মালয়েশিয়ার সারওয়াক প্রদেশে শ্রমিক পাঠাবে বাংলাদেশ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুলাই ২০২৩, ৯:২১:৫১ অপরাহ্ন
আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি শ্রমবাজার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দক্ষ কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় ২০২২ সালের ৮ আগস্ট বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় চালু হয়।
দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে মালয়েশিয়ার সারওয়াক রাজ্যে কর্মী নিয়োগে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা। যে রাজ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়ান, ফিলিপাইন ও পাকিস্তানি কর্মীরা কাজ করছে। সেখানে যাবে এখন বাংলাদেশি কর্মী। গত কয়েকমাস ধরে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা।
চলতি মাসের ১২ জুলাই রাজ্যের প্রিমিয়ার (রাজ্য সরকার প্রধান) দাতুক পাটিঙ্গি তান শ্রী আবাং জোহারি তুন ওপেং-এর সাথে বৈঠক করেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. গোলাম সারোয়ার।
বৈঠক শেষে হাইকমিশনার জানান, পারস্পারিক ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে এবং নিজেদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে বাংলাদেশ হতে পেশাভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক সদরদপ্তরে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই আগ্রহের কথা জানান এবং রাজ্য সরকার বাংলাদেশের সাথে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অর্থনৈতিক অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সারাওয়াক রাজ্যকে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে এবং এক্ষেত্রে হাইকমিশন তথা বাংলাদেশ সরকারের পূর্ণ সহযোগিতার বিষয়ে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন।
রাজ্যের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হতে পেশাভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ নিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণসহ অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক সকল বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহনের জন্য সারওয়াক রাজ্যের সরকার প্রধান তাঁর দপ্তরের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষিনকভাবে নির্দেশ প্রদান করেছেন।
বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় সারাওয়াক রাজ্যের সাথে ইতিবাচকভাবে কাজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের হাই কমিশনের পক্ষ হতে খুব শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে রাজ্য সরকারকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হবে। এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার এই অঞ্চলের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাইকমিশনার।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সারাওয়াক রাজ্যের স্টেট সেক্রেটারি দাতো শ্রী মোহাম্মদ আবু বকর মারজুকি এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) প্রণব কুমার ঘোষ।
হাইকমিশনার বলেন, চেস্টা করলে সারাওয়াকে সীমিত সংখ্যক হলেও কর্মী পাঠানো সম্ভব। সারাওয়াকের একটা স্টিল মিলে গত কয়েক মাস আগে ২০ জন কর্মী পাঠাতে সক্ষম হয়েছি। এই স্টিল মিলে বর্তমানে ৬৩ জন বাংলাদেশী কর্মী আছেন, তারা ভালো আয় করছেন। এই কোম্পানী বাংলাদেশ থেকে আরও কর্মী নিবে। তাছাড়া সারওয়াকের একটি নামকরা প্ল্যানটেশনে এক হাজার কর্মী নিয়োগের ডিমান্ড সম্প্রতি সত্যায়ন করেছে হাইকমিশন।
২০১৪ সালে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো সারওয়াক প্রদেশে কৃষি খাতে পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার বাংলাদেশিকে চূড়ান্ত করেছিল, কিন্তু তখন দুই সরকারের মধ্যকার জিটুজি চুক্তিতে মালয়েশিয়ার সরকারের আগ্রহের অভাবে শেষ পর্যন্ত পাঠানো যায়নি।
এদিকে বর্তমানে সারওয়াক প্রদেশে কতজন বাংলাদেশি রয়েছেন -এ বিষয়ে দূতাবাস বা মন্ত্রণালয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। অভিবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, সারওয়াক মালয়েশিয়ার একটি আলাদা স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ। এটি পাহাড়ি এলাকা। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকরা সেখানে অধিকার সংক্রান্ত সমস্যায় পড়তে পারে। তারা আরও বলছেন, সারওয়াক প্রদেশে বাংলাদেশ মিশনের কোনো কার্যালয় নেই। ফলে সেখানে শ্রমিকরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে দূতাবাসকে জানানো কঠিন হবে। ফলে শ্রমিকদের চাকরি এবং তাদের জন্য সম্পূর্ণ বীমা কভারেজ নিশ্চিত করার পরেই কাউকে সারওয়াক প্রদেশে পাঠানো উচিত।
দীর্ঘদিন মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবাসী ও কমিউনিটি নেতা রাশেদ বাদল বলেন, সারওয়াক প্রদেশ সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি এখানে মূলত পামওয়েল সংগ্রহের কাজ। এখানে কাজের জায়গাটা অত্যন্ত ঝূঁকিপূর্ণ এবং পরিশ্রমের। আবার অবৈধ হয়ে গেলে কম বেতনে কাজ করানো হয়। তাছাড়া সারওয়াক স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হওয়ায় সেখানকার প্রশাসনের সাথে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে আলাদা চুক্তি হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে হাইকমিশনার বলেন, চুক্তির বিষয়ে ভালো অগ্রগতি হয়েছে। শিগগরিই তা জানানো হবে।
এদিকে ২০২২ সালের ৮ আগস্টে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় উন্মুক্ত হওয়ার পর শুরুতে কর্মী যাওয়ার গতি কিছুটা কম থাকলেও চলতি বছরের প্রথম থেকেই পুরোদমে কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে।
গত ৭ জুলাই বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৬ জুলাই পর্যন্ত ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৬৯ কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে। বিএমইটির পরিসংখ্যান বলছে দেশটিতে যাওয়ার প্রক্রিয়াধীন কিংবা অপেক্ষায় আছে আরো ১ লাখ ৯৫ হাজার ৫২২ কর্মী।
এই খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সকল প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকলে ধারবাহিকভাবে বাকিদেরও শিগগিরই দেশটিতে পাঠানো সম্ভব।