অডিও ফাঁস: মন্ত্রী আমাকে নির্বাচন করতে চারঘাটে এনেছেন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:২৩:৪৩ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যেখানে তিনি নিজেই বলেছেন, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী (পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন।’ ওই অডিওতে পুলিশের ভেতরের চাঞ্চল্যকর নানা বিষয়ও প্রকাশ পেয়েছে।
অডিওটি ফাঁসের পর ওই ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, ৬ মাস আগে চারঘাটের চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। কালু মাদক ব্যবসায়ী দাবি করে মামলার প্রক্রিয়া শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রেীয় কারাগারে বন্দি। তবে মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে কালুর পরিবার।
তার স্ত্রী সাহারা বেগম বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে চারঘাটের শলুয়া ইউপি’র ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদে ভোট করেছিলেন আমার স্বামী। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ হয়। ওই প্রতিপক্ষ ডিবি পরিদর্শক আতিকুর রেজা সরকারকে ম্যানেজ করে স্বামীকে মাদকের সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার করিয়েছেন। তার দাবি, তার স্বামীকে ডিবি পুলিশ ফাঁসিয়েছে।
এসব দাবি করে গত শনিবার জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অডিও রেকর্ডসহ একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন কালুর স্ত্রী। আর ডাকযোগে পুলিশের আইজি এবং রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজির কাছেও পাঠানো হয় অডিওটি।
৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওই অডিওতে ৭ লাখ টাকা ঘুষ পেলে মাদক ব্যবসার অনুমতি দেয়ার কথা শোনা গেছে ওসি মাহবুবের কণ্ঠে। সূত্র বলছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওসি থানা কম্পাউন্ডে তার শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে সাহারা বেগমের কাছে এ ৭ লাখ টাকা দাবি করেন। ওসি বলেন, ‘এখনো তোমার গায়ে আমি আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সে রকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া টাকার আর কোনো উৎস নেই।’
গৃহবধূ সাহারা বেগমকে ওসি বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে জেলে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন কালু)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়তে পারবো না। মুক্তার বিরুদ্ধে (চারঘাটের মাদক সম্রাট ও নারীর প্রতিপক্ষ) এখন অ্যাকশন নিতে পারবো না, শুভ’র বিরুদ্ধেও (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক কারবারি) অ্যাকশন নিতে পারবো না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেবো। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করবো আমি। তোমরা এলাকার বাইরে থেকে মাদক ব্যবসা করবে। কোনো সমস্যা নেই।’ অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের ‘সুন্দর চেহারা’ নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।
একপর্যায়ে ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘নির্বাচন করতে মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে চারঘাট থানায় নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া আর কারও কথা শুনি না।’ তার এমন অডিও ফাঁসের পর তোলপাড় রাজনৈতিক অঙ্গন।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী সংসদ নির্বাচনেও জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়ার ‘নীল নকশা’ আঁটছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় থানাগুলোতে এখন থেকেই নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। সেটির বহিঃপ্রকাশ চারঘাট থানার ওসির এ কথপোকথন।
এদিকে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষ আদায়ের জন্য সাধারণ মানুষকেও হয়রানি করতো ওসি মাহবুবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম। এ কাজে ডিবি পুলিশও সম্পৃক্ত রয়েছে। বড় মাদক কারবারিদের টাকা নিয়ে একদিকে যেমন মুক্ত পরিবেশে মাদক ব্যবসা করাতেন, তেমনি কারও কাছে টাকা না পেলেই মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করতেন। কোনো কোনো মাদক ব্যবসায়ীর কাছে নিয়মিত মাসোহারা নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে ওসি মাহবুবুল আলম বলেন, আমার কাছেও অডিওটা এসেছে। কিন্তু কীভাবে হয়েছে আমি জানি না। এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে অডিও ফাঁসের পর তাকে চারঘাট থানা থেকে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মো. রফিকুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, এ ঘটনায় তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে রাজশাহী-৬ আসনের (বাঘা-চারঘাট) সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।