কেন পহেলা জানুয়ারি বছরের প্রথম দিন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫১:৪৫ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আগেকার দিনে এক সময় ২৫শে মার্চ, আবার ২৫শে ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন তারিখে বছরের শুরু ধরা হতো। এখন জানুয়ারি মাসের এক তারিখে, সারা দুনিয়ার মানুষ আতশবাজি পুড়িয়ে, ঢাকঢোল পিটিয়ে, হৈহুল্লোর করে, উৎসব আয়োজনে খৃস্টাব্দের নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। কিন্তু, কখনো নিজেকে জিজ্ঞাসা করেছেন কি কেন পহেলা জানুয়ারি বছরের প্রথম দিন?
রোমান পেগান উৎসব এবং দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার যে ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা চালু করেছিলেন তার সূত্র ধরে ২৫শে মার্চ, আবার ২৫শে ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন তারিখে বছরের শুরু ধরা হতো।
আর সেইসাথে ত্রয়োদশ পোপ গ্রেগরিকেও এর কৃতিত্ব দিতে হয়।
জানুস প্রাচীন রোমানদের জন্য, জানুয়ারি মাসটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এ মাসটি ছিল দেবতা জানুস, যার আরেক নাম ইয়ানুরিয়াস, ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ জানুয়ারি, তাকে উৎসর্গ করা মাস।
রোমান পৌরাণিক কাহিনীতে, জানুস হচ্ছেন দ্বিমুখী দেবতা, অর্থাৎ তাকে দুটি মুখ দিয়ে চিত্রিত করা হয়েছে। তাকে রূপান্তরের দেবতাও বলা হয়। অর্থাৎ যেকোন পরিবর্তনের শুরু এবং শেষের প্রতীক।
ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডায়ানা স্পেনসার ব্যাখ্যা বলেন, “জানুসের দুটি মুখের একটি সামনের দিকে এবং আরকটি পিছনের দিকে ঘোরানো।”
সামনের মুখটি দিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এবং পেছনের মুখটি অতীতের দিকে ফেরানোকে নির্দেশ করে।
জানুয়ারি বছরের প্রথম মাস হওয়ার পেছনে অতীত এবং ভবিষ্যৎ – উভয় দিকে তাকানোর একটা সম্পর্ক আছে।
“সুতরাং যদি বছরের মধ্যে একটা সময় আসে যখন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে ‘এটাই আবার শুরু করার সময়’, সেক্ষেত্রে জানুয়ারি প্রথম মাস হওয়াটা যৌক্তিক।”
আবার ইউরোপে এটি এমন এক সময় যখন শীতকালের পরের দিনগুলো দীর্ঘ হতে শুরু করে।
অধ্যাপক স্পেন্সার বলেছেন, “এটি রোমের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় ছিল, কারণ এটি সেই ভয়ানক ছোট দিনগুলোর পরে আসতো, যখন পৃথিবী ছিল অন্ধকার, হীম শীতল এবং যখন ঠান্ডার কারণে কোন ফসল ফলত না৷”
কেননা, বছরের দীর্ঘতম রাত ২২শে ডিসেম্বর থেকে ক্রমে দিন বড় হতে থাকে, আর জানুয়ারির শুরু থেকে দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে যায় সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে।
এ কারণে অধ্যাপক স্পেন্সারের মতে “জানুয়ারি এক ধরণের বিরতি এবং প্রতিফলনের সময়কাল।”
পহেলা জানুয়ারি যেভাবে বছরের প্রথম দিন হলো ষোড়শ শতকে, পোপ গ্রেগরি ত্রয়োদশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন এবং ক্যাথলিক দেশগুলিতে ওই সময় থেকে পহেলা জানুয়ারিকে নতুন বছরের শুরু হিসাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।
আমরা এখন যে ক্যালেন্ডার অনুসরণ করি বা যেটি ইংরেজি বর্ষপঞ্জি হিসেবে চেনেন অনেকে, সেটাই ‘গ্রেগরিয়ান’ ক্যালেন্ডার।
ইতালি, স্পেন এবং পর্তুগালের মতো ক্যাথলিক দেশগুলো তখন দ্রুতই এই নতুন ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
তবে প্রোটেস্ট্যান্ট এবং অর্থোডক্স খ্রিস্টান প্রধান দেশগুলো এটি বেশ দেরিতে গ্রহণ করে।
ইংল্যান্ড, যে দেশটি পোপের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং প্রোটেস্ট্যান্ট সম্প্রদায়কে গ্রহণ করেছিল, তারা ১৭৫২ সালের আগ পর্যন্ত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করেনি।
এর আগ পর্যন্ত তারা ২৫ মার্চকেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসেবে উদযাপন করতো।
সে বছর ব্রিটেনের পার্লামেন্টের একটি আইন ব্রিটিশদের ইউরোপের বাকি অংশের সাথে একীভূত করেছিল।
এর আগে ১৬৯৯ সালে জার্মানির বিভিন্ন প্রোটেস্ট্যান্ট অধ্যুষিত রাজ্যগুলো নতুন এই বর্ষপঞ্জি গ্রহণ করে।
ব্রিটেনের পর ১৭৫৩ সালে সুইডেন, ১৮৭৩ সালে জাপান, ১৯১২ সালে চীন, ১৯১৮ সালে সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র এবং ইউরোপের সবশেষ দেশ হিসেবে গ্রীস ১৯২৩ সালে এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে।
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খ্রিস্টান প্রধান নয় এমন দেশও গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে শুরু করে।
বর্তমানে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে, আর ঠিক এই কারণেই আমরা প্রতি বছরের পহেলা জানুয়ারি সারা বিশ্বে আতশবাজি পোড়ানোর উদযাপন দেখি।