যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত এখন অপরিহার্য যে কারণে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০২৩, ১১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যে মোদিকে প্রায় ১০ বছর যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছিল ওয়াশিংটন। সেই মোদিকেই আবার হোয়াইট হাউসে ডেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করল বাইডেন প্রশাসন।
বিশেষজ্ঞদের অনুমান, বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার পেছনে নরেন্দ্র মোদির অবদান সবচেয়ে বেশি।
মোদির ওয়াশিংটন সফরে যাওয়ার আগেই মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এই সফর দুই দেশের মধ্যে ‘প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব’ এগিয়ে নেবে। একই সঙ্গে ‘বিশ্বের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম গণতান্ত্রিক’ দুই দেশের মধ্যে একটি অনন্য সংযোগ স্থাপন করবে। সফর শুরু করার আগে মোদিও বলেছিলেন, ‘এই বিশেষ আমন্ত্রণ আমাদের দুই গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে অংশীদারিত্বের জোরালো ও প্রাণবন্ত প্রতিফলন।’
এই সফর হয়তো ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান মৌলিক অনেক সমস্যারই সমাধান আনবে না। তারপরও প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেলিকম, ভিসা, উৎপাদন ও অন্যান্য অনেক বিষয়ই মোদি ও বাইডেনের আলোচনা টেবিলে ছিল। যেসব খাতে দেশদুটি নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারবে।
১৪০ কোটি মানুষ নিয়ে জনসংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে থাকা ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি। তাই অর্থনীতি ও ভূরাজনৈতিক নানা কারণেই দেশটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাই ওয়াশিংটনে বাইডেন প্রশাসনের কাছে ভারত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, দিল্লি-ওয়াশিংটনের কাছে আসার মূল অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে চীন।
তবে ভারতের জন্য চিন্তার কারণ হতে পারে ওয়াশিংটন-বেইজিংয়ের সম্পর্কের সাম্প্রতিক পরিবর্তন। কারণ, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ভারত এখনও চীনকে টেক্কা দেয়ার জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় দেশ বলেই বিবেচিত হতে পারে।
এ বিষয়ে মার্কিন গবেষণা সংস্থা কার্নেগি এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস-এর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক প্রোগ্রামের পরিচালক মিলন বৈষ্ণব বলেছেন, ‘আশা করা হচ্ছে, ওয়াশিংটনে চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য একটি বর্ধিত কাঠামো তৈরি করার পরিকল্পনা চলছে। এবং এই বিবেচনায়, ভারত ক্রমেই ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত দিক থেকে এই কাঠামোর অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠছে।’
এর প্রমাণ মেলে ভারতকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়াড জোটে অংশীদার করা থেকে। এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত নানা মাত্রায় নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য শেয়ারিং, যৌথ সামরিক মহড়া ইত্যাদিও বেড়েছে।
ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে দেয়া সামরিক সহযোগিতাকে বেশ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। যার সবশেষ উদাহরণ হতে পারে: ভারতে মার্কিন প্রতিষ্ঠান জেট ইঞ্জিন তৈরি করতে যাচ্ছে। দুই দেশের এই সহযোগিতা নিঃসন্দেহে চীনকে একটি পরিষ্কার বার্তা দেয়।
পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক সাময়িকী ফরেন অ্যাফেয়ার্সে লেখা এক নিবন্ধে ভারতের সঙ্গে মার্কিন পরমাণু চুক্তির অন্যতম আলোচক অ্যাশলে টেলিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন ভারতে প্রচুর বিনিয়োগ অব্যাহত রাখলেও তাদের এমন কোনো ধারণা রাখা উচিত নয় যে, নয়াদিল্লি ওয়াশিংটনের সঙ্গে সব লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বে। বিশেষ করে ভবিষ্যতের সংকটের সময়; যেমন ভারত তাইওয়ান বিশেষ করে চীন তাইওয়ান আক্রমণ করলে ভারত সক্রিয়ভাবে মার্কিন পক্ষ নেবে এমনটা ভাবা উচিত হবে না ওয়াশিংটনের।