মহাসমাবেশ বনাম শান্তি সমাবেশ: শনিবারের আগেই আতঙ্ক
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১৯:২৪ অপরাহ্ন
ডয়চে ভেলে: বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নেতাদের কথা আর পুলিশি তৎপরতায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেশি। আর আওয়ামী লীগ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই মাঠে নেমে গেছে।
যদিও সমাবেশ আরও একদিন পর শনিবার। বিএনপির তৃণমূলের অধিকাংশ নেতা-কর্মী সমাবেশে অংশ নিতে এরই মধ্যে ঢাকা চলে এসেছেন। এখন সংকট চলছে বিএনপির সমাবেশের জায়গা নিয়ে। বিএনপি নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনেই সমাবেশের সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু পুলিশ তাদের সেখানে সমাবেশ করতে দিতে চায় না। বিকল্প জায়গার প্রস্তাব চেয়ে পুলিশ বিএনপিকে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি জবাবে নয়া পল্টনেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।
পুলিশ আওয়ামী লীগকেও চিঠি দিয়েছে বিকল্প জায়গা জানতে। তারা এখনো জবাব দেয়নি। আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করতে চায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে। জানা গেছে, বিএনপির অবস্থান বুঝে আওয়ামী লীগ সিদ্ধান্ত নেবে।
আশঙ্কা করা হচ্ছে সমাবেশের আগে মূল জটিলতা হবে বিএনপির নয়া পল্টন নিয়ে। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি এবার গত ডিসেম্বরের মতো ছাড় দেবে না। তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে অনড়। বড় জোর শেষ পর্যন্ত তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেতে পারেন। শহরের আশপাশ যেমন, গোলাপবাগ মাঠ-এ ধরনের জায়গায় তারা সমাবেশ করবে না। পুলিশের একটি সূত্র জানায়, তারা পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন। এমনও হতে পারে তারা শেষ পর্যন্ত কোনো দলকেই সমাবেশের অনুমতি নাও দিতে পারেন তারা।
পুলিশ ঢাকায় বিএনপি নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে আটক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। বুধবার রাতে তারা বিএনপির ২৭ জনকে আটক করেছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশ সারাদেশ থেকে বিএনপির তিন হাজার ৬২০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ৪০০। ঢাকায় বিএনপির একাধিক নেতার বাসায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
এদিকে মহাসড়ক এবং ঢাকার প্রবেশ পথে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অংশে বৃহস্পতিবার দুপুরে র্যাবের তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। বিকালের দিকে পোস্তোগোলা এলাকায় র্যাব অভিযান চালায় বলে জানা গেছে। তাদের এই তল্লাশি অভিযান সমাবেশের দিন পর্যন্ত চলবে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, সমাবেশের সময় যাতে নাশকতার জন্য কেউ কোনো অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহন করতে না পারে সেজন্য ২৮ অক্টোবর ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে তল্লাশি চৌকি বসাবে র্যাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানান, আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য দুই দলকেই তাদের সমাবেশের জায়গা পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছি। তবে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে বলে জানিয়েছে। তারা বলেছে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ স্বেচ্ছাসেবক থাকবে, তারা শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করবে। আওয়ামী লীগ এখনো কিছু জানায়নি। দুই দলের সঙ্গেই আমাদের আলাপ আলোচনা চলছে। আমরা তো কারুর শত্রু না। আমরা একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে চাই। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দলকেই আমরা সমাবেশের অনুমতি দেইনি।
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা ফুল প্রুফ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছি। শান্তি শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে এমন কোনো পরিস্থিতি আমরা সৃষ্টি হতে দেব না।’
বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযানের অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক কারণে কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করছি না।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, আমরা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করব। এর আগেও আমরা এখানে সমাবেশ করেছি। কখনোই শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সমাবেশ হয়েছে। এবারও হবে।
তিনি বলেন, ‘ঢাকাসহ সারাদেশে পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে। জেলা উপজেলায় নেতা-কর্মীরা বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। তাই তারা আগেই ঢাকা চলে এসেছেন। এখন পুলিশের ভয়ে ঢাকায় আত্মীয় স্বজনের বাসায়ও থাকতে পারছেন না। তবে এইসব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে আমরা সফল সমাবেশ করব।’
তৃণমূলে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে ২৮ সেপ্টেম্বর সমাবেশে অংশ নেওয়ার নির্দেশনাই আছে। এরপর কী কর্মসূচি হতে পারে তা জানানো হয়নি। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল এবং জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের কথা রয়েছে। বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। তারা চায় বর্তমান সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় আছে।
বিএনপির মহাসমাবেশকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা মনে করে সমাবেশের পরই বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিতে পারে। টানা কর্মসূচিতে চলে যেতে পারে। এজন্য তারা আগেই মাঠ দখলে রাখার কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দলটি ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে শান্তি সমাবেশ করেছে। তাদের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠেই থাকতে বলা হয়েছে। শুক্রবার থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের অবস্থান নেওয়ার কথা রয়েছে। তারা সমাবেশের দিন পর্যন্ত এই অবস্থান ধরে রাখবেন। আর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটের সমাবেশেও ব্যাপক নেতা-কর্মীর সমাবেশ ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, কোনো কারণে পুলিশ কোনো দলকেই ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি না দিলে সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা যাতে অবস্থান নিতে না পারে তার প্রস্তুতি তারা নিয়ে রেখেছেন। তাদের পরিকল্পনা হলো যেকোনো উপায়ে ঢাকা শহর তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা।
এদিকে ঢাকার ওয়ার্ডগুলোতে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও কাজ করছেন। তারা পুলিশকে বিরোধী নেতা-কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য দিচ্ছেন। এলাকায় নতুন এবং অপরিচিত মুখ দেখলে পুলিশকে খবর দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন জানান, আজ (বৃহস্পতিবার) থেকেই আমাদের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে গেছেন। ২৮ তারিখ শান্তি সমাবেশ করে তারা ঘরে ফিরবেন। আমরা কোনোভাবেই অশান্তি সৃষ্টি করতে দেব না। বিএনপি বলেছে তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। তাহলে তো ভালো। কিন্তু তারা যদি নাশকতা করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা তাদের প্রতিরোধ করব।
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পুলিশ শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য আমাদের শান্তি সমাবেশের জায়গা পরিবর্তনের অনুরোধ করেছে। আমরা সেটা বিবেচনা করব। তবে বিএনপি যদি নয়াপল্টনে সমাবেশ করে তাহলে আমরা বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই শান্তি সমাবেশ করব।’
বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের শরিকেরাও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করবে। জামায়াতে ইসলামী মতিঝিল শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিলেও পুলিশ তাদের কোনো সমাবেশেরই অনুমতি দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
সবমিলিয়ে ঢাকায় মানুষের মধ্যে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় যানবাহন চলাচল ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। রাস্তায় মানুষজন কম দেখা গেছে।