খরা আক্রান্ত চা বাগান, নতুন কুঁড়ি নেই, উৎপাদন ব্যাহত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০২৩, ৬:৩৮:৫১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় শ্রমিকরা বাগানে চা তোলার কাজ বেশিক্ষণ করতে পারছে না। তাছাড়া অনাবৃষ্টির কারণে চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে না পারায় চা গাছে আসছে না নতুন কুঁড়ি। বৃষ্টির পরিবর্তে কৃত্রিম পানি সরবরাহের যে উৎসগুলো ব্যবহার হয় সেই লেক, পাহাড়ি ছড়াগুলোতেও নেমে গেছে পানির স্তর। তাপমাত্রার কারণে লাল মাকড়সার আক্রমণসহ পোকামাকড় বেড়েছে। নতুন পাতা না আসায় অনেক কষ্ট করে বাগানে ঘুরে ঘুরে চা পাতা উত্তোলন করছেন শ্রমিকরা। ফলে মৌসুমের শুরুতে অর্ধেকের কম উৎপাদন হচ্ছে চা বাগানে।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বেশীরভাগ চা বাগানের সেকশনে সবুজ পাতাগুলো সবুজতা হারাচ্ছে। চা বাগানে এই সময়ে নতুন কুঁড়িতে ভরে থাকার কথা থাকলেও খুব কম চা বাগানেই চা গাছের সবুজ কুঁড়ি দেখা গেছে। শ্রমিকরা প্রখর রুদ্রে চা বাগানে কাজ করছেন। কিছুক্ষণ কাজ করে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়ে ফের আবার কাজ শুরু করছেন। চা গাছে পানি দিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে কৃত্রিমভাবে পাম্প ও পাইপ লাগিয়ে পানি ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে। তবে অনেক বাগানেই লেক, পাহাড়ি ছড়ায় পানির স্তর নেমে গেছে।
শ্রীমঙ্গলের ক্লোনেল চা বাগানের ব্যবস্থাপক রনি ভৌমিক বলেন, আমরা এখন দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার কেজি চা পাতা উত্তোলন করতে পারি। কিন্তু এ সময়ে আমাদের সাড়ে ৪ হাজার কেজি চা পাতা উত্তোলন করার কথা ছিল। সেটা হচ্ছে না বৃষ্টি না হওয়া ও অধিক তাপমাত্রার কারণে চা বাগানে নতুন পাতা না আসায় উৎপাদন কমে গেছে। তাছাড়া চা বাগানের অনেক জায়গায় লাল মাকড়সার আক্রমণ হয়েছে। আমরা কৃত্রিম ভাবে চা বাগানে পানি দিচ্ছি।
এখানেও নানান সমস্যা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, অধিক তাপমাত্রা ও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। আমরা সাধারণত লেক, ছড়া ইত্যাদি থেকে পানি উত্তোলন করে চা বাগানে দিয়ে থাকি। আমাদের চা বাগানে পানির বড় উৎস মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরের পাশের পাহাড়ি ছড়া। এই ছড়ায় এখন পানি কমে গেছে। একঘণ্টা পাম্প চালালে পানি শেষ হয়ে যায়। আমরা চা বাগানে গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পানির এরকম সংকট আগে হয় নি। নতুন কুড়ি না আসা, পানির সংকট, লাল মাকড়সার আক্রমণ এখন প্রায় সব চা বাগানেই বিদ্যমান।
হামরার চা বাগানে এই রকম গরম আগে হইছে না। মাথার উপরে যে রইদ (রোদ) উঠে, পায়ের নিচে মাটিও গরম, বাতাস নাই। চা গাছের পাতা শক্ত হই গেছে। গরমে বাগানে থুরা কাজ করলেই হেরান হই যাই। বড় গাছের ছেমায় (ছায়ায়) বইয়া পানি খাই, পরে আবার কাজ আরম্ভ করি। আগে এই সময়ে ডেইলি ৫০-৬০ কেজি চা পাতা একাই তুলছি। এখন সারাদিনে ১৫ কেজি চা পাতা তুলতে পারি না। বাগানে পাতাই নাই। বাগানে ঘুরিয়া ঘুরিয়া পাতা তোলা লাগে। এক জায়গায় বেশী পাতা থাকে না বৃষ্টি না আইলে আমরার কষ্ট দূর হইতো না। আমরাও আর পাররাম না। চা বাগানের চা পাতা তুলতে তুলতে এই কথাগুলো বলছিলেন শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া চা বাগানের নারী শ্রমিক মিনি হাজরা। চা শ্রমিক মিনি হাজরার মতো অবস্থা সব চা শ্রমিকেরই।
ভাড়াউড়া চা বাগানের শ্রমিক সর্দার উজ্জ্বল হাজরা বলেন, চা বাগানে গরমের কারণে কাজ করা অনেক কষ্ট। রোদের কারণে একটু কাজ করেই শ্রমিকরা ক্লান্ত হয়ে যান। পানির তৃষ্ণা পায়। শ্রমিকরা আধা ঘণ্টা কাজ করে আধা ঘণ্টা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেয়, পানি খায়। এভাবে রোদ থাকলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পরবে।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে বুধবার দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ছিল ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বাংলাদেশ চা বোর্ড এর প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিট এর পরিচালক ড. এ কে এম রফিকুল হক বলেন, বৃষ্টি না হওয়া ও তাপামাত্রা বেশী থাকায় চা গাছ খাদ্য তৈরি করতে পারছে না। বেশী তাপমাত্রা চা বাগানের জন্য ভালো না। এ কারণে চায়ের কুঁড়ি বের হচ্ছে না। চায়ের উৎপাদন ধরে রাখতে চা গাছে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। চা বাগানে টি শেড লাগাতে হবে। লাল মাকড়সার আক্রমণ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।