অ্যামনেস্টির বিবৃতি আদিলুরের রায় নিয়ে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৫:৩২:২০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র ও সংগঠনটির পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার অভিযানে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা হয়। সেই মামলার রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রতিক্রিয়ায় এ তথ্য জানিয়েছে। এ্যামনেস্টির পোস্টের লিংক এখানে।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, এক দশকের পর রাষ্ট্র কর্তৃক অভিযোগ ও নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর আজ ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলানকে কড়া আইসিটি আইনে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
অধিকার ২০১৩ সালে প্রতিবাদের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নথিভুক্ত একটি তথ্য-অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরে মামলাটি দায়ের করা হয়েছিল। অধিকার এবং এর নেতাদের ওপর রাষ্ট্রের নিরলস দমন ক্ষমতার কাছে সত্য বলার অধিকারের ওপর একটি আক্রমণ।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করা কোনো অপরাধ নয়। আমরা বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে খান ও এলানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলার রায় পড়ার সময় আদালতে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশের পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মতামত জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা রায় পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি। সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করলেও কোনো উত্তর না দিয়ে তারা বলেন, আমরা শুধু পর্যবেক্ষক হিসেবে আদালতে এসেছি।
এর আগে মামলার গত ২৪ আগস্ট যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ৭ সেপ্টেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন। কিন্তু রায় প্রস্তুত না হওয়ায় রায় পিছিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশ করে। পরে সমাবেশস্থলে রাত্রিযাপনের ঘোষণা দেয় সংগঠনের নেতারা। তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দিতে যৌথ অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই অভিযানে ৬১ জন নিহত হয় বলে দাবি করেছিল অধিকার। তবে সরকারের ভাষ্য সেই রাতের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। শাপলা চত্বরে অভিযানের পর ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন ডিবির তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল ইসলাম। তদন্ত শেষে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে আদিলুর ও এলানের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। এতে ৩২ জনকে সাক্ষী করা হয়। ওই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর মামলাটি বিচারের জন্য অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালে দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ন করে। পাশাপাশি তারা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে, যা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ (১) ও (২) ধারায় অপরাধ। একইভাবে ওই আসামিরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর টেষ্টা চালায় এবং সরকারকে অন্য রাষ্ট্রের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালায়, যা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫০৫ সি ও ডি এবং ৫০৫ এ ধারায় অপরাধ।
আদিলুর রহমান খান পেশায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিলেট ডিভিশনের আইনজীবী হিসেবে কর্মরত আছেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। আর পরিচালক নাসির উদ্দীন এলান অধিকারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে সাংবাদিকতা পেশায় জড়িত ছিলেন।




