চ্যাটজিপিটি কি? হাজার হাজার মেধাবীর চাকরি খাচ্ছে মেশিনের বুদ্ধি!
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ৫:৫৯:১০ অপরাহ্ন
অনুপম প্রযুক্তি প্রতিবেদক: বদল হচ্ছে দিন দুনিয়া। ভূপ্রাকৃতিক বদল, পরিবেশের বদল, থামানো যাচ্ছে না। মানুষের বুদ্ধির খবর কি? কয়েক ঘণ্টায় বই লিখে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। মেধাবীদের রাজত্ব কতদিন আর? কাগজ কলম ছাড়া লেখার কাজ তো হচ্ছেই সেই কবে থেকে। এখন লেখাটাও কমে যাচ্ছে কিবোর্ড চেপে। এখন ভিডিও বাজার গরম। মানুষ দেখতে আর শুনতে চায় বেশি। ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে মাস্তানি করছে ভিডিও কনটেন্ট। রোবটিক এ্যালগরিদম খেয়ে ফেলছে মেধাবী কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি।
এরিমধ্যে এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দিকে ঝুঁকছে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট হচ্ছে চ্যাটজিপিটি। এটি চালু করেছে ওপেনএআই। ওপেনআই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানি, যার একজন প্রতিষ্ঠাতা হলেন ধনকুবের ইলন মাস্ক।
আপাতত পাবলিক টেস্টিংয়ের জন্য এটির ব্যবহার উন্মুক্ত করা হয়েছে। এরইমধ্যে ইলন মাস্কের এই চ্যাটবুটে ব্যবহারকারীর সংখ্যা এক মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। যা হয়েছে চ্যাটজিপিটি উন্মুক্ত করার মাত্র এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে। পরিসংখ্যান বলছে মাত্র ৫ দিনে ১০ লাখ ব্যবহারকারী রেজিস্ট্রেশন করেছে এই চ্যাটবট প্লাটফর্মে।
চ্যাটবট হলো এক ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গঠন করা হয়। এটি একটি বড় ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল যাকে অসংখ্য ডেটা দিয়ে প্রশিক্ষিত করা হয়। ফলে কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই মানুষের মতো করে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে; অর্থাৎ ম্যাসেজের রিপ্লাই দিতে পারে।
চ্যাটজিপিটি এর জিপিটি-র পূর্ণরূপ হল Generative pre-trained transformer। এখানে জেনারেটিভ শব্দের অর্থ তৈরি করা, প্রি ট্রেন্ড অর্থাৎ প্রশিক্ষিত ট্রান্সফর্মার। চ্যাটজিপিটিতে ট্রান্সফরমার এমন একটি মেশিন লার্নিং মডেল, যা কোনো কিছুর বিষয়ে সহজেই বুঝতে পারে। চ্যাটজিবিটি হল আসলে একটি চ্যাটবট যা ওপেনআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। জিপিটি-৩.৫ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে এটি, যা আসলে একটি ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল।
২০১৫ সালে ইলন মাস্ক ও স্যাম অল্টম্যান শুরু করেছিলেন এই চ্যাটবট তৈরি করার কাজ। চ্যাট জিপিটি-র চ্যাটবটটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে যা আপনার যে কোনো প্রশ্নের উত্তর গুগলের চেয়ে ভালোভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে। সেদিক থেকে বলা যায়, গুগলের ঘুম কেড়ে নিয়েছে ইলন মাস্কের চ্যাটজিপিটি।
টেক ব্লগাররা একে গুগলের চেয়ে ভালো প্রযুক্তি বলছে। কারণ আপনি যখন গুগলে সার্চ করেন, তখন এটি আপনাকে গুগলের মতো অনেকগুলো লিঙ্ক দেখায় না। তার পরিবর্তে সঙ্গে সঙ্গেই সেকেন্ডের মধ্যে সঠিক উত্তরটি আপনার সামনে রেখে দেয়। চ্যাটজিপিটির রয়েছে আকর্ষণীয় কিছু ফিচার। রচনা লেখা থেকে শুরু করে গানের লিরিক্স লেখা, গল্প লেখা, এমনকি কবিতা লিখতেও নির্দেশ দেওয়া যাবে এই চ্যাটবটকে।
সম্প্রতি আমেরিকায় মাইক্রোসফট, গুগল, আমাজন, ফেসবুক, টুইটার, গ্যাপচ্যাট, সাউন্ড ক্লাউডের মত টেক কোম্পানিসহ গোল্ডম্যান স্যাকস, ডিরেক্ট টিভি, ভিমিও বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই করে আমেরিকানদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। কারণ এইসব কোম্পানিতে যারা কাজ করেন তাদের কেউ সম্ভবত বছরে ৬ ডিজিটের কম অংকের বেতন পান না।
ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে প্রকাশ, এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রযুক্তি এখন মানুষের বিকল্প হয়ে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়ায় থাকার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মীবাহিনীকে ছোট করে আনছে। কারণ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এ্যালগরিদম ব্যবহার করে যেমন টেক কোম্পানিগুলো মানুষ হায়ার করত, এখন সেই এ্যালগারিদম ব্যবহার করেই কর্মী ছাঁটাই করছে। সম্প্রতিকালের এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় এ্যালগরিদম ব্যবহৃত হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, সম্প্রতি গুগল যে ১২,০০০ কর্মী ছাঁটাই করেছে এ্যালগরিদম ব্যবহার করে, সেই কর্মীরা চ্যাটরুমে গিয়ে অভিযোগ করে যে, যে প্রক্রিয়ায় এ্যালগরিদম প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের ছাঁটাই করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিমূলক এবং ভ্রান্তিমূলকও। কারণ কিসের ওপর ভিত্তি করে এ্যালগরিদম সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাকে ফায়ার করা হবে, তা তারা জানে না। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গুগল জানায়, তারা এই ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় এ্যালগরিদম প্রক্রিয়া ব্যবহার করেনি। ছাঁটাই কর্মীরা যেহেতু দেখেছেন তাদের অনেক কর্মপন্থায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স টুল ব্যবহৃত হচ্ছে, সে কারণে তাদের এই ধারণা হয়েছে। আইএ কেবল মিলিয়ন কর্মচারীর এমপ্লয়মেন্ট সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করে। সেই সাথে এআই কেবল পরামর্শ দেয় কার জব ইন্টারভিউ নেয়া হবে, কাকে হায়ার করা হবে, কাকে প্রমোশন দেয়া হবে। এআই কোনো সিদ্ধান্ত দেয় না। তবে হিউম্যান রিসোর্সেস বিশ্লেষকরা বলছেন, তারা সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের হায়ারিং-ফায়ারিং প্রক্রিয়া গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স জব কাটের ব্যাপারে সিদ্ধান্তও দিচ্ছে। গত মাসে অর্থাৎ জানুয়ারিতে আমেরিকার ৩০০ কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্সেস কর্মকর্তাদের মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে ৯৮% প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের লে-অফের সিদ্ধান্ত দিয়েছে সফটওয়্যার এবং এ্যালগরিদম। তারা বলেছেন, এত বিরাট সংখ্যক কর্মী বাহিনীর ব্যাপারে তথ্য নিয়ন্ত্রণ এখন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়।
হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলের প্রফেসর জোসেফ ফুলারের মতানুসারে কেবল মাত্র সফটওয়্যারের পক্ষেই সম্ভব সঠিক ব্যক্তিকে সঠিক কাজে নিয়োগ এবং যিনি সঠিক নন তাকে লেঅফ করা। এ্যালগরিদম অনেক বড় কোম্পানির হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজারদের কাজ হালকা করে দিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, একসময় এ্যালগরিদম বিভিন্ন কোম্পানির কর্মী হায়ারিংএ সহায়তা করত। এখন তাদের ফায়ারিংএও সহায়তা করছে। ফলে ফায়ারিং এখন সহজ হয়ে গেছে। এ্যালগরিদমের কারণেই ২০২৩ ও ২০২৪ সালে আরো বিপুল সংখ্যক কর্মী লে-অফের দলে চলে যাবেন।
তবে এ সময়ের শীর্ষ চিন্তাবিদ, বিজ্ঞানী, ইতিহাসবিদ, দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বললেন এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি-
If students are relying on ChatGPT, Chomsky says it’s “a sign that the educational system is failing. If students aren’t interested, they’ll find a way around it.”
তিনি মনে করেন চ্যাটজিপিটি হল হাইটেক প্লেজারিজম, মানে মেধা চুরি। ৯৫ বছরের অসাধারণ জ্ঞানী চমস্কির গুরুত্বপূর্ণ আলাপ নীচে-