প্রধান বিরোধী দলের আসনে জাতীয় পার্টি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৪, ৮:৪৭:৪৯ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞদের আলাপ থেকে এটা প্রায় পরিস্কার যে, ১১টি আসন নিয়ে টানা তৃতীয়বার জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। দলটির প্রধান জিএম কাদের হবেন বিরোধীদলীয় নেতা। সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ কে হবেন, তা তারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করবেন।
বিএনপিসহ বিরোধী বলয়ে থাকা দলগুলোর বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে- এটা একরকম নিশ্চিতই ছিল। কিন্তু প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসছেন, তা নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জয়ের পাল্লা ভারী হলে তারাই হবেন প্রধান বিরোধী দল- এমন আলোচনাও ছিল কোনো কোনো মহলে। তবে এ নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের।
৭ জানুয়ারি রোববার অনুষ্ঠিত হয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৯৯টিতে ভোট হয় এদিন। নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টি এবার ১১টি আসনে জয়ী হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ১টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ১টি এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১টি আসন পায়। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদের দুই নেতা আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে জয়ী হন। এর বাইরে ৬২টি আসনে জয়ী হন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বাচনে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা যত বেশিই হোক না কেন, তাদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার বিষয়ে সংবিধানে কোনো কিছু বলা নেই। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার সংসদের স্পিকারের। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২(১)(ট)-তে বলা হয়েছে, ‘বিরোধীদলীয় নেতা’ অর্থ স্পিকারের বিবেচনা মতে যে সংসদ-সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসংঘের নেতা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে ভোট করে জয়ী হয়ে এসেছেন, তাদের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করতে দলই তাদের এমন সুযোগ করে দিয়েছে। নির্বাচনে জয়ী হলেও তারা কখনোই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করবেন না। বরং সরকারের সুনজেরই থাকতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে আসন সংখ্যার বিচারে কার্যকর বিরোধী দলের আসনে বসার অধিকার কেবল জাতীয় পার্টিরই।
১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একাই পেয়েছিল ২৯৩টি আসন। আর বিরোধী ছোট ছোট কয়েকটি দল মিলে পেয়েছিল বাকি সাতটি আসন। সেসময় এসব দল যৌথভাবে বাংলাদেশ জাতীয় লীগের আতাউর রহমান খানকে তাদের নেতা উলেখ করে বিরোধী দলের নেতার মর্যাদা দেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন জানান। যদিও তাদের এই দাবি আমলে নেওয়া হয়নি তখন।
গতকাল সোমবার রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল কে হবে, তা আমি এখন বলতে পারব না। তবে আইন অনুযায়ী যা হওয়ার, তাই হওয়া উচিত। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একটি বড় অংশ জয়ী হয়েছে। এরপর আমরা (জাতীয় পার্টি) আছি। স্বতন্ত্ররা তো দলীয় না। স্বতন্ত্র দিয়ে তো কোনো বিরোধী দল হয় না, তাদের দলে যোগ দিতে হবে। জিএম কাদের আরও বলেন, ৫টি হোক, ১০ টি হোক- নৌকার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত লাঙ্গল আছে, এ পর্যন্তই জানি। আমরা সংসদে যেতে চেয়েছি, যে কয়টা আসনই হোক পেয়েছি। তবে নির্বাচন ভালো হয়নি। এখন আমরা বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।