পৃথিবীতে সবচেয়ে বিস্ময়কর এক ক্যামিকেল পানি (ভিডিও)
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪১:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম বিজ্ঞান ডেস্ক: আমাদের রক্তের ৮৩ ভাগ, হাড়ে ২২ ভাগ, মস্তিষ্কে ৭৪ ভাগ, পেশিতে ৭৫ ভাগ পানি থাকে, অর্থাৎ আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশই হচ্ছে পানি। শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্ম সম্পাদনের জন্যও প্রয়োজন পানি।
যদি যথেষ্ট পানি পান না করি তাহলে শরীর দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। গাছের গোড়ায় পানি না দিলে যেমন শুকিয়ে যায় তেমনি পানির অভাবে আমাদের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়। শরীরের প্রতিটি কাজে পানির সাহায্য প্রয়োজন। খাবার ব্যতীত এক সপ্তাহ থাকা সম্ভব হলেও পানি ছাড়া এতদিন থাকা সম্ভব নয়। তার মানে শরীরকে সচল রাখা ও শারীরিক ফিটনেস অর্জনে খাদ্য তালিকায় প্রচুর পানি থাকতেই হবে ।
প্রয়োজনীয় পানি পানের অভাবে অনেক রকম সমস্যা, যেমন- পানিশূন্যতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কিডনির সমস্যা,শরীরের টক্সিন জমা ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পিপাসার্ত অবস্থায় পানি খেলে, তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি শরীরের পানিশূন্যতা দূর হয়। ফলে শারীরিক ক্লান্তি দূর হওয়ার পাশাপাশি শক্তিও ফিরে আসে ।
পানি রক্তে ও কোষে অক্সিজেন ও অনান্য পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। এছাড়া সারা শরীরের রক্ত সরবরাহ ও সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় পানি পানে। পানি শরীরের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে। পানির অভাবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। পানি হজম শক্তি বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। আমাদের শরীরে ঠিক ভাবে খাবার হজম হওয়ার জন্য প্রচুর পানির দরকার। তাই আঁশ জাতীয় খাবারের পাশাপাশি, প্রচুর পানিও পান করতে হবে।
পানি কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়। পানি ঠিক মতো পান না করলে শরীর সব পানি শুষে নেয়, এতে কোলন শুষ্ক হয়ে যায়, ফলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ঠিক মতো নির্গত হয় না। পানি কিডনির পাথর হওয়া থেকে বাঁচায় কারণ, পানি ইউরিনের লবন ও খনিজ ভেঙ্গে দেয়, ফলে কিডনিতে পাথর হয় না। ব্রেইনের ৮৫% হচ্ছে পানি। একটু পর পর পানি পান করলে তাই মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায় এবং শারীরিক শক্তি বাড়ে। পানি রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, তাই উচ্চ রক্তচাপ কমে।
বিশ্বব্যাপী ত্বকের যত্নে যখন নামী-দামী প্রসাধন সামগ্রীর ব্যবহার বাড়ছে তখন বৃটিশ বিজ্ঞানীরা ত্বক সুন্দর রাখতে পানি নিয়ে একটি ভিন্নধর্মী তথ্য দিয়েছেন। তারা গবেষণায় দেখেছেন ত্বকে পানির পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলে ত্বক ভাল থাকে ও ত্বকের ভাঁজ কমতে সাহায্য করে।
অক্সিজেনের পরই পানি আমাদের জীবন ধারণের জন্য দ্বিতীয় উপাদান। অন্যদিকে ২৫ ভাগ অক্সিজেন পানি থেকে আসে। মাথাব্যথার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো পানিশূন্যতা। এক্ষেত্রে দুই গ্লাস পানি খেয়ে বিশ মিনিট বিশ্রাম নিন দেখবেন মাথাব্যথা বন্ধ হয়ে গেছে।
জল বা পানির রাসায়নিক সংকেত হল H2O। ইউপ্যাক (IUPAC) নিয়ম অনুযায়ী পানির রাসায়নিক নাম ডাইহাইড্রোজেন মনোঅক্সাইড। অর্থাৎ জল বা পানির একেকটি অণু একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং দু’টি হাইড্রোজেন পরমাণুর সমযোজী বন্ধনে গঠিত। এই H2O যৌগটির একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল – অপেক্ষাকৃত অল্প তাপমাত্রার পরিসরের মধ্যে এর তিনটি বিভিন্ন অবস্থা— কঠিন, তরল ও বায়বীয় পরিলক্ষিত হয়। হাইড্রোজেন পরমাণু 104.45° কোণে অক্সিজেন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত থাকে।[১] এক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ০°–১০০° সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে H2O তরল অবস্থায় থাকে— এই তরল H2O-কেই আমরা পানি বা জল বলি। তবে এতটুকু জানাতেই পানির সবকিছু জানা হয়ে গেল না। পানি অদ্ভুত কিছু এ পৃথিবীতে।
পানি ছাড়া জীবন সম্ভব কি?
অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, ভিনগ্রহের কোনো প্রাণীর দেহে কোনো হাইড্রোকার্বন যৌগ পানির ভূমিকা পালন করতে পারে। হাইড্রোকার্বন মানে হাইড্রোজেন ও কার্বনের যৌগ। তবে এসব যৌগে অন্য মৌলও থাকতে পারে। এ ধরনের কোনো যৌগ যদি পানির ভূমিকা পালন করে, তবে সে সব প্রাণ অবশ্যই পৃথিবীর মতো হবে না। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেমন হতে পারে সে সব প্রাণ?
এ বিষয়েও আসলে বিজ্ঞানীদের কাছে নিশ্চিত কোনো জবাব নেই। এমনিতে পৃথিবীর সব প্রাণ কার্বননির্ভর। কার্বনের বিশেষত্ব হলো, এটি নিজের সঙ্গে ও অন্যান্য মৌলের সঙ্গে নানাভাবে বন্ধন গঠন করতে পারে। ফলে তৈরি হতে পারে নানা ধরনের জৈব যৌগ। কার্বনের কাছাকাছি ধরনের মৌল আছে সিলিকন। তাই অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, ভিনগ্রহে সিলিকনভিত্তিক প্রাণও হতে পারে। হতে পারে আসলে আরও অনেক কিছু। তবে আমরা শুধু জানা বিষয়গুলোর সঙ্গে মিলিয়ে, সে অনুযায়ী অজানার সন্ধান করতে পারি। সেভাবেই বিজ্ঞানীরা আজও ভিনগ্রহে প্রাণের সন্ধান করছেন। তবে অনেক বিজ্ঞানীর ধারণা, প্রাণের জন্য পানি অত্যাবশ্যক। কিন্তু এটাও শুধুই ধারণা। ভিনগ্রহে কোনো প্রাণের খোঁজ পাওয়া না গেলে, এ ধারণা আসলে সত্যিকার অর্থে পরীক্ষা করার কোনো উপায় নেই!
সুত্র: বিবিসি সায়েন্স ফোকাস, দ্য গার্ডিয়ান ও অন্যান্য