আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৩, ১:১৬:০৫ অপরাহ্ন
আর কয়েকদিন পরেই উত্থাপিত হতে যাচ্ছে আসন্ন ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট। আয় ব্যায়ের প্রাক্কলন হিসাব নিয়ে উত্থাপিত সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে প্রায় পৌনে আট লাখ কোটি টাকা। নির্বাচন পূর্ববর্তী বছরে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট হতে যাচ্ছে এটি। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রতিবারই বাজেট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। সে ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের এবারের বাজেট ভাবনা এবং মতামত তুলে ধরেছেন মো. মুরাদ হোসেন।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে: আসন্ন বাজেটের ব্যাপারে বেশ কিছু বিষয় বিবেচনায় আনা প্রয়োজন যেমন – বাংলাদেশের রপ্তানি কী হারে বাড়ছে, পাশাপাশি রেমিট্যান্সে কীভাবে উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে লক্ষ্য রেখে অগ্রসর হতে হবে। দেশে জিডিপির কত শতাংশ রয়েছে, সেজন্য বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা করতে হবে, যাতে এই সূচক কোনোভাবেই বিপজ্জনক মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে না পারে। অর্থনীতির চলতি হিসাবের ভারসাম্য রক্ষার সাথে সাথে এবারের বাজেট এমন হতে হবে যেন এ বছর চলতি হিসাবে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, আগামী বছর যেন সেটার পরিমাণ কমানো যায়। তাছাড়া রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে উন্নয়নের পূর্ব শর্ত তা নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই সেজন্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যে কোনো মূল্যে নিশ্চিত করতে হবে। আরও একটি বড় বিষয় হচ্ছে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতে অবশ্যই অনেক বেশি বাজেট রাখতে হবে কেননা শিক্ষা,গবেষণা ও প্রযুক্তি খাতের উন্নতিই দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত সমৃদ্ধি আনতে পারে যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে সকল কিছুতে।
ফরিদ হাসান
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষা, উদ্ভাবন ও গবেষণা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট প্রণয়ন করতে হবে: একজন শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করি, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং গবেষণা খাতে সবচেয়ে বেশি বাজেট প্রণয়ন করা দরকার। শিক্ষা খাতে দেওয়া বাজেটের মাধ্যমে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সম্ভব। উদ্যোগ ও উদ্ভাবনকে এগিয়ে নিতে সরকারের আগ্রহকে সাধুবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও বিশেষজ্ঞরা। তবে তরুণেরা মনে করেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগোতে হলে উদ্ভাবনকে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মানের শিক্ষার সুযোগ ও সুবিধা সরবরাহ, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক শিক্ষায় উন্নতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এবং শিক্ষায় বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কর্মশালা বিষয়ক প্রশিক্ষণে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। যে দেশ গবেষণার জন্য যত বেশি বিনিয়োগ করবে, সামনের দিনগুলোতে তারা হবে তত উন্নত।
সাদমান সাকিব
শেখ রেহানা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ
সকলের জন্য উদ্ভাবনী বাজেট নির্মাণ: দেশে কৃষি খাতে বাজেট অনুযায়ী কৃষিতে উন্নতি ও সাম্প্রতিক প্রযুক্তি প্রয়োগ করে কৃষকদের সমর্থন করার পাশাপাশি উন্নত বীজ, সার, প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ সরবরাহ করে উচ্চমানের ফসল উৎপাদন এবং বাজারে ভাল মূল্যে বিক্রি করতে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর সময় এখনই। বাংলাদেশের বিদেশী কর্মীদের সংগ্রহ এবং তাদের পারিবারিক সদস্যদের জীবনযাপনের জন্য রেমিট্যান্স খাতে বাজেট আবদ্ধ করে রেমিট্যান্স প্রাপ্তিতে তাদের আর্থিক সংস্থান উন্নতি করার জন্য প্রশিক্ষণ, উদ্যোগ, ব্যবসায়িক প্রশিক্ষণ প্রদান ও ব্যবসায় শুরু করার সমর্থন করতে হবে। নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ প্রবৃদ্ধির হার ৭.৯% এবং মূল্যস্ফীতির হার ৭.১% প্রাক্কলন করা দরকার। বাজেটের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে পণ্য ও সেবা ক্রয়, ঋণের সুদ পরিশোধ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, ভর্তুকি ও প্রণোদনায় বরাদ্দ ব্যয় সাপেক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৫ লাখ কোটি টাকা বাজেট বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। এছাড়াও এক্সপোর্ট ও রেমিট্যান্স বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নয়ন, আইএমএফ এর শর্ত অনুযায়ী ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ০.৫০% বাড়ানো যেতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা, কৃষি, রেমিট্যান্স, এবং বৈদেশিক খাতে সঠিক প্রতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টা গ্রহণ করে দেশের উন্নতি ও সামরিক উদ্যোগের পথ চালিয়ে যাওয়া হবে। এটি সকলের জন্য উদ্ভাবনী একটি সালিদ বাজেট নির্মাণ করতে সক্ষম হবে।
আফরোজা জান্নাত টুম্পা
সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ
কৃষি ও শিক্ষাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন হোক: দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪০ ভাগ এখনো কৃষিতে নিয়োজিত। দেশের কর্মসংস্থান, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য নিরসনে কৃষি খাতের অবদান এখনো অবিচল। সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেটে জোর দেওয়ার সাথে উন্নতির শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছে যেতে হলে জনশক্তি ও বিদ্যমান সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা খাতের বাজেটে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বরাদ্দ প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। সংখ্যা নয়, মান উন্নয়নের ব্যাপারে আমাদের শোরগোল তোলা উচিত। কারিগরি ও পলিটেকনিক্যাল স্কুলগুলোর উন্নয়নের দিকে আরও নজর দেওয়া উচিত। নিরক্ষরতার হার কমলেও উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার দিক থেকে সিংহভাগ মানুষ পিছিয়ে আছে। এমন বাজেট চাই যে বাজেটে নেওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপের সুফল এদেশের আপামর জনসাধারণের বিশেষত মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট দরিদ্র মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটে। চ্যালেঞ্জের অপর নাম সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জকে ভয় না করে সুযোগ হিসেবে সামনের দিকে পথ চলাই হবে সমীচীন। বর্তমান সরকার নিত্য জীবনে প্রয়োজনীয় অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বাজেটও মানুষকে নিরাশ করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।’
রিয়া মোদক
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়