অতঃপর সেই ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন কী কারণে?
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:১০:৩৫ অপরাহ্ন
অনুপম প্রতিবেদক: ১৪ জানুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকায় আসছেন। তার ঢাকায় আসা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। বহুমাত্রিক আলাপ হচ্ছে রাজনীতির পরিমণ্ডলে চীনা-জাপানী গড়নের এ মার্কিন মানুষটির মিশন বিষয়ে।
ইতোমধ্যে তিনি যে বেশ প্রভাবশালী একজন মার্কিন মন্ত্রী, তা দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনায় এসেছে। লু শুধু সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়টি দেখে থাকেন। এর আগে যখন পিটার ডি হাস শাহীনবাগে গিয়েছিলেন এবং সেখানে ‘মায়ের কান্না’ সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন তিনি নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন। এই অভিযোগ তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে করেছিলেন এবং ওয়াশিংটনেও এ সংক্রান্ত একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সে সময় ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন এবং তার কাছে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রেক্ষিতে লু-এর ঢাকা সফর বিশেষ অর্থবহ বলে মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য তিনি ঢাকায় আসছেন বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে যখন অস্বস্তি, টানাপোড়েন ঠিক সেই সময় মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
একটি সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লু ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় আসবেন এবং ১৫ জানুয়ারি সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের উচ্চপর্যায়ের নেতা এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। সূত্র আরও জানায়, সফরকালে গণতন্ত্র, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, মানবাধিকারসহ ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার বিষয়গুলো বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় স্থান পাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লুর সফর নিয়ে এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি সমন্বয় সভা হয়েছে। ওই সভায় ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সফর সম্পর্কে আলোচনা হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, র্যাবের প্রতি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, রোহিঙ্গা সংকট এবং মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা তুলে ধরা হবে। এছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা, খাদ্য, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
লু ৩০ বছর যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে পররাষ্ট্র কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। তার নাম বাংলাদেশে বিশেষ আলোচনায় আসে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতা হারানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পাকিস্তানের রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ঘটনা ছিল তার ক্ষমতা হারানোর বিষয়টি। তখন ইমরান খান অভিযোগ করেছিলেন, তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার নেপথ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের একজন ছিলেন ডোনাল্ড লু। তখন পাকিস্তানের গণমাধ্যমে এ-ও বলাবলি হয়, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষ নেওয়ার মাশুল দিতে হয়েছে ইমরান খানকে। (Imran Khan claimed that Donald Lu was allegedly involved in the “foreign conspiracy” to overthrow his government through a no-confidence vote.)
ঢাকায় ডোনাল্ড লু-র মিশন সম্পর্কে জানা যায়, প্রথমত, তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে একটি সমঝোতা এবং সংলাপে নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং আগামী নির্বাচন নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ব্যক্ত করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।




