যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ: দেড় যুগেও সম্মেলন হয়নি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০২৩, ১২:০৯:০৯ অপরাহ্ন
লন্ডন অফিস: বর্ষীয়ান নেতা সুলতান মাহমুদ শরীফ সভাপতি ও সৈয়দ সাজিদুর রহমানের ফারুক সাধারণ সম্পাদক, এ দুইয়ের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটির দেড় যুগ চলছে। অভিযোগ আছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বিশেষত, নেতৃত্বে নতুন মুখ না আসায় সংগঠনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সফরে এলেই নেতাকর্মীদের মধ্যে গুঞ্জন শোনা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন। কিন্তু প্রতিবারই নেতাকর্মীরা হতাশ হন, দাবী আর ফলপ্রসূ হয় না।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়েই চলছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। যেখানে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির চার বার কমিটি গঠন হয়েছে, বদল হয়েছে সাধারণ সম্পাদকসহ নানা পদ।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন যেখানে বিগত দেড় যুগেও কোনো সম্মেলন হয়নি। যদিও নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কোনো শাখা সংগঠন নয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রতি সংহতি জানিয়েই প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংগঠনগুলো চলে, তাই যুগপৎ সাংগঠনিক কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।
জানা যায়, ২০১১ সালের ২৯ জানুয়ারি লন্ডনের হিলটন হোটেলে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিল ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি। এছাড়া করোনায় কমিটির পাঁচ জন সহ-সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন। খালি হওয়া পদগুলো পূরণ করা হয়নি। অন্যদিকে, কমিটির কেউ কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যত কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি বহাল নেই।
সাধারণত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবার নিজে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন। তাঁর সিদ্ধান্ত ছাড়া কখনোই কমিটি হয় না। প্রধানমন্ত্রীর এবারের আগমন ঘিরেও একই রকম প্রত্যাশা ও উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটির বিষয়ে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নেতা-কর্মীদের কথা শুনবেন এবং সম্মেলনের বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবেন – এ প্রত্যাশা নেতা-কর্মীদের মাঝে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, দলের মধ্যে গণতন্ত্রের স্বার্থে সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়াটা জরুরি। দলের মধ্যে যোগ্য অনেকেই আছেন সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঢেলে সাজিয়ে দলের জন্য ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৬৫টি শাখা সংগঠনের মধ্যে গত ১৩ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি শাখার সম্মেলন করা হয়েছে। বাকীগুলোতে সম্মেলন না হওয়ায় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বন্দ ও স্থবিরতা বিরাজ করছে।
নেতাকর্মীদের অভিযোগ- একটি গ্রুপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ দেন না। তাদের মতে, নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানামুখী সমস্যা তুলে ধরতে পারতেন নেত্রীর কাছে। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত, দলের জন্য নিবেদিত মাঠের কর্মীদের নিয়ে নতুন কমিটি করা হোক।
ওদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে নতুন কমিটিতে কারা দায়িত্ব পেতে পারেন তা নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
নতুন সভাপতি হিসাবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্জ্ব জালাল উদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক আবুল হাশেম, ভাইস প্রেসিডেন্ট মজম্মিল আলী, বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি হরমুজ আলী, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী।
এছাড়া সুলতান শরীফ আরেক মেয়াদ বহাল থেকে যেতে পারেন বলেও ধারণা রয়েছে।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এতদিন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পদে তাঁর আর থাকার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যার ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে এখন যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ।
তবে দলটির শীর্ষ দুই পদে তুলনামূলক তরুণ এবং যারা সার্বক্ষণিক দলকে সময় দিতে পারবেন এমন সক্ষমদের নেতা-কর্মীরা চান বলে জানা গেছে। যাতে দলটি যুক্তরাজ্যে প্রাগ্রসর ভূমিকা রাখতে পারে।



