সরকার সতর্ক আরও নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:১০:১০ অপরাহ্ন
যদি নিষেধাজ্ঞা তাঁরা আটকাতে পারেন, তাহলে সেটা হবে কোনো কিছুর বিনিময়ে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে
অনুপম নিউজ ডেস্ক: জাতীয় নির্বাচন সামনে। এক বছর বা তার কম সময় হাতে। দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ যেকোনো সময় তীব্র হতে পারে। ওদিকে মার্কিন মুল্লুকের আরও নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না সরকার। আর যাতে নিষেধাজ্ঞা না আসে সেজন্যে নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা। এরিমধ্যে বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত সব রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারকে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সব মিশনপ্রধানকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গত ৩১ ডিসেম্বর। চিঠিতে সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও এর সঙ্গে কর্মরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসে ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর। এ নিষেধাজ্ঞাকে একতরফা হিসেবে বিবেচনা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চিঠির মাধ্যমে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘যে কোনো কূটনীতিকের মৌলিক কাজ হচ্ছে সংশ্নিষ্ট দেশের সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখা। তবে বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আরও ভিন্ন কাজের চাহিদা রয়েছে। আপনারা জানেন যে, আমাদের একটি এলিট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর একতরফা নিষেধাজ্ঞা এসেছে। আমাদের বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে, সরকার ও এর প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতি করতে সরকারি সংস্থা ও ব্যক্তিদের ওপর একই ধরন বা অন্য কারণে আরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এ কারণে নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে প্রস্তুত থেকে সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। সময়ে সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আপনাদের হালনাগাদ তথ্য ও নির্দেশনা দেবে।’
নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সরকার জানে নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়াটি। কার ওপর কখন নিষেধাজ্ঞা আসবে, কেউ বলতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্র সারাবছরই কারও না কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে।
তিনি বলেন, ১০ ডিসেম্বর আরও নিষেধাজ্ঞা আসছে বলে বিএনপি যে প্রচার চালিয়েছিল, তা ঠেকাতে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশনের পক্ষ থেকে দীর্ঘ চেষ্টা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা যে আসবে, তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তবে আগে থেকেই ওই দিন যেন নিষেধাজ্ঞা না দেওয়া হয়, তা নিয়ে তৎপরতা ছিল। কোনো নিষেধাজ্ঞায় যাতে কেউ রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে, সে চেষ্টাই করা হয়েছে। সেই সঙ্গে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে উজ্জ্বল করার জন্য লবিস্ট ও পিআর ফার্ম তো কাজ করছেই।
মার্কিন আইন দপ্তরের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ও পিআরের কাজ করেছে কমপক্ষে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নেলসন মুলিনস রিলে অ্যান্ড স্কারবোরো এলএলপি, বিজিআর পাবলিক রিলেশন, নুরনবার্গার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন, পোটোম্যাক স্কয়ার গ্রুপ ও আইস মিলার এলএলপি।
বর্তমান ও সাবেক কূটনীতিকরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা নতুন করে নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে জন্য দরকার দেশের ভেতরে সংস্কার। দেশের মানবাধিকার, জবাবদিহি ও সুশাসনের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার করলে কেউ নিষেধাজ্ঞা আরোপের সুযোগ পাবে না। দেশের অভ্যন্তরে সংস্কার না এনে তদবির করে নিষেধাজ্ঞা খুব বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। মিশনপ্রধানদের এ বিষয়ে খুব একটা করারও কিছু নেই। আর যদি নিষেধাজ্ঞা তাঁরা আটকাতে পারেন, তাহলে সেটা হবে কোনো কিছুর বিনিময়ে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে।
২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ বাহিনী র্যাব এবং এর সাবেক ও বর্তমান সাতজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ও পররাষ্ট্র দপ্তর। সাত কর্মকর্তা হচ্ছেন- বর্তমান পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান এবং র্যাব-৭-এর সাবেক অধিনায়ক মিফতাহ উদ্দীন আহমেদ।




