হিজাব আন্দোলনে বেপরোয়া সেই তাবাসসুম রাজ্যে প্রথম হলেন দ্বাদশ শ্রেণীতে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৪২:০৮ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে গত বছর স্কুলগুলোতে হিজাব নিষিদ্ধের পর অসন্তোষ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে গোটা রাজ্যে।
সেসময় দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ওই আন্দোলনের প্রধান মুখ হয়ে উঠেছিলেন ১৭ বছরের তরুণী তাবাসসুম শাইখ। তাকে নিয়ে দেশেতো বটেই, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতেও বহু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
ওই ঘটনার এক বছর পর আবারও সংবাদমাধ্যমের খবরে এলেন তাবাসসুম। তবে এবার ওই হিজাব আন্দোলনের জন্য নয়, সমগ্র রাজ্যের কলা বিভাগ থেকে প্রথম হয়ে সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি।
ভয়েস অব আমেরিকার খবরে জানানো হয়েছে, ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৩ পেয়ে কর্ণাটক রাজ্যে চলতি বছরের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কলা বিভাগে প্রথম হয়েছেন তিনি।
এই ফলাফলের সুবাদে পুনরায় সংবাদমাধ্যমের নজরে এসেছেন তিনি। সেই সঙ্গে কর্ণাটকের হিজাব আন্দোলন প্রসঙ্গেও যেনো নয়া মাত্রা পেয়েছে। বেঙ্গালুরুতে হিজাব আন্দোলনে তাবাসসুম ছিলেন আন্দোলনকারী মেয়েদের অন্যতম। প্রতিবাদে সেসময় স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত বদলান।
পরীক্ষার সাফল্য প্রসঙ্গে তাবাসসুম বলেন, সেসময় হিজাব নিষিদ্ধ করায় বাসায় বসে ছিলাম বহুদিন।
তবে শেষ পর্যন্ত বাবা-মায়ের একটি কথায় তার সিদ্ধান্ত বদলায়। তারা বলেন যে, পড়াশুনা বন্ধ করে দিলে ভবিষ্যতের প্রতি অন্যায় করা হবে। তাবাসসুমের বাবা আবদুল কাইয়ুম শাইখ পেশায় ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার। মা পারভিন গৃহবধূ। চার বছরের বড় দাদা আবদুল কালাম মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। তাবাসসুম জানিয়েছেন, বাবা-মা-দাদার পরামর্শে আমি স্কুলে ফিরে যাই। অবশ্যই হিজাব ছাড়া খুব খারাপ লাগছিল। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে হিজাব পরি, পোশাকটা আমার ভাল লাগে। একটা অধিকার জন্মে গিয়েছিল। হিজাব না পরে স্কুলে যেতে তাই খুব কষ্ট হয়েছে।
যদিও হিজাব পরার অধিকারের জন্য তার অনেক বন্ধুরাই স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। তবে তাবাসসুম মনে করেন প্রতিবাদের নামে পড়াশুনো ছাড়লে সিদ্ধান্তকারীদের উদ্দেশ্যই সফল হতো। তাই স্কুলে ফেরা এবং পরীক্ষার আগে সব ভুলে পড়ায় মন দেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছর কর্ণাটকের বিজেপি সরকার আচমকাই বারো ক্লাস পর্যন্ত হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে রাজ্যজুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের নামে মুসলিম সংগঠন ও ছাত্রীরা। বহু জায়গায় তা সাম্প্রদায়িক অশান্তির চেহারা নেয় কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি পাল্টা পথে নামে। তবে প্রতিবাদের মূল স্রোত হয়ে উঠেছিল মুসলিম ছাত্রীদের স্কুল বয়কট। হিজাব নিষিদ্ধ করে সরকার ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করেছে অভিযোগ তুলে অনেক বাবা-মা’ও মেয়েকে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন।
ওই ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে এখনও বিচার চলছে। তাবাসসুমের প্রশ্ন, একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কেন পোশাকের উপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকবে। শিক্ষা আমার অধিকার, ধর্মাচরণও অধিকার। কর্ণাটকে আসন্ন বিধানসভার ভোট। সেখানেও ফিরেছে হিজাব বিতর্ক। তাবাসসুম এবার কলেজে যাবেন, সেখানে ইউনিফর্মের কড়াকড়ি নেই। তবুও শঙ্কা রয়ে গেছে তার মনে। যে কোনো সময় বিশ্ববিদ্যালয়েও এই কড়াকড়ি চালু হতে পারে। তাই তিনি এখন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি নিয়ে পড়তে বিদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান।