রহস্যময় এক পারমাণবিক কণা নিউট্রিনো
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ আগস্ট ২০২৩, ৯:৩১:৫০ অপরাহ্ন
মানুষের শরীর দিয়ে লাখ লাখ নিউট্রিনো চলে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ টের পাচ্ছে না
অনুপম বিজ্ঞান ডেস্ক: বৈদ্যুতিক চার্জবিহীন, কম সক্রিয় পারমাণবিক কণা হলো নিউট্রিনো। এসব কণা ইলেক্ট্রন এবং প্রোটনের সাথে দুর্বলভাবে যোগাযোগ করে। এই কণার বিশেষত্ব হচ্ছে এগুলো যেকোনো পদার্থের মধ্য দিয়ে অবিকৃতভাবে চলাচল করতে পারে। যে বস্তুর ভেতর দিয়ে এগুলো চলাচল করে সেই বস্তু টেরও পায় না। এই যেমন- মানুষের শরীর দিয়ে লাখ লাখ নিউট্রিনো চলে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ টের পাচ্ছে না। তবে কোথা থেকে আসে এই কণাগুলো সেই রহস্য এখনও সমাধান করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। তবে এসব কণা যে মহাজাগতিক কণা সে বিষয়ে সকল বিজ্ঞানীই একমত। তাদের ধারণা, মহাজাগতিক ঘটনা, যেমন- ছায়াপথের সংঘর্ষ কিংবা ব্ল্যাক হোলের মধ্যে নক্ষত্রের পতনের ফলে এসব নিউট্রিনো জন্ম নিতে পারে।
২০১০ সাল থেকে নিউট্রিনো শনাক্তে কাজ করা আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরি প্রায়শই এ ধরনের কণার সন্ধান পাচ্ছেন। কিন্তু ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তারা এমন এক নিউট্রিনোর সন্ধান পান যেটি নিউট্রিনোর উৎস সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। এ কণার ব্যাপারে গবেষণা করে তারা জানান, এটি ৪ বিলিয়ন বছর আগে ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থেকে পৃথিবীর দিকে প্রবাহিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে নিউট্রিনো নিয়ে গবেষণা করে পদার্থে নোবেল পুরস্কার পান জাপানের তাকাআকি কাজিতা এবং কানাডার আর্থার বি. ম্যাকডোনাল্ড।
গবেষকেরা মনে করেন, পরমাণুর চেয়েও ক্ষুদ্রতর এই কণার উৎস-রহস্য সমাধান করা গেলে দূরবর্তী অঞ্চলে সংঘটিত বিভিন্ন মহাজাগতিক ঘটনার (যেমন: নক্ষত্রের বিস্ফোরণ ও কৃষ্ণগহ্বর) ব্যাপারে নতুন নতুন তথ্য জানা সম্ভব হবে।
আলো কিংবা অন্য বৈদ্যুতিক আধানযুক্ত কণার সঙ্গে নিউট্রিনোর পার্থক্য হচ্ছে, এই কণা তার মহাশূন্যের গভীর থেকে উৎপন্ন হয়ে সারা বিশ্বে পরিভ্রমণ করে বেড়াতে পারে, কোনো বস্তু এই কণা শোষণ করতে পারে না। আমাদের শরীরের ভেতর দিয়েও লাখ লাখ নিউট্রিনো চলে যায়, কিন্তু সাধারণ অবস্থায় এই কণার উপস্থিতি আমরা টের পাই না।
এই উচ্চশক্তিসম্পন্ন নিউট্রিনোর উৎস কী এবং কোথা থেকে আসে—সেই রহস্য জানতে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছেন গবেষকেরা।
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসনের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াং বাই জানিয়েছেন, উচ্চশক্তির নিউট্রিনোর উৎসের ধাঁধা অ্যাস্ট্রোফিজিকস বা জ্যোতির পদার্থবিদ্যার অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে আছে। আমরা প্রথমবারের মতো প্রমাণ পেয়েছি যে মহাজাগতিক একটি উৎস থেকে এই নিউট্রিনো উৎপন্ন হচ্ছে। আমাদের মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বর থেকেও আসতে পারে এই উচ্চ ক্ষমতার নিউট্রিনো।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, আমাদের পৃথিবীতেও প্রতিনিয়ত সূর্য থেকে নিউট্রিনো নামের অতি শক্তিসম্পন্ন কণার বর্ষণ চলছে। আমাদের এই সৌরজগতের বাইরে থেকে আসা নিউট্রিনো আরও কোটি কোটি গুণ বেশি শক্তিসম্পন্ন হতে পারে। গবেষকেরা এই উচ্চশক্তির নিউট্রিনোর উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তাঁদের ধারণা, উচ্চশক্তির নিউট্রিনো অত্যন্ত শক্তিশালী মহাজাগতিক ঘটনার ফলে তৈরি হতে পারে। ছায়াপথের সংঘর্ষ ও একত্র হওয়া, বিশাল ব্ল্যাকহোলের মধ্যে নক্ষত্রের পতন পালসার তৈরির মতো ঘটনায় নিউট্রিনোর জন্ম হতে পারে।
অবশ্য বস্তুর মধ্য দিয়ে খুব সহজে নিউট্রিনো চলে যেতে পারে বলে এর উৎস খুঁজে বের করার শনাক্তকারী যন্ত্র নির্মাণ খুব কঠিন।
দক্ষিণ মেরুতে অবস্থিত আইসকিউব নিউট্রিনো অবজারভেটরিতে এখন পর্যন্ত ৩৬ ধরনের উচ্চশক্তিসম্পন্ন নিউট্রিনো শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকেরা। অ্যান্টার্কটিকার এই অবজারভেটরি ২০১০ সাল থেকে নিউট্রিনো শনাক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
গবেষণা-সংক্রান্ত ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘ফিজিক্যাল রিভিউ ডি’ সাময়িকীতে।
গবেষকেরা দাবি করেছেন, তাঁদের এই গবেষণার ফলাফল অ্যাস্ট্রোফিজিকসের আরেকটি জটিল ধাঁধার সমাধান দিতে পারবে, বিশেষ করে উচ্চশক্তির মহাজাগতিক বিকিরণের উৎস বের করা সম্ভব হবে।