দেশের আট বিভাগীয় শহরে বসছে ৪ হাজার তদন্ত প্রযুক্তি ক্যামেরা
অনুপম নিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ২:২৫:১১ অপরাহ্ন
অনুপম নিউজ ডেস্ক: দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তকাজ আরও সহজ করতে আট বিভাগীয় শহরের বিভিন্ন স্থানে বসছে নতুন ‘তদন্ত প্রযুক্তি ক্যামেরা’।
এসব ক্যামেরার সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, চেহারা চিহ্নিতকরণ, গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তিসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা। রাতে কোনো অপরাধ ঘটলে সহজেই অপরাধীদের চিহ্নিত করতে পারবে পুলিশ ও র্যাব। তা ছাড়া যেকোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে তাৎক্ষণিক শব্দ আসবে মনিটরিং রুমে। ইতিমধ্যে আমেরিকা ও জাপান থেকে ক্যামেরা কেনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে অন্তত ৪ হাজার ক্যামেরা স্থাপন করা হবে বলে পুলিশের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে।
এদিকে, পুরো ঢাকায় এখনো ১ হাজার ৮৭৫টি সিসি ক্যামেরা সক্রিয় আছে। অন্যান্য শহরে সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলোর মান ভালো নয়। তারপরও ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে। চাঞ্চল্যকর একাধিক হত্যাকাণ্ড, অপহরণ ও ছিনতাইয়ের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করছে পুলিশ। তদন্তকাজে সহায়ক ভূমিকা পালন হচ্ছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন। তারা বলেছেন, রাতে সংঘটিত অপরাধগুলো ক্যামেরার ফুটেজে ভালো দেখা যায় না। নতুন প্রযুক্তিযুক্ত ক্যামেরাগুলো রাতে বেশি পরিষ্কার দেখা যাবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আরও উন্নতমানের ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা আছে। ক্যামেরার ফুটেজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। আর ক্যামেরার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তকাজে সফলতাও আসছে বেশি।
একই কথা বলেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লহ আল-মামুন। তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে অপরাধীদের রুখতে পুলিশ-র্যাবসহ পুলিশের সব কটি সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে এখন অপরাধী সহজেই ধরা পড়ছে। তদন্তকাজেও সহায়ক হচ্ছে। একসময় পুলিশের তদন্ত ছিল সোর্সনির্ভর। আর এখন তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মামলার রহস্য সহজেই উদঘাটন করা সম্ভব হচ্ছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অপরাধী শনাক্তকরণ ও ট্রাফিক মনিটরিংয়ের লক্ষ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয় ঢাকার বিভিন্ন স্থানে। প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল ও ব্যয়সাধ্য বিধায় ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রধান প্রধান রাস্তার প্রবেশ ও বাইর পথ লক্ষ করে বসানো হয় ক্যামেরা। এসব স্থানে ১ হাজার ৮৭৫টি সিসিটিভি ক্যামেরা সচল রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে সিসি ক্যামেরাগুলো কেনা হয়। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ডিএমপিকে অফিশিয়াল প্রজেক্ট বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ১০ বছর আগে ৪৩টি পয়েন্টে মাত্র ১৮৫টি ক্যামেরা ছিল। পরে ২০১২ সালে তৎকালীন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের উদ্যোগে রাজধানীতে একটি সিসি ক্যামেরা প্রকল্প চালু হয়। সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ‘ল অ্যান্ড অর্ডার কো-অর্ডিনেশন কমিটি’ নামে একটি ট্রাস্ট গড়ে তোলে ডিএমপি। বর্তমানে ট্রাস্টের অধীনে গুলশান, বনানী, নিকেতন, বারিধারা, ডিওএইচএসসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ১ হাজার ২০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে গুলশানের ১০২ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাড়ি থেকে ক্যামেরা মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখানে একটি আধুনিক মনিটরিং সেন্টারও স্থাপন করা হয়েছে, যা সিসিটিভি মনিটরিং সেন্টার নামে পরিচিত। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে, বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য রাস্তার মোড়, ইন্টারসেকশন, প্রবেশ-বাইর পথ, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা-কেপিআই সংলগ্ন পয়েন্টে সিসিটিভি ক্যামেরা চালু রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ক্রাইম ট্রাফিক মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে ঢাকার সার্বিক নিরাপত্তা আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা ফেজ-২-এর মাধ্যমে আরও সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ জন্য ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ৪ হাজার ক্যামেরা স্থাপন করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
কমিটির এক কর্মকর্তা বলেন, উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরাগুলো স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে। গভীর রাতেও নির্জন রাস্তা থাকবে ক্যামেরার নজরদারিতে। ক্যামেরায় চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি থাকায় অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের সহজেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে। চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো কোনো ধরনের অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় শব্দ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা। রাজধানীর কোথাও কোনো শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে শব্দের বিস্তারিত তথ্যসহ কন্ট্রোলরুমে সিগন্যাল চলে যাবে। কোনো স্থানে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে দ্রুত সময়ে তথ্য পেয়ে যাবে পুলিশ। এমনকি কতদূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি, তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় অ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সংকেত বেজে উঠবে।