মহাজনদের সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রায় নিরাশ প্রান্তিক তাঁতি
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪১:৫১ অপরাহ্ন
তাঁতে পর্যাপ্ত লুঙ্গি থাকা সত্বেও কর্মব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে না তাঁতপল্লীতে
মুরাদ হোসেন, পাবনা: ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে প্রতিবছরই কর্মব্যস্ত থাকে পাবনার তাঁতপল্লীগুলো। ভোর থেকে সারারাত চলে লুঙ্গি তৈরির কাজ। মহিলা পুরুষদের একসাথে দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে। কর্মচঞ্চলতায় যেন একদণ্ড বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ হয়না। কিন্তু সে ব্যস্ততা নেই বললেই চলে এবারের রমজানে।
বড় বড় মহাজনেরা এবার ঈদে সর্বনিম্ন লক্ষ্যমাত্রা ধরে লুঙ্গি সংগ্রহ করছেন পাবনার বিভিন্ন তাঁতপল্লী থেকে। এর প্রভাব মেটে তাঁতিদের উপর সবচেয়ে বেশি পড়েছে। ফলে নিরাশ হচ্ছেন প্রান্তিক তাঁতি, স্থানীয় ক্ষুদ্র মহাজনেরা।
বর্তমানে সুতার মূল্য অত্যধিক বৃদ্ধি, শ্রমিকের মজুরি, রং সহ অন্যান্য খরচ হিসেবে মেটে তাঁতের লুঙ্গির দাম অন্যান্য লুঙ্গির চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। মেটে তাঁতের একটি লুঙ্গির সর্বনিম্ন মূল্য যেখানে ৬৫০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি করছেন তৃণমূল মেটে তাঁতিরা সেখানে খটখটে/ পাওয়ারলুমের একটি লুঙ্গি সর্বনিম্ন ১৫০-২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো লুঙ্গি প্রসেস শেষে কয়েক হাজার টাকা দরে বিক্রি করেন শহরের বড় বড় মহাজনেরা।
ঈদুল ফিতরের সময় যাকাত হিসেবে লুঙ্গির চাহিদা সবসময়ই ভালো থাকে। লুঙ্গির দামের হিসেব করে বর্তমানে যাকাত দাতাদের চাহিদা পাওয়ারলুমের দিকেই বেশি গড়িয়েছে। অথচ এসব লুঙ্গির কদরও শেষ সময়ে এসে অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে।
এবারের ঈদে মহাজনেরা সর্বোচ্চ ৫০০ থেকে ৭০০ থান (১থানে ৪ পিস) লুঙ্গি সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁতিদের। রমজানের শেষদিকে এসে এ কথা শুনে নিরাশ হয়েছেন প্রান্তিক তাঁতিরা। ফলে চিন্তায় পড়েছেন মধ্যস্বত্বভোগী মহাজনেরা। একইসাথে পাবনার তিন উপজেলার মেটে ও পাওয়ারলুমের প্রায় দেড়-দুই হাজার থান লুঙ্গি তাঁতিদের ঘরে আটকা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন প্রান্তিক তাঁতি ও স্থানীয় মহাজনেরা।
পাবনার চাচকিয়া,গোপালপুর, ষাটগাছা,শিবপুরের মেটে তাঁতিরা জানান, ঈদের আগের সপ্তাহ এবং পরের তিন সপ্তাহ এসব লুঙ্গি নিতে চায়না মহাজনেরা। ফলে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা লুঙ্গি নষ্ট হওয়ার ভয়ে চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে প্রান্তিক তাঁতিদের।
এ বিষয়ে পাবনার কয়েকজন মহাজনদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, লুঙ্গি বিক্রি না করা গেলে তা সংগ্রহ করে আমরাই বিপদে পড়ে যাবো। মেটে তাঁতের ৮০’র লুঙ্গি খরচ বেশি থাকায় রমজানে সাধারণ মানুষ তা কিনতে চায় না। কলের তাঁতের লুঙ্গিও আটকা পড়ে যাবে ক্রেতাদের এমন অনীহায়।
প্রান্তিক তাঁতিদের থেকে কয়েক দফায় লুঙ্গি সংগ্রহ করে থাকেন স্থানীয় ক্ষুদ্র মহাজনেরা। পরে তা বড় বড় মহাজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। সেখানে প্রসেসিং, প্যাকিং, শ্রমিকের মজুরি এবং মহাজনদের লভ্যাংশ রাখতে গিয়ে যেকোন লুঙ্গির মূল্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যায়। ফলে দিন দিন চড়া মূল্যে কিনতে গিয়ে অনীহা দেখাচ্ছে সাধারণ ক্রেতারা।
তৈরিকৃত লুঙ্গি বিক্রি না হলে এবারের ঈদ হবে মলিন, অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাঁতি পরিবার, তেমনটাই শঙ্কা করছেন বড় বড় ব্যবসায়ীরা।