ইউক্রেনের কতটুকু এখন রাশিয়ার দখলে, আপডেট: ঘিরে ফেলেছে বাখমুত
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০২ মার্চ ২০২৩, ৩:১৭:৩০ অপরাহ্ন
অনুপম আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের স্বাক্ষর করা চুক্তিকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত গত বছরের অক্টোবরে। অনলাইনে এ আদালতের প্রকাশ করা নথিপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, খেরসন, লুহানস্ক ও জাপোরিঝঝিয়া, এই চার অঞ্চলকে গত শুক্রবার রাশিয়ার ভূখণ্ডের অন্তর্ভুক্ত ঘোষণা করে চুক্তিতে সই করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এই চুক্তি রুশ ফেডারেশনের সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উল্লেখ করে এক আদেশে এর বৈধতা দিয়েছেন দেশটির সাংবিধানিক আদালত।
ঐ চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে পুতিন ইউক্রেনের ৪ অঞ্চলের প্রায় ৯০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা রুশ ফেডারেশনে যুক্ত করেন। এ সময় তিনি বলেছিলেন, খেরসন, জাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বাসিন্দারা আজীবনের জন্য রাশিয়ার নাগরিক হয়ে গেলেন। তাঁরা যেকোনো মূল্যে নিজ দেশ রক্ষা করবেন। বলা হচ্ছে রাশিয়ার দখলে থাকা ইউক্রেনের অঞ্চল যুক্তরাজ্য দেশটির প্রায় অর্ধেক সমপরিমান ভূমি।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দোনেৎস্কের বাখমুত শহর থেকে পিছু হটার ইঙ্গিত দিয়েছে ইউক্রেনীয় বাহিনী। কয়েক মাস ধরে বাখমুতে রাশিয়া ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে তীব্র লড়াই হচ্ছে। তবে গত দুই সপ্তাহে রুশ বাহিনীর হামলার তীব্রতা এতটাই বেড়েছে যে, সেখান থেকে এখন কৌশলগত কারণে পিছু হটার পরিকল্পনা করছে ইউক্রেনের সেনারা।
বিশাল বাখমুত শহরটি রাশিয়ার দখলে এসে গেলে, পর্যবেক্ষকরা বলছেন এর আশেপাশের কয়েকটি শহর সহজে রাশিয়ার দখলে চলে যাবে। ফলে আরও বড় অঞ্চল রাশিয়ার অন্তর্ভূক্ত হবে।
কেন গুরুত্বপূর্ণ বাখমুত
পূর্ব ইউক্রেনের ছোট একটি শহর বাখমুতের দখল নিতে পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চেষ্টা করছে রুশ সেনা। রাশিয়ান পক্ষ খুব সাবধানে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলেও শহরটিকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষেরই ভারি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, ক্ষয়ক্ষতি হলেও শহরটির দখল নিতে পারা রাশিয়ার জন্য পরে লাভজনকই হবে। রাশিয়ার সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ভাড়াটে গোষ্ঠী ওয়াগনার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন শনিবার বলেছিলেন যে, তিনি তার বাহিনী এবং নিয়মিত রাশিয়ান সেনাবাহিনীকে নিয়ে ইউক্রেনের শহর বাখমুত দখল করতে চান কারণ এতে একটি ‘ভূগর্ভস্থ শহর’ রয়েছে, যেখানে সেনা ও ট্যাঙ্ক নিরাপদে রাখা যাবে।
তিনি বলেন, ‘কেকের উপর থাকা চেরি হল সোলেদার এবং বাখমুতের খনিগুলোর সিস্টেম, যা আসলে ভূগর্ভস্থ শহরগুলির একটি নেটওয়ার্ক। ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার গভীরতার এসব টানেলগুলো সেনাবাহিনীর একটি বড় দলকে ধারণ করার ক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি ট্যাঙ্ক এবং পদাতিক যোদ্ধা সেখান দিয়ে চলাচল করতে পারে।’
প্রিগোজিনের মতে, রাশিয়া বাখমুতের দখল নিতে পারলে তারা যুদ্ধে বিশেষ সুবিধা পাবে। সেখানে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ভূগর্ভস্থ কমপ্লেক্সে অস্ত্রের মজুদ রাখা হয়েছিল। তিনি জানান, এ এলাকার বিশাল লবণ এবং অন্যান্য খনির মধ্যে ১০০ মাইলেরও বেশি সংযোগ টানেল রয়েছে এবং একটি বিশাল ভূগর্ভস্থ কক্ষ রয়েছে, যেখানে একসময় ফুটবল ম্যাচ এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে যে প্রিগোজিন বাণিজ্যিক কারণে এই অঞ্চলে লবণ এবং জিপসাম খনির নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। তবে তারা তাদের কথিত ভূগর্ভস্থ সামরিক ব্যবহারের কোন উল্লেখ করেনি। প্রিগোজিন বাখমুতের দখল নেয়ার বিভিন্ন সুবিধার কথা উল্লেখ করেছেন, তিনি এটিকে অনন্য প্রতিরক্ষামূলক দুর্গের সাথে ‘একটি গুরুতর লজিস্টিক সেন্টার’ বলে অভিহিত করেছেন।
