ভারতের সূর্য্য মিশন: আদিত্য এলওয়ান রওনা হল, কত দূর যাবে, কোথায় সেট হবে, কী করবে (ভিডিও)
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২:২৫:২৭ অপরাহ্ন
অনুপম বিজ্ঞান ডেস্ক: চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণের ইতিহাস অর্জনের পর এবার সূর্যের দিকে পাড়ি জমাল ভারতের সৌরযান আদিত্য এল-১। শনিবার ভারতীয় সময় সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পিএসএলভি-৫৭ রকেটে চেপে মহাকাশে পাড়ি দেয় ভারতের প্রথম সৌরযান।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাকাশে যাওয়ার পর স্যাটেলাইটটি রকেটের থেকে ইতোমধ্যে আলাদা হয়ে গেছে। পরিকল্পনামাফিক ১৪৮০ কেজি ওজনের মহাকাশযানটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়েছে। পৃথিবীকে ডিম্বাকার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করবে আদিত্য এল-১।
আদিত্য এল-১ সূর্য-পৃথিবী সিস্টেমের ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট ১ এর চারপাশে হ্যালো কক্ষপথে স্থাপন করা হবে যা পৃথিবী থেকে প্রায় দেড় মিলিয়ন কিমি দূরে অবস্থিত। এল-১ এর পৌছাঁতে ১২৫ দিন সময় লাগবে।
গণিতবিদ জোসেফ-লুই ল্যাগ্রেঞ্জের এই পয়েন্টটি আবিষ্কার করায় তার নামেই নামকরণ করা হয়েছে। ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টগুলো মহাকাশের এমন জায়গা অবস্থিত যেখানে দুটি বস্তুর মধ্যে মহাকর্ষীয় শক্তি একে অপরকে এমনভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে যাতে মহাকাশযান ন্যূনতম জ্বালানী খরচ করে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে থাকতে পারে।
সৌর পর্যবেক্ষণের জন্য ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান পয়েন্টগুলোর মধ্যে এল-১ বিন্দুকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। ভারত এই মিশনের নাম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা আদিত্য এর নামানুসারে দিয়েছে। আর এল-১ অর্থাৎ লাগ্রাঞ্জ পয়েন্ট-১ সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান যেখানে ভারতীয় মহাকাশযান স্থাপন করা হবে।
সুবিধাজনক এই অবস্থান থেকে আদিত্য এল-১ সূর্যকে আরও ভালভাবে দেখতে সক্ষম হবে। এমনকি সূর্যগ্রহণের সময় লুকায়িত বস্তুকণা সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা আরও উন্নত গবেষণা করতে পারবেন। এসব গবেষণা বিজ্ঞানীদের সূর্য কীভাবে পৃথিবীতে তাপ দেয়, আলোকিত করে এবং মহাকাশের আবহাওয়ার ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে সহায়তা করবে।
এই মিশনে কত খরচ হবে তা জানায়নি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে আনুমানিক ৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন রুপি খরচ হতে পারে।
সূর্যের কার্যকলাপ প্রসঙ্গে ইসরোর সাবেক বিজ্ঞানী মাইলস্বামী আন্নাদুরাই বলেন, ‘সূর্য ক্রমাগত বিকিরণ, তাপ ও বস্তুকণা এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের প্রবাহের মাধ্যমে পৃথিবীর আবহাওয়াকে প্রভাবিত করে। এটি মহাকাশের আবহাওয়াকেও প্রভাবিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্যাটেলাইট কতখানি কার্যকরভাবে কাজ করতে পারে, সৌরবায়ু কিংবা সৌরজড় স্যাটেলাইটের ইলেক্ট্রনিক্সকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং সেই সঙ্গে পাওয়ার গ্রিডগুলোকে কীভাবে ভেঙে দিতে পারে—এগুলো সম্পর্কে আমাদের সীমিত জ্ঞান রয়েছে। এই মিশনের মধ্য দিয়ে আমাদের জ্ঞান আরও প্রসারিত হবে।’
মহাকাশে ভারতের ৫০টিরও বেশি উপগ্রহ রয়েছে। এসব উপগ্রহ যোগাযোগ, আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য ও কীটপতঙ্গের উপদ্রব, খরা ও আসন্ন দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে সহায়তাসহ বিভিন্ন দেশকে গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা সরবরাহ করে। জাতিসংঘের অফিস ফর আউটার স্পেস অ্যাফেয়ার্সের (ইউএনওওএসএ) মতে, প্রায় ১০ হাজার ২৯০টি উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে রয়ে গেছে, যার মধ্যে বর্তমানে চালু রয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৮০০টি।
১৯৮১ সালে প্রথমবারের মতো সূর্য নিয়ে গবেষণা শুরু হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা নাসা ও ইউরোপীয় মহাকাশ বিষয়ক সংস্থা ইএসএ ‘৯০-এর দশ থেকে সূর্য নিয়ে গবেষণা করে আসছে।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাসা ও ইএসএ যৌথভাবে একটি সোলার অরবিটার উৎক্ষেপণ করে যা সূর্যকে খুব কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করছে এবং তথ্য সংগ্রহ করছে। বিজ্ঞানীদের মতে, এর গতিশীল ভূমিকা কীভাবে চালিত হয়, সেটি বুঝতে সহায়তা করবে।
নিচের ভিডিওতে সচিত্র প্রতিবেদন রয়েছে আদিত্য এলওয়ান এর মিশন বিষয়ে।