সিলেট: যে বধ্যভূমি ৫২ বছর পর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাচ্ছে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ মার্চ ২০২৩, ৩:২৩:২২ অপরাহ্ন
সিলেট অফিস: মুক্তিযুদ্ধের সময় একাত্তরে পাকিস্তানিদের বন্দিশালা বা টর্চার সেল ছিল সিলেটের ক্যাডেট কলেজ। আগে এর নাম ছিল সিলেট রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল।
সিলেট অঞ্চল থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে যাওয়া হতো এখানে। এরপর হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হতো পাশের পাহাড়ে। নাম না জানা অনেকেরই সমাধি আছে ওই পাহাড়ে। এখানে এখন গড়ে তোলা হয়েছে বধ্যভূমি। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই বধ্যভূমিতে শ্রদ্ধা জানানো হবে।
এ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের অনেকেই দীর্ঘ দিন পর এসে স্মৃতিটুকু পেয়ে আনন্দিত। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও সাংবাদিক অপূর্ব শর্মা জানিয়েছেন, সিলেট ক্যাডেট কলেজ সংলগ্ন বধ্যভূমিতে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যানে আজ মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রথমবারের মতো শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করা হবে। একাত্তরে সিলেটের অন্যতম এই বৃহৎ বধ্যভূমিতে স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সন্তান, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক সংগঠন এবং স্কুল, কলেজের পক্ষ থেকে নিবেদন করা হবে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সকাল থেকে সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতার বেদিমূলে আত্মউৎসর্গকারীদের নিবেদন করতে পারবেন পুষ্পার্ঘ্য। তিনি জানান, গত ৪ মার্চ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় এই স্মৃতি উদ্যানের।
৬৬ জন শহীদের নাম সংবলিত এই স্মৃতি উদ্যানটি সিলেট ক্যাডেট কলেজের পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। এদিকে মহান স্বাধীনতা দিবসে এই স্মৃতি উদ্যানে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান, সিলেট’-এর বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল মোহাম্মদ আব্দুস সালাম, বীর প্রতীক (অব), বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়া উদ্দিন আহমদ এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষক অপূর্ব শর্মা।
বাস্তবায়ন পরিষদের নেতারা ও গবেষকরা জানিয়েছেন, ক্যাডেট কলেজের ওই স্থানটি ছিল একাত্তরে সিলেটে নারকীয় হত্যার অন্যতম সাক্ষী। এখানে কম হলেও দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এতদিন এটি সালুটিকর বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর তরফ থেকে এই স্থানকে সিলেটের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর থেকে সে স্থানকে সংরক্ষণের নানা উদ্যোগ নেয়া হয়। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর চলতি বছরে এসে সেই স্থানে শহীদের স্মরণে তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি উদ্যান। যেখানে ঠাঁই পেয়েছে শহীদ হওয়া ৬৬ জনের নাম-ঠিকানাসংবলিত স্মৃতিফলক। গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ।
গবেষক অপূর্ব শর্মা দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়ে ওখানে নিহত শহীদদের নাম খুঁজে বের করেন। আপাতত ৬৬ জনের নাম পাওয়া গেলেও অপূর্ব শর্মার মতে এখানে অন্তত ২ হাজার শহীদ রয়েছে। অনুসন্ধান চালালে সব পাওয়া যাবে। তিনি সময় নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছেন বলে জানান। বাস্তবায়নকারীরা জানিয়েছেন, সিলেটের সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি ও গণকবরকে সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষণের জন্যই এক বিঘা জায়গার ওপর ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ স্মৃতি উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে নির্যাতনের পর মারা যাওয়া শহীদের নাম জানা গেলে পরবর্তী সময়ে স্মৃতিফলকে তাদের নাম যোগ করা হবে।