সংকটে মেটে তাঁতশিল্প
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ জানুয়ারি ২০২৩, ৯:২৩:২৫ অপরাহ্ন
মুরাদ হোসেন, পাবনা: তাঁতশিল্পে স্বনামধন্য জেলা পাবনা। মেটে তাঁতকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তাঁতপল্লীতে গেলেই শুনতে পাওয়া যায় তাঁতের খটখট শব্দ। নারী পুরুষ একসাথে করছেন ভারি ভারি কাজ। এ যেন প্রকৃতিরই অন্য রূপ। চর্যাপদের ভাষায় বলা হয়েছে, ‘তন্ত্রি বিকনহ অবরোমা চাঙ্গিরা’।
দেশে কয়েকটি জেলায় এখনো ছড়িয়ে রয়েছে তাঁতিসম্প্রদায়। নানান প্রতিকূলতায় অনেকে ছেড়েছেন আবার অনেকে এখনও আঁকড়ে ধরে আছেন পূর্বপুরুষের এ পেশা। তাদের কর্মক্ষেত্রও নিজ নিজ বসতভিটায়।
পাবনা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আটঘরিয়ার গোপালপুর, চাচকিয়া এবং ষাটগাছা গ্রামে গেলেই দেখা যায় তাঁতশিল্পের অনন্য নিদর্শন মেটে তাঁত এবং তাঁতিদের কর্মব্যস্ততা। এটা যেমন ঐতিহ্যের তেমনি হাজারো প্রতিকূলতা আর সংগ্রামের প্রত্যক্ষ দর্শন। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত থেকে রাত পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকে রঙ সুতোর কাজ।
তবে অক্লান্ত পরিশ্রম করেও ন্যায্য মূল্যায়ন হয়না তাঁতিদের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কাঁচামাল সংকটে শ্রমিক-তাঁতিদের অনেকেই ছাড়ছেন এ পেশা। গত পাঁচ বছরে মেটে তাঁত কমে দু’শতে এসে ঠেকেছে। তাঁতিদের শ্রম আর মহাজনদের মুনাফা সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি বা চলমান থাকলে তাঁতিদের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে ।
বর্তমানে দেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব অসহনীয় মাত্রায় বেড়ে চলেছে। যার প্রভাব তাঁতশিল্পেও পড়েছে। তাঁতিদের তাশুন-মাজন-মাড় দেওয়া, সুতা পেঁচানোর মতো কাজে যেখানে অনেক জায়গার প্রয়োজন হয়, সেখানে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে জায়গার সংকট হচ্ছে, তদুপরি কর্মক্ষেত্রের জায়গা কমে যাচ্ছে। এতেও অনেকে তাঁত-খুঁটি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁতিদের চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামালের যোগান এবং সেগুলোর মূল্য হ্রাস ও স্থিতিশীল করণ, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি, লুঙ্গির মূল্য বৃদ্ধি, তৈরি কাপড়ের নিয়মিত সরবরাহ ব্যবস্থা, মহাজনদের বাড়তি মুনাফা না নেওয়া, তাঁতি সমিতির সদস্যদের সংগঠিত করা ও তাঁতিদের উদ্বুদ্ধকরণ সহ বিভিন্ন বিষয় ও সমস্যার সমাধানে কাটতে পারে সংকট, রক্ষা পেতে পারে দেশের বিলুপ্তপ্রায় এই ঐতিহ্য।




