যে প্লাস্টিকের বোতলে পানি খাচ্ছেন তা বিষাক্ত কিনা দেখে নিন
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৫৭:২৯ অপরাহ্ন
অনুপম স্বাস্থ্য ডেস্ক: নরম পানীয় বা প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের বোতলগুলির ফাঁকা হওয়ার পরে সেগুলি নষ্ট করে দেওয়ার কথা বোতলের গায়েই লেখা থাকে। কিন্তু অনেকেই তা না করে বোতলগুলি ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য রেখে দেন।
এভাবে পুরনো প্লাস্টিক বোতল থেকে পানি পান না করতে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।
প্লাস্টিকের বোতলে পানি অথবা নরম পানীয় কিনে পান করেছেন। বোতল ফাঁকা হওয়ার পরে বোতল ফেললেন না। বরং পানি পান করার জন্য সেই বোতলই ব্যবহার শুরু করলেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, পানীয় বা নরম পানীয়ের এই ধরনের প্লাস্টিকের বোতলে পানি ভরে বার বার খাওয়া মানুষের শরীরের জন্য যথেষ্টই ক্ষতিকারক হতে পারে।
নরম পানীয় বা প্যাকেজড ড্রিঙ্কিং ওয়াটারের বোতলগুলির ফাঁকা হওয়ার পরে সেগুলি নষ্ট করে দেওয়ার কথা বোতলের গায়েই লেখা থাকে। কিন্তু অনেকেই তা না করে বোতলগুলি ভবিষ্যতের ব্যবহারের জন্য রেখে দেন।
একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিৎসক গৌতম ঘোষের দাবি, যত সময় যায়, এই ধরনের বোতলগুলির প্লাস্টিকের সঙ্গে পানির রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। যাকে বলা হয় ‘লিচিং’। পানির মধ্যে মেশে প্লাস্টিকের মধ্যে মিশে থাকা রাসায়নিক অংশ। সেই পানিই পান করেন মানুষ। সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলেও এই লিচিং-এর ফলে মানুষের দেহে ক্যানসারের মতো রোগ হওয়ার আশঙ্কাও পুরোপুরি অমূলক নয় বলেই দাবি করেছেন ওই চিকিৎসক।
শুধু পুরনো প্লাস্টিকের বোতলে জল পান করার ক্ষেত্রেই নয়, বরং নতুন পানির বোতল কেনার সময়ও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাঁদের পরামর্শ, রোদে বা খোলা জায়গা রাখা পানির বোতল না কিনে দোকানের ভিতরে রাখা রয়েছে, এমন পানির বোতল কেনাই শ্রেয়। কারণ নতুন পানির বোতল হলেও একটানা রোদ লাগার ফলে সেই বোতলের ভিতরেও লিচিং বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকে।
আর বাড়িতে বা বাড়ির বাইরে পানি পানের জন্য বিশেষ ধরনের প্লাস্টিকের জলের বোতল বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। তুলনায় একটু দাম বেশি হলেও, সেই বোতলে পানি ভরেই পান করা উচিত।
দেখবেন, প্রতিটা প্লাস্টিকের জিনিসের গায়ে ত্রিভুজাকৃতির রিসাইকেল বা পূনর্ব্যবহারযোগ্য প্রতীকের মধ্যে একটি নম্বর থাকে।
১ থেকে ৭ পর্যন্ত নম্বরের কোনও একটি এই প্রতীকের মধ্যে থাকে। আর প্রতিটা নম্বরই আলাদা অর্থ বহন করে। কোন নম্বর থাকলে কী হতে পারে তা দেখে নিন।
নম্বর ১: ত্রিভুজাকৃতি প্রতীকের মধ্যে যদি ১ লেখা থাকে, তার অর্থ সেটা পলিইথিলিন টেরেফটালেট দিয়ে তৈরি। সাধারণত জলের বোতল, বিভিন্ন কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল এই রাসায়নিক দিয়ে তৈরি হয়। কোনও বোতলে ১ লেখা থাকলে তা নিরাপদ হিসেবেই গণ্য হয়। তবে তা মোটেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয়। কারণ এই বোতলে সুক্ষ ছিদ্র থাকে। ফলে খুব সহজেই ব্যাকটেরিয়া ঢুকে যেতে পারে।
নম্বর ২: যে সমস্ত প্লাস্টিকের বোতল অস্বচ্ছ পলিইথিলিন দিয়ে তৈরি, তাতে ২ নম্বর লেখা থাকে। ডিটারজেন্ট বোতল, দুধের বোতল লক্ষ্য করলে দেখবেন, তাতে ২ লেখা থাকে। এই নম্বরের অর্থ নিরাপদ। কারণ তাতে ব্যাকটেরিয়া তৈরি হওয়ার আশঙ্কা খুব কম। তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য নয় এটাও।
নম্বর ৩: তেলের বোতল, কলের পাইপের মতো প্লাস্টিকে ৩ নম্বর লেখা থাকে। এগুলো খুবই ক্ষতিকারক। লক্ষ্য রাখবেন, উনুনের পাশে যেন একেবারেই এই প্লাস্টিক না থাকে। বিশেষ করে মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মধ্যে ভুল করেও এই প্লাস্টিক ঢোকাবেন না। এটা আপনার বা আপনার পরিবারের জন্য বিষ। এই উপাদান রক্তে মিশলে দেহে হরমোনের ভারসাম্য পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়।
নম্বর ৪: উপাদান লো ডেনসিটি পলিইথিলিন। সাধারণত এগুলো নিরাপদ এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্যও। অর্থাৎ একবারের বেশি ব্যবহার করা যেতেই পারে।
নম্বর ৫: ওষুধের বোতল, কেচআপের বোতল বা সিরাপের বোতল যেগুলো পলিপ্রোপাইলিন দিয়ে তৈরি, তার গায়ে নম্বর ৫ লেখা থাকে। এগুলো সুরক্ষিত এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য।
নম্বর ৬: পলিস্টাইরিন বা স্টাইরোফোম দিয়ে তৈরি প্লাস্টিকের দ্রব্যে নম্বর ৬ লেখা থাকে। এই বোতল থেকে ক্ষতিকারক স্টাইরিন নির্গত হয়। যা থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই ৬ নম্বর লেখা প্লাস্টিকের দ্রব্য ব্যবহার বন্ধ করা উচিত।
নম্বর ৭: আইপড, কম্পিউটার, খাবারের কন্টেনার, বাচ্চাদের ফিডিং বোতল যে উপাদান দিয়ে তৈরি সেগুলো নম্বর ৭-এর ক্যাটেগরিতে পড়ে। এগুলো সাধারণত ক্ষতিকারক বিসফেনল এ দিয়ে তৈরি। যা থেকে স্নায়ুর সমস্যা দেখা দেয়। বাচ্চাদের ফিডিং বোতল কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া জরুরি তাতে কী নম্বর লেখা রয়েছে।