গবেষণা: সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় লিভার ক্যান্সার ধরা পড়বে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুলাই ২০২৩, ৫:৫৫:৩৫ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: রোগীর সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই প্রাথমিক পর্যায়ের লিভার ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব বলে দাবি করেছে এইচকেজি এপিথেরাপিউটিক্স, আইসিডিডিআর,বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের কয়েকজন প্রখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীর সম্মিলিত একটি গবেষণা।
জানা গেছে, পরীক্ষাটি সুনির্দিষ্ট ডিএনএ মিথাইলেশন সিগনেচার পদ্ধতিতে ঝুঁকিতে আছে এমন ব্যক্তিদের (লিভারের রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং অ্যালকোহল গ্রহণকারী) লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে। ফলে এই ধরনের ক্যান্সারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অসুস্থতা ও মৃত্যুর হার অনেকাংশে কমে আসবে।
রোববার রাজধানীর হোটেল হলিডে ইনে আয়োজিত ‘সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এইচকেজি এপিথেরাপিউটিকস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং কানাডার রয়্যাল সোসাইটির ফেলো প্রফেসর মোশে জিফ। এ সময় হেপাটাইটিস এবং লিভার ক্যান্সার সম্পর্কিত বাংলাদেশ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বিএসএমএমইউর ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসএমএমইউ’র ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, লিভার ক্যান্সারের ব্যাপকতা বিশ্বের সব দেশেই দেখা যায় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ দেরিতে শনাক্ত হয়। ফলে এই রোগের চিকিৎসা একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় যা রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। তবে, উদ্ভাবিত এই পরীক্ষা আধুনিক সিকোয়েন্সিং ও মাল্টিপ্লেক্সিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে সাধারণ টিস্যু, রক্তের অন্যান্য নমুনা ও নন-লিভার ক্যান্সার টিউমার থেকে লিভার ক্যান্সার নমুনাকে আলাদা করে প্রচলিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা দূর করতে পারে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, ৫৫৪ জন অংশগ্রহণকারীকে গবেষণার আওতায় এনে এই পরীক্ষাটির মূল্যায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ছিল লিভার ক্যান্সার রোগী, নন-লিভার ক্যান্সার রোগী, ক্রনিক হেপাটাইটিস বি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি ও সুস্থ ব্যক্তি। ফলাফল হিসেবে পরীক্ষাটিতে লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে ৮৪ দশমিক ৫ শতাংশ সেন্সিটিভিটি ও ৯৫ শতাংশ স্পেসিফিসিটি দেখা গেছে।
এই গবেষণা ফলাফল প্রাথমিক পর্যায়ে লিভার ক্যান্সার রোগের শনাক্ত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
এ গবেষণা প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব বলেন, যদিও বিষয়টি নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা প্রয়োজন, তবুও লিভার ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়ের এই অগ্রগতি একটি বিরাট পদক্ষেপের প্রতিনিধিত্ব করে। সেই সঙ্গে এটি লিভার ক্যান্সার ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের ওপর রোগের প্রভাবকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
আইসিডিডিআর,বি’র বিজ্ঞানী ও গবেষণাটির প্রধান গবেষক ডা. ওয়াসিফ আলী খান বলেন, এই যুগান্তকারী অগ্রগতি লিভার ক্যান্সার শনাক্তকরণে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীব বাঁচানোর ক্ষেত্রে এটির সম্ভাবনা অসাধারণ। এর মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়সহ বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের দলের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। লিভার ক্যান্সারের ব্যাপকতা কমাতে এবং দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে বাংলাদেশে এই পরীক্ষা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে বলে আমি মনে করি।