আজীবন মানুষের সেবায় থাকা একজন দলহীন প্রভাবশালী রাজনীতিক
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ১:৩০:৫৬ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: যে দেশে রাজনীতি করে নিজেকে রাজা বানানোর স্বপ্নে বিভোর অধিকাংশ প্রভাবশালী রাজনীতিক। সে দেশে ত্রিশ বছরের পুরোনা শার্ট আর সেলাই করা পেন্ট পরা একজন দলহীন প্রভাবশালী রাজনীতিক হতে পারা বিস্ময়কর ঘটনা। তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না কিন্তু সবাইকে ভালবাসতেন, মানুষের সেবা করার রাজনীতি করতেন। তিনি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
গতানুগতিক মতলবি চিন্তার বিরুদ্ধে রাজনীতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করে যাওয়া এক অনন্যসাধারণ জীবন ছিল তাঁর। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর ওষুধনীতিতে উপকৃত হয়েছেন, লক্ষ লক্ষ গরীব মানুষ তাঁর হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা পেয়ে বিপদমুক্ত হয়েছেন।
কোনো দলে যুক্ত না হলেও রাজনীতি সচেতন এই ব্যক্তি বলতেন— ‘আমি মানুষের রাজনীতি করি।’ এক সময় বিলেতে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজপুত্র, বর্তমান রাজা চার্লসের স্যুট বানাতেন যে টেইলর, সেই টেইলর বানাতেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর স্যুট। সেই লোকটি মানুষের সেবার রাজনীতি করলেন বছরের বছর ধরে সেলাই করা পেন্ট পরে। (সাক্ষাৎকার নিচে ভিডিও)
ডা. জাফরুল্লাহ ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা। ইংল্যান্ডে থাকার সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে প্রকাশ্যে পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে বিশেষ অনুমোদন নিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীকে বহনকারী যে হেলিকপ্টার হামলার শিকার হয়েছিল তাতে জাফরুল্লাহও ছিলেন।
জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়ে দেশের বহু রাজনৈতিক দল এবং প্রত্যেক সরকারের সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে তিনি রাজনীতিতে সোচ্চার থাকলেও কোনো দলীয় পদ-পদবি ছিল না তার।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পরিবর্তনে ভূমিকা থাকলেও সরকারের অংশ কখনো হননি ডা. জাফরুল্লাহ। স্বাধীনচেতা প্রতিবাদী মানুষ হিসেবেই তিনি সর্বাধিক পরিচিত। সাধারণ মানুষের স্বার্থে কথা বলতে গিয়ে তিনি কখনো সরকারের সমালোচনা করেছেন, আবার কখনো সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। একই আচরণ বিরোধী দলের প্রতিও ছিল তার।
বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শ পাওয়া জাফরুল্লাহ রাজনৈতিক অঙ্গনেও নানা ভূমিকা রেখে চলছিলেন। তবে এই সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিতি গড়ে উঠেছিল তার।
২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগবিরোধী দলগুলোকে এক মঞ্চে এনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এবং কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎকালীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকলেও কোনো পদে ছিলেন না জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি), গণঅধিকার পরিষদের মতো রাজনৈতিক দল গঠনে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভূমিকা থাকলেও তিনি এসব দলের কোনো পদপদবি গ্রহণ করেননি। তবে ভাসানী অনুসারী পরিষদের সহসভাপতি এবং পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কিছু দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে ওই সময় ভাসানী পরিষদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল না। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর কর্মকাণ্ড মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।
জনমনে ধারণা— ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিশেষ কোনো একটি দলের প্রতি দুর্বলতা ছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি বঙ্গবন্ধুর সরকার, জিয়াউর রহমানের সরকার, হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদের সরকার বা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি যে দলই সরকার গঠন করেছে প্রত্যেক সরকার এবং বহু রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সুসম্পর্ক স্পষ্ট ছিল।
মা, মাটি ও মানুষ; জীবনে এই তিন নীতি নিয়েই চলেছিলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আর তাই দুটি কিডনি নষ্ট হওয়ার পরও নানা সংকটে সমাধান খুঁজতে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। আজ বাংলাদেশ তাঁর জন্যে কাঁদছে।




