আইএমএফের পরামর্শ মানতে সম্মত, নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ ২৪ বিলিয়নে নামবে
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:৪৭:২৪ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগের মধ্যেও সংকট যায়নি। নতুন এলসি কমলেও আগের দায় পরিশোধের চাপ রয়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। এর মধ্যে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকু) ১১২ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরও কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নামতে পারে। গত বুধবার রিজার্ভ ছিল ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলারের কম। অবশ্য আইএমএফের পরামর্শ মেনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে রিজার্ভের হিসাব করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ। এতে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
সঞ্চয়ের পতন ঠেকাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, জাইকাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সম্প্রতি এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রতিশ্রুত ২৫ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে। নতুন বছরে আইএমএফের প্রতিশ্রুত ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ ছাড় শুরুর আশা করা হচ্ছে। তবে সংস্থাটি থেকে ঋণ নিতে বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার করতে হবে। শর্তের অন্যতম হলো- আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রিজার্ভের হিসাব করতে হবে। বিশেষ করে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলে জোগান দেওয়া ৭ বিলিয়ন ডলারসহ বিভিন্ন তহবিলে দেওয়া ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এতে সম্মত হয়েছে। সে বিবেচনায় চলতি সপ্তাহে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইডিএফের বিকল্প একটি বড় তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুনভাবে গঠন করা তহবিল থেকে রপ্তানিকারকদের ডলারের বিকল্প হিসেবে অনেক কম সুদে টাকায় ঋণ দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ইডিএফের আকার কমিয়ে যে ডলার ফেরত আসবে তা রিজার্ভ হিসেবে দেখানো হবে। এরই মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রায় গঠিত গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের বিকল্প টাকায় একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া অর্থ পাচার ঠেকাতে আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং এবং ওভার ইনভয়েসিং ঠেকানোর চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া বৈধ চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়ানো, রপ্তানি আয় ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সংশ্নিষ্টরা জানান, অনেক ব্যাংকের কাছে এখন আমদানি দায় পরিশোধের মতো প্রয়োজনীয় ডলার নেই। যে কারণে ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলতে চাচ্ছে না। এ সময়ে সরকারি এলসির দায় মেটাতে কোনো ব্যাংক যেন ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সালের শেষ কর্মদিবস গত বৃহস্পতিবার ১৪ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে ২০২২ সালে বিক্রি করা হয়েছে ১ হাজার ২৬১ কোটি ডলার। এর মধ্যে শেষ ছয় মাস তথা জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৭৪৭ কোটি ডলার। ফলে ডলারের ওপর সৃষ্ট চাপ কমবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
আকু হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তানের মধ্যকার লেনদেনের দায় পরিশোধ করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংশ্নিষ্ট দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর সুদসহ আমদানির অর্থ পরিশোধ করে। ইরানের রাজধানী তেহরানে আকুর সদরদপ্তর। দায় পরিশোধের মতো রিজার্ভ না থাকায় গত অক্টোবরে আকু থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে চরম আর্থিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে ২০১৭ সালের ২২ জুন। এরপর থেকে করোনার প্রভাব শুরুর আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামার মধ্যে ছিল। করোনার প্রভাব শুরুর পর বিশ্ববাজারে সুদহার অনেক কমে আসে। তখন বিশ্বের অনেক দেশ বিদেশি ঋণ কমালেও বাংলাদেশ ব্যাংক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়। ২০২১ সালের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে এমন পথ বেছে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ সালের আগস্টে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর ছাড়িয়েছিল। তবে করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেশিরভাগ জিনিসের দর বেড়েছে। এরপর রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ ছিল ৪৬ দশমিক শূন্য ৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের জুন শেষে ৪১ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। গত এক বছরে ১৩ বিলিয়নের বেশি কমে এ পর্যায়ে নেমেছে।