পরিবারের প্রায় সকল সদস্যসহ প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে। যার ফলে বাঙালিরা তাদের আত্মমর্যাদা হারিয়েছিল, হারিয়েছিল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং সেই সঙ্গে তাদের সোনালী ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের সকল সম্ভাবনা। জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বৈরশাসকেরা সঙ্গিনের খোঁচায় এদেশের মানুষের ভাগ্য লিখতে শুরু করেছিল। আমরা দু’বোন বিদেশে থাকার কারণে আমাদেরকে তারা হত্যা করতে পারেনি। দীর্ঘ ছয় বছর আমাদের বিদেশের মাটিতে রিফিউজি হিসেবে অবস্থান করতে হয়েছে।
আমি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে দেশে ফিরে এসেই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য লড়াই-সংগ্রাম শুরু করি। দেশে স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেই। বাঙালিরা বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে; স্বাধিকার আন্দোলনে আত্মোৎসর্গ করেছে; ৩০ লাখ শহিদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কত তাঁজা প্রাণ ঝরে পড়েছে হিসেব নেই। ১৯৮৪ সালের এই দিনেও ছাত্রলীগ নেতা এইচ. এম. ইব্রাহিম সেলিম এবং কাজী দেলোয়ার হোসেনের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। আমি তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।
সেদিন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলে অসংখ্য ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীগণ সংহতি প্রকাশ করে যোগ দিয়েছিলেন। মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিলটি শুরু হয়েছিল, যার সামনে এবং পিছনে ছিল পুলিশের ট্রাক। মিছিলটি যখন ফুলবাড়িয়ার নিকট পৌঁছায়, ঠিক তখনি স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিলের ওপর অতর্কিতে পিছন থেকে ট্রাক চালিয়ে দেয়া হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে শাহাদৎবরণ করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আবাসিক ছাত্র পটুয়াখালি জেলার বাউফলের সেলিম এবং পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার দেলোয়ার, ক্ষত-বিক্ষত ও আহত অবস্থায় পড়েছিলেন অসংখ্য ছাত্র এবং আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীগণ। তাঁদের এ মহান আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের দুর্বার আন্দোলনকে আরও বেগবান করেছিল।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন-সংগ্রামে সেলিম ও দেলোয়ারসহ যারা প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের রক্তের ঋণ কখনও শোধ হবার নয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও অনেক তাজা প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে স্বৈরশাসকের পতন ঘটে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। আবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই বাংলাদেশের জনগণ ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরে পায়।
আমি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সকল শহিদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। পরিশেষে, সেলিম ও দেলোয়ারের ৪০তম শাহাদৎবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।”