জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে যাবে চীনসহ ২০টিরও বেশি দেশে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০:৫৩:১৫ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত চলতি বছরের শুরুর দিকে। বিপরীতে ২০২২ সালে চীনের জনসংখ্যা কমেছে ৮,৫০,০০০। ১৯৫৯-১৯৬১ সালের দুর্ভিক্ষের পর এই প্রথম জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে চীনের।
বর্তমানে চীনের ১৪০ কোটি জনসংখ্যার বিবেচনায় এই হ্রাসটি পরিমিত বলে মনে হতে পারে। তবে জনসংখ্যার এই হ্রাসের পরিসংখ্যান অব্যহত থাকলে ২১০০ সালের মধ্যে চীনের জনসংখ্যা ৮০ কোটিরও নিচে নেমে যেতে পারে বলে অনুমান করছে জাতিসংঘ।
অভিবাসন, দেশত্যাগ, মৃত্যু এবং জন্মহারের মাধ্যমে জনসংখ্যা ওঠানামা করে। চীনের পূর্ববর্তী এক সন্তান নীতি প্রয়োগ করা হয়েছিল ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এবং এর ফলে লিঙ্গ ভারসাম্যহীনতার কারণে সেখানে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে। চীন সরকার এখন গর্ভপাতকে নিরুৎসাহিত করে জন্মহার বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
১৮ শতকে প্রকাশিত ম্যালথুসিয়ান তার জনসংখ্যা বৃদ্ধির মডেলে বলেন, জনসংখ্যা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং দুর্ভিক্ষ, রোগ, সংঘাত বা অন্য কোনো দুর্যোগে মহামারি ঘটার আগ পর্যন্ত তা সম্পদের প্রাপ্যতাকে ছাড়িয়ে যায়।
১৯৬০-এর দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল অনেক উচ্চ। সেসময় বিভিন্ন দেশে জনসংখ্যা একটি বিরাট উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। তবুও বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে এবং চীনসহ অন্যান্য অনেক দেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধি না ঘটে উল্টো কমছে।
ল্যানসেট মেডিকেল জার্নালে ২০২০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০টিরও বেশি দেশে যেভাবে জনসংখ্যা কমছে তাতে ২১০০ সাল নাগাদ এসব দেশে জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে যাবে।
এ ছাড়া পিউ রিসার্চ থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে, ২১০০ সাল নাগাদ অন্তত ৯০টি দেশে জনসংখ্যা হ্রাস পাবে এবং ২০৭০ থেকে ২০৮০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা হবে ৯৮০ কোটি।
জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হওয়ায় ভয় পাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের সরকার এবং অর্থনীতিবিদরা। কারণ, জনসংখ্যা সঙ্কুচিত হতে থাকলে আজকের কর্মক্ষম জনশক্তি ৩০ বছর পর বার্ধক্যে চলে যাবে। তখন কর্মক্ষম জনশক্তির অভাব দেখা দেবে।
বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের এই নিম্নমুখিতার অন্যতম কারণ নারীর উর্বরতা হ্রাস। উর্বরতা এবং জন্মের হার পরিমাপ করে বিভিন্ন মেট্রিক্সে দেখায় একজন নারী তার জীবদ্দশায় গড়ে সাধারণত ২.১টি শিশুর জন্ম দেন।
বিশ্বব্যাপী নারীর উর্বরতার হার হ্রাসের জন্য দায়ী করা যেতে পারে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, পরিবার-পরিকল্পনা উদ্যোগ, গর্ভনিরোধের ব্যাপক ব্যবহার, উচ্চ শিশু মৃত্যুর হার, শিশু লালন-পালনের বর্ধিত ব্যয়, নগরায়ন, বিলম্বিত বিবাহ এবং শিক্ষাগত ও ক্যারিয়ারের কারণে সন্তান জন্মদানে দেরির মতো বিষয়গুলোকে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্যোগ নিয়ে বিপদে পড়েছে অনেক দেশ। সেসব দেশ আবার বিভিন্নভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে। সন্তান জন্মদানে নারীদের উৎসাহিত করা, অর্থ প্রদান, সন্তান লালন পালনের ব্যয়ভার সরকারিভাবে বহন করা সহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে এসব দেশ।
উত্তর-পূর্ব এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া, ইরান, দক্ষিণ এশিয়া মানুষের জন্মহার বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে।




