তীব্র ক্ষোভ তৃণমূল নেতাদের, নিশ্চুপ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০১:৪২ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: ছাত্রলীগের দুই নেতাকে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনের নির্মম নির্যাতনের ঘটনায় সংগঠনের তৃণমূল এবং অধস্তন নেতারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তবে তাদের কষ্টের প্রতিফলন নেই কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। এতে ক্ষুব্ধ নেতারা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।
এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগ প্রতিবাদলিপি দিয়েছে। তবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও রোববার রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো প্রকাশ্য অবস্থান জানানো হয়নি। জানা গেছে, এ ঘটনায় কোনো মামলার কথাও আপাতত ভাবছেন না তারা।
এ বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে রোববার দফায় দফায় ফোন করা হলেও তিনি উত্তর দেননি। সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান সমকালকে বলেন, ‘যথাযথ কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আশু পদক্ষেপ গ্রহণে আন্তরিকতার ঘাটতি দেখা গেলে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি। আমরা যদি দেখি, আইনি প্রক্রিয়ায় সঠিকভাবে তাঁর বিচার হচ্ছে বা কাজ হচ্ছে, তাহলে আমাদের কিছু করা ঠিক নয়।’
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এ অবস্থানে ঢাবির বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য আরিফ মনোয়ার মাহিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বই থেকে মুখস্থ করে নিজের কর্মীদের সামনে দু-চার লাইন এস্থেটিক কথা বলাকে রাজনীতি বলে না। রাজনীতি মাঠের জিনিস, রাজপথের জিনিস। কর্মীর বিপদে রাজপথে আসেন, না হলে দিন শেষে বক্তব্যে হাততালি দেওয়ার মতো কর্মীও থাকবে না।’
নির্যাতনের শিকার দু’জনই ঢাবির ছাত্র এবং হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ফলে ঢাবি ছাত্রলীগ নেতাদের ক্ষোভ স্বভাবতই বেশি।
মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখার কার্যনির্বাহী সদস্য মিনহাজুল ইসলাম লিখেছেন, ‘চর্যাপদের কবিরা যেমন দ্রোহ করে নাই, তেমনি এখনকার জারুল ফুলের কবিরাও করে না। খালি আহহা, উহহো করে গলা ফাটাইতে পারে।’
দৃশ্যত এসব ক্ষোভের জবাব দিতেই ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আকিব মুহাম্মদ ফুয়াদ লিখেছেন, ‘ঘটনা ঘটে, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া হয়। আবেগ, অনুভূতি, ক্ষোভ প্রকাশ পায়। সবই ঠিক। কিন্তু দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে ছাত্রলীগ লাগামহীন হতে পারে না, হবেও না। ছাত্রলীগ নিয়মতান্ত্রিক পথেই হাঁটবে।’
গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাঈম এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিমকে থানায় নিয়ে রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বেধড়ক পেটান। এ ঘটনায় নাঈম বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আছেন।
জানতে চাইলে শেখ ইনান বলেন, আমরা ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি আমাদের কাছে ঘটনার বিবরণ শুনে এডিসি হারুনকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছেন। পুলিশবিভাগীয় তদন্তের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, তারা বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছেন। অর্থাৎ বাংলাদেশ পুলিশও এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর। তারা অপরাধকে প্রশ্রয় দিতে ইচ্ছুক নয়।
তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক, লজ্জাজনক। বাংলাদেশ পুলিশ শিক্ষার্থীবান্ধব; সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পক্ষে কাজ করে। সে ক্ষেত্রে পুলিশ কর্মকর্তার বিচ্ছিন্ন কাজ পুলিশের জন্য লজ্জাজনক। এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের অনুরোধ জানাই।
ইনান বলেন, নাঈম চিকিৎসাধীন। মুনিমের বিষয়টিও মানসিকভাবে কষ্টকর। তারা যেন মানসিকভাবে ঠিক থাকে, সে বিষয়ে কাজ করছি। আর সবারই রক্তক্ষরণ হয়েছে। সেই রাগ ও ক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন-প্রতিবাদ করছে।
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করবেন কিনা– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইনানুগ বিষয় কতটুকু করা যায়, আমরা খতিয়ে দেখছি।
ছাত্রলীগের মানববন্ধন
হারুনের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। গতকাল দুপুরে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ কর্মসূচি পালিত হয়। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক আইয়ুব মোড়ল বলেন, হারুন নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ছাত্রদলের নিন্দা
ছাত্রলীগের দুই নেতাকে নির্মমভাবে মারধরের ঘটনায় নিন্দা ও হতাশা প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এ ঘটনাকে ‘একটি পুরোনো ছাত্র সংগঠনের অমর্যাদাকর অবস্থান’ আখ্যা দিয়েছে বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি। পাশাপাশি অতীতের সব পুলিশি নির্যাতনের দায়ে পুলিশ কর্মকর্তা হারুনকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে তারা। রোববার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম এ দাবি জানিয়েছেন।




