ছেলে-মেয়ে স্কুল থেকে ফিরলে কত নম্বর পেয়েছে তা জিজ্ঞেস করবেন না—শিক্ষামন্ত্রী
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৭:৩০ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: সরকার বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে মনোনিবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। তিনি বলেন, এক সময় বিজ্ঞানের দিকে কোনো নজর ছিল না, বিজ্ঞান পড়ার শখ ছিল না। সবাই শুধু জিজ্ঞেস করে- কি পড়ছ বিবিএ, কি পড়বে এমবিএ? আমি একেবারেই বিবিএ-এমবিএকে মন্দ বলছি না। তবে বিজ্ঞানের গুরুত্ব অপরিসীম।
রোববার (২৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ও আইটেসারেক্ট-এর উদ্যোগে ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড-২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা ভীতি দূর করতে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন কারিকুলাম চালু করা হয়েছে। ছেলে-মেয়ে স্কুল থেকে ফিরলে কত নম্বর পেয়েছ তা আর জিজ্ঞেস করবেন না বরং জিজ্ঞেস করুন, আজ নতুন কী কী শিখলে। তাদের (শিক্ষার্থী) আনন্দচিত্তে শিখতে দিন, প্রশ্ন বা পরীক্ষার মুখোমুখি করবেন না। জগতের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতেই হবে। সব রকমেরই মানুষ লাগবে। সেটা না হলে এই বিজ্ঞান প্রযুক্তির জগৎটা কীভাবে চলবে? আমাদের একটা জায়গায় গিয়ে থমকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদিও বিজ্ঞান চর্চা ছিল, বিজ্ঞান পড়ানো হতো। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন বিশেষভাবে বিজ্ঞানে উৎসাহী হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিলেন। তখন থেকে তিনি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে মনোনিবেশ করলেন।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার অধীনে সরকার গঠন হলো, তখন আবার শিক্ষার দিকে নজর দেওয়া হলো। আবার ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা ভিন্ন ধারায় চললাম। ৯৬ থেকে ২০০০ পর্যন্ত যে সরকার ছিল তখন সাবমেরিনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ ছিল। পরবর্তীতে তারা ভাবল এর মাধ্যমে সব তথ্য পাচার হয়ে যাবে। কি তথ্য ছিল আর কি পাচার হবে সে জন্য দেশের মানুষকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত করা হলো এবং আমরা অনেকদিন পিছিয়ে পড়লাম। এখন জিজ্ঞেস করলে খুবই লজ্জার কথা হবে কিন্ত সেটা মনে করাতে হবে। এ রকম আরও অনেক কিছু করেছে। যেমন এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হতে পারতাম, বলেছে আমরা হব না। আমাদের প্রায় একঘরে করে রাখা হয়েছিল। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে যা হয়।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্রিটিশরা এই উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল শোষণ করার জন্য। যেন তাদের তোষামোদ করবে, তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করবে সে রকম একটি শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল। তার আগেও কি এ ভূখণ্ডে শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না? আমাদের এ ভূখণ্ডে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ জ্ঞান অর্জন করেছে, দক্ষ হয়েছে সংগ্রাম করেছে।
উয়ারী বটেশ্বরের প্রত্নতত্বের নিদের্শনের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের এ নগরীতে আড়াই হাজার বছর আগে একটি সুপরিকল্পিত নগর জীবনযাপন ছিল। তাই যদি হয়, তাহলে যে জাতি আড়াই হাজার বছর আগে সুপরিকল্পতি নগর জীবনযাবন করেছে সেহেতেু এখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের একটি বড় চর্চা ছিল। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, মহাস্থানগড়, বৌদ্ধ বিহারগুলো তো জ্ঞানচর্চার স্থান ছিল। এছড়ার পুরোনো বড় মাদ্রাসাগুলোতেও জ্ঞানচর্চা হতো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের নতুন স্বপ্ন হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের ৪টি স্তম্ভের কথা বলেছেন- স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট সমাজ হবে। এসব আসলে করবে স্মার্ট নাগরিক। স্মার্ট নাগরিক হতে হলে আগে শিক্ষাটাকে স্মার্ট হতে হবে। সেই শিক্ষাটাকে স্মার্ট হতে হলে এবং জাতির পিতা যে স্বাধীন দেশের শিক্ষার কথা বলেছিলেন সেটা যদি করতে হয় তাহলে আমাদের ২০০ বছরের উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে চলবে না। সেজন্যেই আমরা শিক্ষার একটা রুপান্তর ঘটাব। এমনকি সারা পৃথিবীতেই রুপান্তরের কথা বলা হচ্ছে। সেজন্য আমরা আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম গ্রহণ করেছি।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য ও ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াডের আহ্বায়ক ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ ন্যাশনাল স্টিম (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, শিল্পকলা ও গণিত) অলিম্পিয়াডের আয়োজন করা হয়েছে। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে শিক্ষামন্ত্রী এ অলিম্পিয়াডের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছেন।




