গবেষণা: অ্যান্টি-এজিং থেরাপির দিকে আরো একধাপ
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০২৩, ৬:৩৯:৪৯ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: বয়োবৃদ্ধকালের অসহায় অবস্থায় কেউ যেতে চায় না। তবু বুড়োকাল আসে মানুষের জীবনে। মানুষ চায় এই বৃদ্ধকালীন অসহায়ত্ব প্রতিরোধ করতে। নিদেনপক্ষে হায়াত দেড় শ দুই শ বছর হলে খারাপ কি। বহুকাল আগে তো মানুষ ৯০০ বছরও বেঁচে ছিল পৃথিবীতে।
বার্ধক্য ঠেকাতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বাঁদরের দেহে ‘প্রোটিন ক্লোথো’ নামক ইনজেকশনের কার্যকারিতা দেখার পর এবার মানুষের দেহে এটি পরীক্ষা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করার পর বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দল আবিষ্কার করেছে- ২২ বছরের বেশি বয়সী ১৮টি রিসাস ম্যাকাকের দেহে ক্লথো প্রোটিন ইনজেকশন দেবার পর তাদের কাজের ক্ষমতা বয়সের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে।
গবেষকদের মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, সান ফ্রান্সিসকো, ওয়েইল ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা রয়েছেন, যারা অর্ধ দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রোটিন ক্লোথোর গবেষণায় মনোনিবেশ করেছেন। গবেষণার সময়, বাঁদরদের বারবার সহজ এবং কঠিন কাজ দেয়া হচ্ছিলো যাতে তারা সবচেয়ে সরাসরি পথটি কতটা ভালভাবে মনে রেখেছে তা পরীক্ষা করা যায় ।
প্রাণীরা চার ঘন্টা পরে কাজগুলি পুনরায় করেছিল। ক্লোথো ইনজেকশন দেবার পর, প্রোটিনের মাত্রা বেড়ে যায়। যদিও তারা সহজ কাজগুলির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ৬% গড় উন্নতি দেখিয়েছে, তারা কঠিন কাজটিতে প্রায় ২০% ভাল করেছে। বাঁদরদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বেড়েছে।
মজার বিষয় হলো, ইঁদুরের ট্রায়ালের তুলনায় বাঁদরদের ইনজেকশনের ডোজ তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল।ট্রান্সমেমব্রেন প্রোটিন ফ্যামিলির অন্তর্গত ‘ক্লোথো’ কে প্রায়শই উল্লেখ করা হয় আলফা-ক্লোথো বলে, ১৯৯৭ সালে এটি প্রথম চিহ্নিত করা হয়। এর কার্যকারিতা এখনও সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় নি। তবে এটি বার্ধক্যর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, ফসফেট এবং ইনসুলিন স্তরের মতো অনেকগুলি বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে।
গ্রীক দেবী ক্লোথোর নামে এই নামকরণ করা হয়েছে। এর ঘাটতি হলে ধমনী শক্ত হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ এবং ভাস্কুলার অবক্ষয়ের কারণ হতে পারে। পূর্বে গবেষণাগুলি দেখিয়েছে যে কীভাবে ক্লোথো ইঁদুরের দেহে জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়িয়েছে। কীভাবে ছোট থেকে বয়স্ক প্রাণীদের মধ্যে পেশীর পুনর্জন্ম ঘটেছে।
বর্তমান গবেষণার সহ-লেখকদের মধ্যে একজন, ডেনা দুবাল বাঁদরের পরীক্ষাগুলিকে বাস্তব-বিশ্বের অভিজ্ঞতার সাথে তুলনা করেছেন। তার মতে কর্মদক্ষতা বয়সের সাথে সাথে হ্রাস পায়। দুবাল, এখন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সান ফ্রান্সিসকোর ওয়েইল ইনস্টিটিউট ফর নিউরোসায়েন্সের একজন চিকিৎসক-গবেষক, বহু বছর ধরে ক্লোথোর জীবন-বর্ধিত সম্ভাবনা নিয়ে অধ্যয়ন করছেন।
প্রশ্ন হলো কীভাবে আমরা আমাদের ‘স্বাস্থ্যকাল বাড়াতে পারি?’ দুবালের মতে, এটি জীবনকাল বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত। কারণ যে জিনিসগুলি আমাদের দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে সেই জিনিসগুলো আমাদের ভালোভাবে বাঁচতেও সাহায্য করে। তবে ক্লোথোর সাথে জড়িত প্রক্রিয়াগুলি সম্পর্কে এখনও অনেক কিছু বিজ্ঞানীদের অজানা। দুবালের মধ্যে বাঁদরের দেহে সফল পরীক্ষার পর ক্লোথোর ব্যবহার মানব দেহে পরীক্ষার নিরীক্ষার পথ প্রশস্ত করবে। অ্যান্টি-এজিং থেরাপির দিকে আমরা আরো একধাপ এগিয়ে যাবো। গবেষণাটি নেচার এজিং জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।