রাজনৈতিক সহিংসতা : ১৩ দিনে ১৩১ অগ্নিসংযোগ, বাস পুড়েছে ৬৫, আগুন নেভাতেও বাধা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১০ নভেম্বর ২০২৩, ২:১৮:৩৭ অপরাহ্ন
জ্বলছে বাস, চালকের আহাজারি
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় গত ১৩ দিনে ১৩১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৯৯টি ঘটনায় আগুন নেভাতে কাজ করেছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সদস্যরা। বাকি ৩০টি ঘটনায় আগুন নেভাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের। এ ক্ষেত্রে উচ্ছৃঙ্খল জনতার বাধা ছিল। পাশাপাশি পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে অগ্নিসংয়োগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট সূত্র একটি গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেল জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা (৩৭ ঘণ্টা) পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল জনতা ১৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা দেশে প্রতি ৩ ঘণ্টায় ১টি করে পরিবহণ এবং প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১টি করে বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রায় ৬ ঘণ্টায় ১টি করে বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
তৃতীয় দফায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম ৩৭ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৫টি আগুনের ঘটনার মধ্যে ঢাকা সিটিতে (হাজারীবাগ, তাঁতীবাজার, কাকলি, মিরপুর, ধানমন্ডি, বারিধারা, মাতুয়াইল) ৭টি, ঢাকা বিভাগে (গাজীপুর) ৩টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (খাগড়াছড়ি) ১টি, রাজশাহী বিভাগ (শিবগঞ্জ, বগুড়া) ১টি, বরিশাল বিভাগে (গৌরনদী, বরগুনা) ২টি, চট্টগ্রাম বিভাগে (নোয়াখালী) ১টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৯টি বাস, ৪টি কাভার্ডভ্যান, ২টি ট্রাক পুড়ে যায়। জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে ৬১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আর ২১টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি বৃহস্পতিবার দাবি করেছে, বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে ৯২টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ২০০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এসব ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দুই হাজার ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর বাইরে থেকে এক হাজার ৩৪৫ ও রাজধানীর ভেতর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে এক হাজার ৭৩৭ জনকে। তবে বিএনপির দাবি, ২৮ অক্টোবর দলটির মহাসমাবেশের চার-পাঁচ দিন আগে থেকে এ পর্যন্ত নয় হাজার ৮৩১ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কয়েকদিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ২৮ অক্টোবর। সেদিন শাহজানপুরে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। একজন সিনিয়র স্টেশন অফিসার ও দুজন ফায়ারম্যানকে মারধর করা হয়। ওইদিন ২৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওইদিনের ১৪টি ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করতে পারেননি। এছাড়া ২৯ অক্টোবর ১৯টি ঘটনার মধ্যে চারটি, ৩১ অক্টোবর ১১টি ঘটনার একটি, ১ নভেম্বর ১৪টি ঘটনায় দুটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেনি ফায়ার সার্ভিস।
২ নভেম্বর সাতটি এবং ৪ নভেম্বর ছয়টি ঘটনার সবকটিতে কাজ করেছে আগুন নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটি। ৫ নভেম্বর ১৩টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে দুটিতে এবং ছয় নভেম্বর ১৩টি ঘটনার মধ্যে চারটিতে আগুনের কাছাকাছি যায়নি ফায়ার সার্ভিস। ৭ নভেম্বর নয়টি, ৮ নভেম্বর আটটি এবং ৯ নভেম্বর বিকাল চারটা পর্যন্ত পাঁচটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই তিন দিনের ঘটনাগুলোর মধ্যে প্রতিদিন একটি করে ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা কাজ করতে পারেনি।
গত ২৮ অক্টোবর থেকে প্রতিনিয়ত গাড়ি, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন, পুলিশ বক্স, পুলিশের গাড়ি, শোরুম, শ্রমিক অফিস, সিটি করপোরেশন কার্যালয়, দোকান, বাসাবাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি ও সমমনা দলের নেতাকর্মীরা এসব অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগ। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাশকতার আগুনে পুড়ছে বিএনপির কার্যালয়ও। গত ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপির চারটি দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোতে যাত্রীবাহী বাস পুড়েছে ৬৫টি। এছাড়া তিনটি মিনিবাস, দুটি পুলিশ বক্স, একটি সিটি করপোরেশন কার্যালয়, একটি পুলিশের গাড়ি, চারটি মোটরসাইকেল, তিনটি মাইক্রোবাস বা প্রাইভেটকার, দুটি লেগুনা বা পিকআপ, বিএনপির চারটি কার্যালয়, রেলওয়ে শ্রমিকদের একটি অফিস, তিনটি শোরুম, আটটি কাভার্ডভ্যান বা মালবাহী গাড়ি, সাতটি ট্রাক এবং একটি করে সিএনজি আটোরিকশা, গার্মেন্ট কারখানা ও আওয়ামী লীগ কার্যালয় রয়েছে।