সিলেট: কবি ইমদাদের ‘পাখির জুতা নাই’ ও তাঁর ফেসবুকের পোস্টটি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ৭:৪৬:১৮ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: কবি মুহম্মদ ইমদাদ অসুস্থ। নতুন কাব্যিক আইডিয়ার এ কবির দুটি কবিতা নিচে দেওয়া হয়েছে। তিনি তাঁর নির্বাচিত কবিতার বই বিক্রি করে চিকিৎসার খরচ বের করবার আশা প্রকাশ করে একটি পোস্ট দিয়েছেন আজ ৩০ আগস্ট বুধবার ফেসবুকে। পোস্টটি হুবহু নিম্নরূপ—
বই বিক্রির বিজ্ঞাপন
.
আমার নির্বাচিত কবিতার বই #পাখির_জুতা_নাই – এর কাজ শুরু হলো।
আমি কিছু দিন ধরে অসুস্থ। এবং অসুস্থতার মধ্যেই, অসুস্থতার জন্যই এখনই বইটির কাজ শুরু করতে হলো। কারণ টাকা।
.
আমার বেশ কিছু টাকা দরকার। চিকিৎসার জন্য। প্রথমে ভেবেছিলাম আত্মীয়-স্বজন/বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে নিয়ে সেরে ফেলব। দুই-একজনের সাথে আলাপও হয়েছিলো। কিন্তু এই চিন্তা আমি বাদ দিয়েছি।
.
আমি লেখক। জীবনের বহুসময় আমি ব্যয় করেছি লেখালেখির জন্য। কিন্তু লেখালেখির দ্বারা আর্থিকভাবে বিন্দুমাত্র উপকৃত হইনি।
.
কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় মেটনোর পথ হিসেবে আমি এই বই বিক্রির কথাই ভাবতে পেরেছি। অন্য কোনো পথ নাই। বইটির শুভেচ্ছা মূল্য : ১০০০ টাকা। যারা আমার কবিতা ও আমাকে ভালোবাসেন তারা বইটি অগ্রিম বুকিং দিতে পারেন। মেসেঞ্জারে/কমেন্টে নাম-ঠিকানা লিখে দিতে পারেন। টাকা পাঠাতে পারেন (Md. Imdad Uddin) ০১৭১৭-৫৪১৩৮১ এই ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে।
.
বই প্রকাশিত হওয়ামাত্র বুকিং দাতাদের ঠিকানায় বই পৌঁছে দেয়া হবে।
.
বইটির প্রচ্ছদ করছেন রুবাইয়াত ইসলাম (আমার ‘অন্ধ পৃথিবীর জানলাগুলি’ বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী)।
.
বি.দ্র: কিছুদিন আগে আমার হার্ট এ্যটাক হয়। এখন তার সাথে আরো কিছু জটিলতা দেখা দিচ্ছে। তার জন্য উন্নত চিকিৎসার কথা ভাবতে হচ্ছে।
‘পাখির জুতা নাই’ কবিতাটি কবি মুহম্মদ ইমদাদের একটি অসাধারণ কবিতা। এই কবিতার নামেই হচ্ছে তাঁর নির্বাচিত কবিতার বইটি। কবিতাটি নিচে দেয়া হল-
কবি মুহম্মদ ইমদাদের আরেকটি কবিতা নিচে দেওয়া হল—
পৃথিবীর বাইরে থেকে আমি ফোন ধরতে পারি না
মুহম্মদ ইমদাদ
.
ট্রেন আসবে
তাই অপরিচিত ইস্টিশনে
বসে ছিলাম চারশো বছর
আরো চারশো বছর বসে থাকতাম
কারণ ট্রেন আসবে, আমি জানতাম
কিন্তু হাঠাৎ কে ঘোষণা করলো
‘ট্রেন আসবে না?’
আমি কোনোদিন ট্রেন না-আসার খবর জানতে চাই নাই
আসুক বা না-আসুক
চিরদিন নিজেরে বলে গেছি, ‘ট্রেন আসবে’
এখন অপরিচিত এই ইস্টিশনে আমি
কী কারণে থাকবো, কীসের অপেক্ষায়?
সকল যেতে চাওয়া লোক চলে গেছে
অন্য পথ অন্য পরিবহনের খোঁজে
খোঁজ পেয়েও গেছে
পৌঁছে গেছে
বৃষ্টিভেজা কামিনীফুলের কাছে
চালতাফুল
কামরাঙাফুল
নিমফুল
জলপাই ফুলের কাছে
আর বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে
আর আমি অর্থহীন ইস্টিশনে
‘কোথাও যাবার নেই’ এমন কয়েকটা মানুষের কাছে
যাদের আলাদা আলাদা কোনো নাম নাই
যাদের সকলেরই একই নাম ‘পাগল’
আমি পাগলের পাশে
পাগল হতে চেয়ে
পাগল হতে না পেরে
প্রথমে শহরে
পরে শহরের পাশের গ্রামে
পরে গ্রামের পাশের বিজনে
বসে থাকি
বসে বসে আম্মাকে ভাবি
ভাবি, কোন মুখে বাড়ি ফিরে যাই
যখন আমার বাড়ি ফিরতে লজ্জা লাগছে খুব
তখন দূর থেকে কারা আমারে দেখে ফেলে
আর ধরে নিয়ে যায়
চোর সন্দেহে মারধর করে
আমার জুতা খুলে নেয়
বলে, আমি জুতা চোর
আমার জামা খুলে নেয়
বলে, আমি জামা চোর
আমার চোখ খুলে নেয়
বলে, আমি চোখ চোর
একে একে তারা আমার
হাত, পা, জিব, চুল, নাক, কান
স্মৃতি ও স্বপ্ন খুলে নিয়ে
কোথায় যেন ফেলে দেয়
আমি জানি না!
পৃথিবীতে
আমার ছেলে আমাকে খোঁজে, পায় না
বউ আমাকে খোঁজে, পায় না
আব্বা আমাকে ফোন করেন
আম্মা আমাকে ফোন করেন
পৃথিবীর বাইরে থেকে
আমি ফোন ধরতে পারি না