কেন জেগে উঠছে পিরামিড সেই বরফাচ্ছাদিত মহাদেশে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ৩১ জুলাই ২০২৩, ৯:৩১:০৭ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: দশ বিশটি গ্রাম না, দুই চারটা দেশ না, একটি মহাদেশ প্রায় সাড়ে ৩৫ মিলিয়ন বছর ধরে বরফাচ্ছাদিত। এখন উষ্ণতার পরশে পৃথিবীর সেই বিশাল অঞ্চলের বরফ গলতে থাকছে। হ্যাঁ সেটা এন্টার্কটিকা মহাদেশ।
৯০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর ঐ মহাদেশ সবুজ শ্যামল উষ্ণ ছিল। বর্তমান ইতালির মতো ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশ। ছিল পাহাড় নদী সাগর, ছিল বিস্তারিত ফসলের মাঠ। ১ কোটি ৪২ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের এ মহাদেশ পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ। এটি ইউরোপের চেয়ে ৪০ শতাংশ বড়।
এখন ঐ অঞ্চলের বরফ গলে বেরিয়ে আসছে পিরামিডের মতো পাহাড়। কেন ওগুলো পিরামিডের মতো? বিস্মিত গবেষকরা। মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ব্যবধান। আধুনিক মানুষ খুব কম জানে সেই সময় সম্পর্কে। বেশিরভাগই বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে।
90 million years ago, the fossils suggest, Antarctica was as warm as Italy and covered by a green expanse of rainforest.
স্যাটেলাইট ইমেজ থেকে দেখা গেছে বরফের মহাদেশে একটি রহস্যময় ত্রিভুজ কাঠামো, এটিকে বিশ্বের নতুন আশ্চর্য বলে অনেকে অভিহিত করেছেন। অনেকেই অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অ্যান্টার্কটিকায় পিরামিড কোথায় থেকে আসবে? অ্যান্টার্কটিকার এলসওয়ার্থ পর্বতমালার দক্ষিণ অংশে তোলা ছবিতে বিশাল পিরামিড আকৃতির কাঠামো দেখা গেছে।
কিছু অদ্ভুত চেহারার শিখর, যেগুলো মাটি থেকে উঠে আসছে বলে মনে হয়। বর্গাকার ভিত্তির প্রতিটি দিকে দুই কিলোমিটার পর্যন্ত পরিমাপ করে এটির সাথে মিশরের গিজার গ্রেট পিরামিডের মিল পাওয়া যায়।
এই সপ্তাহে ছবিগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে, অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্ববিদ নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন এই আবিষ্কার ঘিরে। একজন ব্যক্তি টুইট করেছেন, কিভাবে পিরামিডগুলি মিশর থেকে অ্যান্টার্কটিকায় স্থানান্তর হল ?
ইলুমিনাতির মতো কোনো গোপন জাতি এই পিরামিড তৈরির পেছনে আছে বলে মনে করছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ মনে করছেন এই কাঠামো মানবসৃষ্ট। কিন্তু ভূতাত্ত্বিক ডক্টর মিচ ডার্সির মতে, এগুলো আসলে একটি পাহাড়।
প্রায় ৯০ মিলিয়ন বছর আগে এন্টার্কটিকা যেরকম ছিল বলে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সেই তথ্যের ভিত্তিতে শিল্পীর তুলিতে আঁকা চিত্র।
পিরামিড-আকৃতির কাঠামোগুলো এলসওয়ার্থ পর্বতমালায় অবস্থিত, যেটি ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি লম্বা একটি পরিসর, তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, বরফের উপরে পাথুরে চূড়াগুলো তৈরি হয়েছে।
শিখরগুলো স্পষ্টভাবে শিলা দ্বারা গঠিত। এগুলোকে আসলে ‘নুনাটক’ বলা হয়, যা হিমবাহ বা বরফের উপরে আটকে থাকা শিলার চূড়া । এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয় যে, এই নির্দিষ্ট চূড়াটির আকৃতির সাথে পিরামিডের মিল রয়েছে। পাশাপাশি এটি কোনোভাবেই মানবসৃষ্ট নয়। এলসওয়ার্থ পর্বতমালা হলো অ্যান্টার্কটিকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা, যা মেরি বাইর্ড ল্যান্ডের রনে আইস শেল্ফের পশ্চিম প্রান্তে উত্তর থেকে দক্ষিণ ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৪৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। এগুলো চিলির অ্যান্টার্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত এবং ১৯৩৫ সালে লিঙ্কন এলসওয়ার্থ ডান্ডি দ্বীপ থেকে রস আইস শেল্ফ পর্যন্ত একটি ট্রান্স-অ্যান্টার্কটিক ফ্লাইটে যাত্রার সময় এটি আবিষ্কার করেছিলেন। এলসওয়ার্থ পর্বতমালার তাপমাত্রা গড়ে -৩০সেন্টিগ্রেডের কাছাকাছি থাকে। এখানে অভিযানের জন্য সেরা সময় নভেম্বর থেকে জানুয়ারি।
পৃথিবীর ভূপ্রকৃতি সব অঞ্চলে এক রকম থাকে না লাখ লাখ বছরের ব্যবধানে। বর্তমানের ভারত উপমহাদেশ পুরো অঞ্চল ছিল মহাসাগরে আবৃত। ভূমিকম্পে সৃষ্টি হয়েছে হিমালয় পর্বতমালার। এখন যেসব অঞ্চল শীতল, দূর ভবিষ্যতে সেসব অঞ্চল উষ্ণ হয়ে যেতেই পারে।