বাখমুত, যাকে রাশিয়া আর্টিওমভস্ক বলে, ইউক্রেনের সবচেয়ে তীব্র লড়াইয়ের কেন্দ্রবিন্দু এবং প্রিগোজিন শনিবার দাবি করেছেন যে, রাশিয়া বাখমুতের উপকণ্ঠে একটি কৌশলগতভাবে-গুরুত্বপূর্ণ বসতি দখল করেছে।
আপডেট: ঘিরে ফেলেছে বাখমুত রুশ বাহিনী
রুশ সেনারা বাখমুত শহর ঘিরে ফেলছেন। পাশের শহর চাসিভ ইয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নিয়ন্ত্রণ নিতে এখন ইউক্রেনীয় বাহিনীর সঙ্গে লড়াই চলছে। গতকাল বুধবার পূর্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার নিয়োগ করা এক কর্মকর্তা এ দাবি করেছেন। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কের রুশ-নিয়ন্ত্রিত অংশের প্রশাসক দেনিস পুশিলিনের ঘনিষ্ঠ ইয়ান গাগিন বলেন, ‘বাখমুত এখন কার্যত ঘেরা। আমাদের বাহিনী শহরের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলার কাজ গুটিয়ে আনছে। এখন চাসিভ ইয়ার-বাখমুত মহাসড়কে লড়াই চলছে।
এর আগে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বাখমুতের আশপাশের কয়েকটি এলাকা দখলের দাবি করে। এসব এলাকায় রুশ সেনাদের পাশাপাশি ভাড়াটে ওয়াগনার গ্রুপের সেনারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
গত বছরের মে মাসের পর রাশিয়া প্রায় ছয় মাস উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি ইউক্রেনে। এ সুযোগ দারুণ ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। খারকিভ ও খেরসন অঞ্চলের বহু এলাকা রাশিয়ার কাছ থেকে তারা ছিনিয়ে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছিল, শীত বাড়লে রাশিয়া আবার আক্রমণ শুরু করবে। এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি ইউক্রেনকে উন্নত ট্যাংক পাঠানোর ঘোষণা দেয়। এর পর থেকে ইউক্রেনে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী। এর মধ্যেই সোলেদার শহর দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী। দোনেৎস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের শক্তিশালী অবস্থান সোলেদার-বাখমুত এলাকায়। সোলেদারের পর বাখমুত ছিল রুশ সেনাদের লক্ষ্য। ইউক্রেনীয় সেনাদের পালানোর জন্য এখনো একটি রাস্তা খোলা আছে, সেটি দখলেই লড়াই চলছে এখন। ওই রাস্তা রাশিয়ার দখলে চলে গেলে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়বে বাখমুত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তা বলেছেন, ইউক্রেনের জন্য ২০০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তা সরঞ্জাম প্রস্তুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দূরপাল্লার রকেট, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার নানা সরঞ্জাম, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্রের মতো অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র। এ সপ্তাহেই সহায়তার ঘোষণা আসতে পারে।
এর মধ্যে অধিকাংশ অর্থই আসবে ইউক্রেনের জন্য তৈরি করা বিশেষ তহবিল ইউক্রেন সিকিউরিটি অ্যাসিস্ট্যান্স ইনিশিয়েটিভ নামের উদ্যোগ থেকে। এতে বাইডেন প্রশাসন তাদের অস্ত্রভান্ডার থেকে অস্ত্র দেওয়ার পরিবর্তে এ খাতের প্রতিষ্ঠান থেকে কিনে দেবে। এর মধ্যে রয়েছে বোয়িং কোম্পানির তৈরি করা বিশেষ বোমার মতো অস্ত্রও।
গতকাল ক্রেমলিন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা হিসেবে দেওয়া দূরপাল্লার রকেটে শুধু সংঘাত বাড়বে। এতে রুশ বাহিনীর লক্ষ্যে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কথা বলার কোনো পরিকল্পনা নেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের।
ইউক্রেনকে মার্কিন সহায়তা প্রসঙ্গে পেসকভ আরও বলেন, ‘এতে উত্তেজনা আরও বাড়বে। আমরা বিষয়টি দেখছি। এখন আমাদের বাড়তি প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিন্তু তাতে আমাদের লক্ষ্যের পরিবর্তন হবে না।’
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ার বাহিনী। মস্কোর পক্ষ থেকে একে বিশেষ সামরিক অভিযান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, রাশিয়ার নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষার জন্য ও মস্কোকে দুর্বল করতে পশ্চিমা প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে এ অভিযান জরুরি ছিল। তবে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা দাবি করে, ভৌগোলিক সীমা বাড়াতেই এ হামলা করেছে রাশিয়া।