ইরানের দুর্দান্ত সামরিক সক্ষমতা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ৫:৫১:৩৮ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: জাজিরাতুল আরব দেশগুলোর পাশের দেশ দেশ ইরান। মাঝখানে আছে উপসাগর। ইরান বলে পারস্য উপসাগর, আরবরা বলে আরব উপসাগর। এ দেশটি আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে মাত্র কয়েক দশকের মধ্যেই নিজেকে আঞ্চলিক পরাশক্তিতে রূপান্তরিত করেছে। এরই মধ্যে নিজেদের সমরাস্ত্র নিরাপদে রাখতে মাটির নিচে সামরিক ঘাঁটি বানিয়েছে তেহরান। পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের পাওয়ার হাউসে। পরাশক্তি রাশিয়াকে অনেকটা শক্তিধর করেছে ইরানের সামরিক ড্রোন। জেনে নিন দেশটির দুর্দান্ত সামরিক সক্ষমতা।
ইরানের সামরিক বাহিনীর আকার
ইরানের সামরিক বাহিনীর আকার ১০ লাখ ১৫ হাজার গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের তথ্য অনুযায়ী। এর মধ্যে সক্রিয় সেনা সদস্য ৫ লাখ ৭৫ হাজার ও রির্জাভ সেনা রয়েছে আরও সাড়ে ৩ লাখ। এদের মধ্যে সেনাবাহিনী সাড়ে তিন লাখ, আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ৯০ হাজার, বিমানবাহিনী ৪৫ হাজার ও নৌবাহিনীর সদস্য সংখ্যা রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির সামরিক প্রশিক্ষিত জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখের বেশি।
সামরিক ড্রোনে বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা রাখে ইরান। দেশটিতে ২০১১ সালের পর রীতিমতো ড্রোন শিল্পের বিপ্লব ঘটে। আমেরিকার একটি গোয়েন্দা ড্রোন ইরানের আকাশে প্রবেশ করলে ভূপাতিত করা হয় সেটিকে। পরে সেই প্রযুক্তি পর্যালোচনা করে তেহরান তৈরি করে শাহেদ-১৭১ সিমোর্গ নামের ড্রোন।
এরপর শাহেদ-১২৯ এবং শাহেদ-১৩৬ মডেলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন তৈরি করে দেশটির বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি ইরানের তৈরি শাহেদ-১৩৬ কামিকাজে ড্রোন ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। যুদ্ধের শুরুর দিকে এই ড্রোন ব্যবহার করে ইউক্রেনকে বেশ চাপে ফেলে দিয়েছিল রাশিয়া। এরপর থেকেই বিশ্বব্যাপী আলোচনায় আসে ইরানের তৈরি ক্ষ্যাপাটে এই ড্রোন।
ইরানের যুদ্ধযান
শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে ইরানের স্থল যুদ্ধযানের বহরও বেশ লম্বা। তাদের সেনাবাহিনীর কাছে ট্যাংক রয়েছে ১ হাজার ৬৩৪টি। সাঁজোয়া যানের সংখ্যা ২ হাজার ৩৪৫। সেনাসদস্যদের ব্যবহারের জন্য কামান রয়েছে দুই হাজার ১২৮টি। পাশাপাশি এক হাজার ৯০০টি রকেটচালিত কামান রয়েছে তেহরানের।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা
ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারের একটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের মতে, স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের দিক থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর।
এসব ক্ষেপণাস্ত্র অনেক ক্ষেত্রেই ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের দাবি—কয়েক বছর ধরেই আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে ইরান।
ইরানের আলোচিত কিছু ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে রয়েছে সাহাব সিরিজের ১, ২ ও ৩, কিয়াম-১, ফাতেহ-১১০ ও জোলফাগার ক্ষেপণাস্ত্র। এর মধ্যে সাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্রটি পাড়ি দিতে সক্ষম ২ হাজার কিলোমিটার। এই দূরত্বে রয়েছে রাশিয়া, চীন, মিশর ও ভারতের মতো দেশ।
ইরানের যুদ্ধবিমান
ইরানের বিমানবাহিনীর সংগ্রহও বেশ সমৃদ্ধ। এই বাহিনীর কাছে আছে ৫০৯টি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান। এর মধ্যে রয়েছে—ফাইটার বিমান ১৪২টি, অ্যাটাক বিমান ১৬৫টি, হেলিকপ্টার ১২৬টি ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার ১২টি। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের জন্য ১০৪ ও পরিবহনের জন্য রয়েছে ৯৮টি উড়োজাহাজ। ইরানের নৌবাহিনীর রয়েছে ৬টি ফ্রিগেট, ৩টি করভেট, প্রায় ৩০টি সাবমেরিন, ৮৮টি পেট্রলবোট ও তিনটি মাইন ওয়্যারফেয়ার।
এ ছাড়া তেহরানের হাতে বেশকিছু ক্রুস মিসাইলও রয়েছে। বড় দুর্বলতা হলো দেশটির নৌবাহিনীর কাছে নেই কোনো বিমানবাহী রণতরী।