কানাডায় ভিজিট ভিসায় যাওয়া অনেকে যে ধরনের কষ্টে পড়ছেন ।। বাংলা টাউনের পথে(ভিডিও)
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৫৪:০৪ অপরাহ্ন
কানাডার ওন্টারিও প্রদেশের রাজধানী টরন্টোর বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ড্যানফোর্থের মেইন স্ট্রিট থেকে ফার্মেসি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত স্থানটি ‘বাংলা টাউন’ হিসেবে পরিচিত। এটিকে অফিশিয়েলি টরন্টো সিটি করপোরেশন স্বীকৃতি দিয়েছে।
আহনাফ চৌধুরী : কানাডার ভিজিট ভিসা গত কয়েক মাসে সিলেটসহ সারাদেশের অনেকে পেয়েছেন বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে। উন্নত দেশে যাওয়ার ভাল সুযোগ মনে করেই অনেকে জায়গা-জমি বিক্রি করে বা ঋণ করে টাকা মেনেজ করে স্বপ্নের দেশে যাচ্ছেন। তবে সেদেশে পৌঁছার স্বপ্ন অনেকের পূরণ হলেও কানাডায় পৌঁছে পড়তে হচ্ছে সংকটে বেশীরভাগ ভিজিটরদের। ধনী উন্নত সেই দেশটিতে নতুন যাওয়া অনেকের না খেয়ে থাকার খবরও আসছে নানা মাধ্যমে।
বেশি সমস্যা হচ্ছে থাকার জায়গায়। কেবল ভিজিট ভিসা আসা লোকগুলোর জন্যে নয়, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এ সংকটে। আকাশচুম্বি বাসা ভাড়া যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। বাড়ি ভাড়া না পেয়ে, তাবু টাঙিয়ে রাস্তা কিংবা পার্কে থাকার মতো ঘটনাও ঘটছে অনেক জায়গায়। এরমধ্যে যোগ হয়েছে কাজের অভাব। কানাডা সরকার বলছে আপাতত আবাসন সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। গত এক বছরে ইউক্রেন সংকটসহ নানা কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে কানাডায় ঢুকেছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
সিলেটসহ বাংলাদেশ থেকে যারা ভিজিট ভিসায় কানাডায় যাচ্ছেন তাদের বেশীরভাগই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে যাচ্ছেন। প্রত্যেকের পছন্দের ঠিকানা কানাডার টরন্টো শহর। এখানে মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বৃদ্ধি পায় নি আবাসন। এতে একেকজনকে শেয়ারের মাধ্যমে রুমে থাকতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ ডলার। রুমে উঠতে গেলে প্রথম অবস্থায় দিতে হয় এক সাথে দুই মাসের সিট ভাড়া।
প্রকাশ, যারা ভিজিট ভিসায় যান কানাডায় তারা দেশ থেকে প্রথম অবস্থায় সঙ্গে নেন ৩/৪ হাজার ডলার। সেই টাকা শেষ হয়ে যায় প্রথম দুই মাসের মধ্যে। রিফিউজি ক্লেইমের জন্য ফি(যাকে দিয়ে ক্লেইমের প্রসেস করাতে হয় তাকে টাকা দিতে হয়), দুই মাসের রুম ভাড়া, থাকার জন্য মেট্রেস আর আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র এবং প্রয়োজনীয় বাজার করেই ৪ হাজার ডলার শেষ হয়ে যায়।
টরন্টোর বাংলা টাউন
রিফিউজি ক্লেইম সাবমিট করতেই সময় লাগে প্রায় দুই মাস। এর পর থেকেই মূলত শুরু হয় ভিজিটরদের বিড়ম্বনা। কেননা, দেশ থেকে তারা যে-টাকা নিয়ে যান সেই টাকা তখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ১৬/১৭ লক্ষ টাকা খরচ করে সেখানে গিয়ে নতুন করে যে দেশ থেকে আরও টাকা আনবেন সেই সুযোগ আর অনেকের থাকে না। সেজন্য অনেকেই সোশ্যালের টাকার জন্য অপেক্ষায় থাকেন। আবার অনেকেই টাকা না পেয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।
শফিক মিয়া (ছদ্মনাম) ৩ মাস আগে কানাডায় গিয়েছিলেন ভিজিট ভিসায়। শফিক জানান, ভিজিট ভিসা পেয়ে তিনি সব থেকে বেশী খুশী হয়েছিলেন। ভেবেছিলেন সেখানে গিয়েই শুরু করবেন কাজ। পরিবারের সব দুঃখ মুছে যাবে। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি বাস্তবতা ভিন্ন বুঝতে পারেন। তিনি জানান, দেশ থেকে যা টাকা নিয়ে এসেছিলাম সব টাকা ইতিমধ্যে শেষ। দেশে পরিবার আমার হাতের দিকে চেয়ে আছে। তারাও এখন অনেক কষ্টে আছেন। এজেন্সিকে ২০ লাখ টাকা দিয়ে কানাডায় ভিজিট ভিসায় এসেছি। এখানে এসে রিফিউজি ক্লেইমও করেছি। তবে এখনও ওয়ার্কপার্মিট না পাওয়ার কারণে কোন কাজ শুরু করতে পারছি না। এখানে কোথাও ওয়ার্কপার্মিট ছাড়া কাজ পাওয়া যাচ্ছে না। ওয়ার্কপার্মিট পেলেও যে কাজ পাবো তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। এদিকে দেশে সব কিছু বিক্রি করে উন্নত জীবনের স্বপ্নে কানাডা এসেছিলাম। আগামী মাস থেকে কীভাবে থাকবো, বাসা ভাড়া কীভাবে দিব জানি না। ইতিমধ্যে স্ত্রী, সন্তানদের শ্বশুড় বাড়ি পাঠিয়েছি।
গত কয়েক মাসে কানাডায় ভিজিট ভিসায় আসা আরও অনেকের গল্প এরকমই। কেউবা স্ত্রী ও সন্তানদের পাঠিয়েছেন শ্বশুড় বাড়ি আবার কেউ বাস্তবতাকে লুকিয়ে পরিবারকে মিথ্যে অভয় দিয়ে বলছেন সামনের মাস থেকে কাজ পেলে টাকা পাঠাবো। আবার অনেকেই সোশ্যালের ফ্রিতে দেয়া ফল-মূল খেয়ে পার করছেন দিনের পর দিন।
লাখ লাখ টাকা খরচ করে কানাডায় ভিজিট ভিসায় আসার আগে অন্তত চিন্তা করতে হবে বাংলাদেশীদের। নয়তো এখানে এসে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়বেন তা থেকে বেরিয়ে আসা অনেক কঠিন হবে।
টরন্টোর মেইনস্ট্রিট রেলস্টেশন থেকে বাংলা টাউনের পথে হাঁটতে থাকা একটি ভিডিও নিচে—